পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in দিবারাত্রির কাব্য Հ8Գ দিন ? বছর বলুন। এ কথা হেসে উড়িয়ে দেবার উপায় নেই। সুপ্রিয়া আকস্মিকতা পছন্দ করে না। ওর হিসাবে দিন নেই, মাস নেই, বহুব দিয়ে ও জীবনকে ভাগ করেছে। ওর প্রকৃতির কল্পনাতীত সহিষ্ণুতা হেরম্বের ७ोनों व् । তবু তাকে বলতে হল, বছর নয়, মাস নয়, সপ্তাহও নয়। একদিন। শুধু আজ। সুপ্রিয়া কথাটা বিশ্বাস করতে পারল না। ও বেলাই চলে যাবেন ? না, কাল সকালে। অনেকক্ষণ নীরব থেকে সুপ্রিয়া বলল, একদিন থাকবার জন্য এমন করে আপনার আসার দরকাব কি ছিল ? পাঁচ বছর খোঁজ নেননি, আরও পাঁচ বছর নয় না নিতেন। চায়েব কাপ নামিয়ে রেখে কাপড়ে মুখ মুছে হেরম্ব বলল, তাতে লাভ কি হত রে? সুপ্রিয়া পলকহীন চোখে চেয়ে থেকে বলল, আপনি বাড়িতে এলে বাইরের ঘরে বসিয়ে এক কাপ চা আর একটু সুজি পাঠিযে দিতাম। মনে মনে বলতাম, আপদ বিদেয় হলেই বাঁচি। হেরম্ব একটু হেসে বলল, আচ্ছা, এবার দশ বছর পরে আসব। মনে তোর ক্ষোভ রাখব না, সুপ্রিয়া। সুপ্রিয়া আস্তে আস্তে বলল, আপনি তা পারেন। ছেলেমানুষ পেয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে আমার যখন বিয়ে দিয়েছিলেন, তখনি জেনেছিলাম। আপনার অসাধ্য কর্ম নেই। হেরম্ব প্রতিবাদ কবে বলল, আমি তোর বিয়ে দিইনি। সুপ্রিয়া, তোর বাবা দিয়েছিলেন। হাঁ্যা রে, বিয়েব সময় তোকে একটা উপহারও বোধ হয়। আমি দিইনি। দিয়েছিলাম ? সুপ্রিয়া শেষ কথাটা কানে তুলল না। বলল, বাবা বিয়ে দিয়েছিলেন। বইকী। আমাকে ভজিয়ে ভজিয়ে রাজি করেছিল কে ? কার মুখের বড়ো বড়ো ভবিষ্যদবাণী শুনে আমি ভেসে গিয়েছিলাম? কী সব প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড কথা! কত কথার মানে বুঝিনি। তবু শূনে গা শিউরে উঠেছিল!! আচ্ছা, সে সব কথা অভিধানে আছে? জবাব দিতে হেরম্বকে একটু ভাবতে হল। সুপ্রিয়ার ঝগড়া করার ইচ্ছা নেই এটা সে টের পেয়েছিল। কিন্তু তার অনেক দিনের জমানো নালিশ, কলহ না করলেও নালিশগুলি ও জানিয়ে রাখবে। না জানিয়ে ওর উপায় নেই। মনের নেপথ্যে এত অভিযোগ পুষে রাখলে মানসিক সুস্থতা কারও বজায় থাকে না। এখনকার মতো কথাগুলি স্থগিত রাখলেও সুপ্রিয়ার চলবে না। সে কাল চলে যাবে, দুচার বছরের মধ্যে তার সঙ্গে দেখা হবার সম্ভাবনা সুপ্রিয়া বিশ্বাস করে না। যা বলার আছে এখুনি সব বলে দিয়ে বাকি দিনটুকু নিশ্চিন্ত মনে অতিথির পরিচর্যা করবার সুযোগটাও সে বুঝি সৃষ্টি করে নিতে চায়। তব সংক্ষিপ্ত উপস্থিতির সময়টুকুর মধ্যে অন্যমনস্ক হয়ে পড়বার কারণটা সে গোড়াতেই বিনষ্ট করে দিতে চায়। R চোখের জলের মধ্যে সুপ্রিয়ার বক্তব্য শেষ হবে। কিনা ভেবে হেরম্ব মনে মনে একটু ভীত হয়ে পড়েছিল। তোর ভালোর জন্য যতটুকু বলার দরকার তার বেশি আমি কিছুই বলিনি, সুপ্রিয়া। না বললে আমার মন্দটা কী হত ? স্কুলে পড়ছিলাম, লেখাপড়া শিখে চাকরি করে স্বাধীনভাবে জীবন কাটাতাম। আপনি আমাকে তা করতে দেননি কেন ? হেরম্ব মাথা নেড়ে বলল, তোর সহ্য হত না, সুপ্রিয়া।