পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in দিবারাত্রির কাব্য S6G তোর কথা আমি ওকে কিছুই বলিনি। তবে? কী জন্য। তবে ও অমন কাজ করল? আমি ওর সম্বন্ধে খোঁজ নিয়েছি, হেরম্ববাবু। দাদা লিখেছেন, আমন শান্ত ভালো মেয়ে আবি হয় না। শুধু শুধু সে অমন কাজ করতে যাবে কেন? তোর দাদা জগতের সব খবর রাখে । আশ্চর্য মানুষ আপনি ! সুপ্রিয়া আর কথা খুঁজে পেল না। হেরম্বের কাছে কথার অভাব তার চিরন্তন। হেরম্বের কাছে এলে মনের কথা ভাষায় প্রকাশ করার প্রয়োজন তার শেষ হয়ে যায়। হেরম্ব যেন তার ভাবনা শুনতে পাবে। কাছে বসে ভেবে গেলেই হল। প্রথম প্ৰেমে-পড়া মেয়েদের এই ভ্ৰান্ত অবস্থাটি সুপ্রিয়া এখনও একেবারে কাটিয়ে উঠতে পারেনি। হাজার প্রশ্নে ভারী করে সে তাই নীরবে: বসে বইল । উমা তারই জন্য আত্মহত্যা করেছে। এই ছিল এতকাল তার ধারণা। স্বামী মনপ্রাণ দিয়ে আব একজনকে ভালোবাসে - তাকে ভালোবাসে না, এটা বেচারির সহ্য হয়নি। আরেকজনের তরে, প্রেমে তলিয়ে যাওয়া স্বামীকে ছেড়ে সে তাই মৃত্যুর অন্ধকারে তলিয়ে গিয়েছে। এই ধারণা হেরম্বের কথায় ভেঙে যেতে সুপ্রিযlা বিহ্বল হয়ে গেল। হেরম্ব যে তাকে ভালোবাসে উমাল আত্মহত্যা ছিল তার প্রমাণ। মৃত্যুর মতো অখণ্ড অপরিবর্তনীয নিঃসংশয প্রমাণ। এই প্রমাণেব বাঁধ অপসারিত হয়ে যেতে যে সন্দেহ ও আত্মগ্লানিব বন্যা এল, সুপ্রিয়া তাতে আর থাই পেল না। তবে মনে হল, সারাদিনের ব্যর্থ চেষ্টার পর এতক্ষণে তে4** "কাকে আশ্রয়চু্যত কবে দুঃখ হতাশার স্রোতে ভাসিয়ে দিতে পেরেছে। জীবনে আর তার কিছুষ্ট বইল না। একদিনের ভুল আর বাকি দিনগুলির জন্যে সেই ভুলের উপলব্ধি—এই দুটি পরিচ্ছেদই তাঁর জীবনী। যে জীবনকে সে মহাকাব্য বলে জেনে রেখেছিল সে একটা সাধারণ কবিতাও নয। থানান্য পৌছে তারা দেখল, অশোক ফিরে এসে স্নান সমাপ্ত কবে বিশ্রাম করছে। হেব্বস্ব জিজ্ঞাসা করল, কতক্ষণ ফিরেছ, অশোক ? আপনারা বেরিয়ে যাবার একটু পরেই। সুপ্রিয়া অনুযোগ দিযে বলল, আমায় ডেকে পাঠালে না কেন? আমরা ওই সামনের মাঠে ছিলাম। এখান থেকে দেখা যায় { অশোক হেসে বলল, কী বলে ডেকে পাঠাতাম ? আমি বাড়ি এসেছি, তুমি চট করে বাড়ি চলে এসো ? তাৰ চেয়ে দিব্যি স্নান-টান করে বিশ্রাম করছিলাম। --গা হাত, জানো গো, ব্যথা হয়ে গেছে। আহা, তা হবে না! সারাটা দিন যে ঘোড়ার পিঠে কাটল। খাওনি কিছু? জানি খাওনি, আমি এসে না দিলে খাবে—- অশোক অপরাধীর মতো বলল, খেয়েছি, সুপ্রিয়া, এমন খিদে পেয়েছিল— হেরম্ব লক্ষ করল, সুপ্রিয়ার মুখ প্রথমে একটু কালো হয়ে শেষে লালিমায় পরিবর্তিত হয়ে গেল। চাকরি ছাড়া স্বামীকে আর সব বিষয়েই সে যে তার মুখাপেক্ষী করে রেখেছে, হেরম্বের কাছে তা প্রকাশ হয়ে গেল। একদিন খুব ক্ষুধার সময় তার অপেক্ষায় বসে না থেকে পেট ভরালে অশোকের যদি অপরাধ হয়, স্ত্রীর কাছে সে অনেকটা শিশুত্বই অর্জন করেছে বলতে হবে। আগাগোড়া স্ত্রীর মন জোগানোর এই আদর্শ বজায় রেখে অশোক দিন কটায় কী করে ভেবে হেরম্ব অবাক হয়ে রইল। সুপ্রিয়া বলল, কী খেলে? তুমি যা যা করেছ খুঁজে পেতে সব একটা করে খেয়েছি।