পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in SG8 মানিক রচনাসমগ্ৰ জগতে কীসে তবে আমার মঙ্গল হওয়া সম্ভব শুনি ? পাঁচ বছর পরীক্ষা করেই তো বোঝা গেল এসব আমার পোষাবে না। কলের মতো হাত-পা নেড়েছি, শুয়েছি, বসেছি, হেসেছি। পর্যন্ত; কিন্তু আমি তো জানি কী করে এতকাল আমার কেটেছে, দিনের মধ্যে কতবার আমার মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে চেচিয়ে কঁদতে সাধ গিয়েছে। না বাপু, এমন করে একটা দিনও আমি আর থাকতে পারব না। কড়াইয়েব ফেনার তলে অদৃশ্যপ্রায় রসগোল্লাগুলির দিকে তাকিয়ে ভেবেছে আমি ওর সঙ্গে চলে যাব। কিছুতেই আমাকে ফেলে রেখে যেতে দেব না। বলব আপনার জন্য না হােক, আমার জন্যই আমাকে নিয়ে চলুন। না নিয়ে গেলে আমি যে জীবনে প্রথমবার ওব অবাধ্য হয়ে বিষ খেয়ে মরে যাব এ কথাটাও ওকে আমি জানিয়ে দেব। সন্ধ্যার আবছা অন্ধকারে হেরম্বের সঙ্গে শুকনো ঘাসে ঢাকা মাঠে হাঁটতে হাঁটতে সুপ্রিয়া তার এই প্রতিজ্ঞা স্মরণ করে মুক হয়ে গিয়েছিল। এই নিস্তেজ আত্মবিস্মৃত মানুষটির সঙ্গে গিয়ে তার লাভ কি হবে ? ও তো ভুলে গিয়েছে। ও আর না চায় সুপ্রিয়ার দেহ না চায় তার মন। সংসারের টানে সুপ্রিয়া ওর কাছ থেকে ভেসে গিয়েছে। ওর আর ইচ্ছা নয় সাঁতরে সে ফিরে আসে। হে ভগবান! জগতে এমন ব্যাপার ঘটে কী করে! মাটির স্থির তরঙ্গের মতো একটা উঁচু জায়গায় পৌছে সুপ্রিয়া অস্ফুট স্বরে বলল, একটু বসি। থানার মিটমিটে আলোটির দিকে মুখ করে তারা বসল। সুপ্রিয়া হঠাৎ বলল, বউয়ের কথা বলতে আপনার কি কষ্ট হয় ? হেরম্ব পাশবিক নিষ্ঠুরতার সঙ্গে জবাব দিল, না। জানি না। চারিদিকে অন্ধকার দ্রুত গাঢ় হয়ে আসছিল। বুপাইকুড়া গ্রামে দুএকটি আলোকবিন্দু সঞ্চরণ করছে। বছরে দুবার আকাশে তাঁরাখসার মরশুম আসে, এখন আর শীতকালে। আকাশে অর্ধেক তারা উঠবার আগেই থানার পিছনে একটা তারা খসে পড়ল। হেরম্বের সংক্ষিপ্ত জবাবটি মনে মনে খানিকক্ষণ নাড়াচাড়া করে সুপ্রিয়া বলল, দাদার চিঠিতে যখন জানলাম বউ ও রকম ভাবে মরেছে, প্রথমটা বিশ্বাস করতে পারি নি। জগতে এত লোক থাকতে আপনার বউ গলায় দড়ি দেবে এ যেন ভাবাও যায় না। আমার মতো লোকের বউয়েরাই গলায় দড়ি দেয়, সুপ্রিয়া। আমি হলাম জগতের সেরা পাষণ্ড । তুই ছেলেমানুষ—— আবার ও কথা ! হেরম্ব এবার একটু শব্দ করেই হাসল। ছেলেমানুষ বললে তোরা রাগ করিস, এদিকে বয়স কমাবার চেষ্টার কামাই নেই। তোরাএ সব বিশ্ৰী পচা ঠাট্টা শুনতে ভালো লাগছে না, হেরম্ববাবু। সেটা আশ্চর্য নয়। সুপ্রিয়া। হেরম্ব একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেল। খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে সুপ্রিয়া বলল, তারপর বলুন। হেরম্ব বলল, আমি জগতের সেরা পাষণ্ড, এ কথা স্বীকার করার পর আর কি বলার থাকে মানুষের ? গলায় দড়ি না দিলে উমা খেপে যেত। প্রকৃতপক্ষে, একটু খেপে গিয়েই সে গলায় দড়ি gिशछिल । সুপ্রিয়া বুদ্ধশ্বাসে জিজ্ঞাসা করল, আমার কথা শুনে?