পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in Sలి8 মানিক রচনাসমগ্ৰ নিভা ছাতি বন্ধ কবিয ঘোমটা দিয়া দাডাইয়াছিল, মাসিকের ছবিব সদ্যস্নাতার অবস্থায় পড়িয়া শ্যামা লজ্জায় মারা অঙ্গে মিশিয়া গিয়াছে। নিভার এটা ভালো লাগিতেছিল না। কিন্তু বড়োছেলের সামনে কিছু বলিবার উপায় নাই। বড়োছেলে বলিল, বেশ থাকুন। কিন্তু চৌকি পাবেন না, চৌকিতে আমার পিসে। শযেছে। আপনাদের মেঝেতে শূতে হবে। তা হোক ভাই, তা হোক। ভিজতে না হলেই ঢের। একখানা কম্বলটম্বল ? ওই কোণে চট আছে। বড়োছেলে বাডির মধ্যে চলিয়া গেল। নীলমণি বঁাঝালো হাসি হাসিয়া বলিল, দেখলে? তখনি বলেছিলাম। শুধু জুতো মান্বতে বাকি রাখবে! নিভা বলিল, ঘরে যে থাকতে দিয়েছে তাই ভাগি বলে জেনে । নীলমণি তৎক্ষণাৎ সুব বদলাইয়া বলিল, তা ঠিক। ঘরে অর্ধেকটা জুড়িয়া চৌকি পাতা, বড়োছেলের পিসে আগাগোড়া চাদব মুড়ি দিয়া তাহাতে কত হইয়া শুইয়া আছে! শ্যামা লণ্ঠনটা মেঝেতে নামাইয়া রাখিযাছিল বলিযা চৌকিবা উপৰে আলো পড়ে নাই, তবু এ বাড়িব আত্মীয়কেও ফরাশ তুলিয়া লইযা শুধু শতরঞ্চিব উপরে শূইতে দেওয়া হইযাছে, এটুকু টের পাইয়া নীলমণি একটু খুশি হইল। বড়োছেলেব পিসে – আপনার লোক। সে যদি ও রকম ব্যবহার পাইযা থাকে। তবে তাহারা যে লাথি-বঁটা পায় নাই, ইহাই আশ্চৰ্ম্ম । চারিদিকে চাহিযা নীলমণিব খুশির পরিমাণ বৃদ্ধি পাইল। সুখশয্যা না জুটুক, নিবাত, শুস্ক মনোবম আশ্রয় তো জুটিয়াছে। ঘবেক এদিকে একটিমাত্র ছোটো জানালা খোলা ছিল, নিভা ইতিমধ্যেই সেটি ভালো করিযী বন্ধ কবিয়া দিযাছে। বাস, বাহিরের সঙ্গে আর তাদেব কোনো সম্পর্ক নাই আকাশটা আজ একরাত্রেই গলিযা নিঃশেষ হইযা যাক, ঝড় উঠক, শিল পড়ুক, পুথিবীব সমস্ত খড়েল ঘবগুলি ভাঙিয়া পড়ুক --তাহারা টেরও পাইবে না। নীলমণির মেজাজ যেন ম্যাজিকে ঠান্ড হইযা গিয়াছে। তাহাব কণ্ঠস্বৰ্ব্ব পর্যন্ত মোলায়েম ¢é | ও শামা, দাঁড়িয়ে থাকিসনি মা, চটগুলো বিছিয়ে দে চট করে। একটু গড়াই ! আহা, ভিজে কাপডটা ছেড়েই নে আগে, মারামরিব কী আছে। এতক্ষণই গেল না হয আরও খানিকক্ষণ যাবে। ওগো, শুনিছ ? দাও না, খোকাকে চৌকির একপাশেই একটু শুইয়ে দাও না, দিয়ে তুমিও কাপডটা ছেডে ফ্যালো। গলা নামাইয়া ফিসফিস করিয়া, ভদ্রলোক ঘুমোচ্ছেন, অত লজাটা কীসেব শুনি ? লজ্জা করে দরজা খুলে বাবান্দায় চলে যাও না! কাপড় ছাড়া হইল। বাহিরে এখন পুরাদমে ঝড় উঠিয়াছে। ঘরের কোথাও এতটুকু ছিদ্র নাই, কিন্তু বাতাসেব কান্না শোনা যায়। চাপা একটানা শাঁ শী শব্দ। তাদেব,- —নীলমণি আর তাব পরিবারকে, নাগালের মধ্যে না পাইয়া প্রকৃতি যেন ফুসিতেছে। নীলমণির মনে হইল, এ একরকম শাসানো। পঞ্চভূতের মধ্যে যাহার ভাষা আছে সে গ্রুদ্ধ নিশ্বাস ফেলিয়া বলিতেছে, আজ বাঁচিযা গেলে। কিন্তু কাল ? কাল কী করিবে • পরশু ? তার পরদিন ? তারও পরের দিন ? শ্যামা চট বিছাইতেছিল, বলিল, মাগো কী গান্ধ! নিভা বলিল, নে ঢং করতে হবে না, তাড়াতাড়ি কর ।