পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in মানিক রচনাসমগ্ৰ ما يج একটি মেয়ে বিইয়ে সম্নোসিনী হয়ে গেলেন ? একটি-দুটির কথা নয়। ঠাকুরঝি। নিজে ছেলেমেয়ে মানুষ করতে গেলে ও একটিই থাক আর দুটিই থাক ফিটফাট থাকা আর পোষায় না। মেয়ে এই এটা করছে এই ওটা করছে—নোংরামির চূড়ান্ত, তার সঙ্গে কি এসেন্স মানায় ? মেয়ে একটু বড়ো হলে হয়তো আবার শুরু করব। তা করব ঠাকুরঝি, এ বয়সে কি আর বুড়ি হয়ে থাকব। সত্যি সত্যি! শ্যামা বলে, মেযে বড়ো হতে হতে আর একটি আসবে যে! বিষ্ণুপ্রিয়া জোর দিয়া বলে, না, আর আসবে না। মন্দা খিলখিল কবিয়া হাসে ; বললেন বটে একটা হাসির কথা! এখুনি রেহাই পাবেন ? আরও কত আসবে, ভগবান দিলে কারও সাধ্যি আছে ঠেকিয়ে রাখে ? শ্যামা বলে, ঠাকুরঝি আপনাকে জব্দ করে দিলে। বিষ্ণুপ্রিয়া বলে, আমাকে জব্দ করা আর শক্ত কী? যে বিষ্ণুপ্রিয়ার এমনই পরিবর্তন হইয়াছে একদিন সকালে সে শ্যামাকে দেখিতে আসিল। মেয়েকে সে সঙ্গে আনিল না। মেয়েকে সঙ্গে করিয়া বিষ্ণুপ্রিয়া কোথাও যায় না, কারও বাড়ি মেয়েকে যাইতেও দেয় না, ঘরের কোণে লুকাইয়া রাখে। বাড়ির পুরানো ঝি ছাড়া আর কারও কোলে সে মেয়েকে যাইতে দেয় না। মেয়ের সম্বন্ধে তাহার একটা সন্দেহজনক গোপনতা আছে, পাড়ার মেয়েরা এমনি একটা আভাস পাইযা কৌতুহলী হইয়া উঠিয়াছিল। তারপর সকলেই জানিয়াছে। জানিয়াছে যে বিষ্ণুপ্রিয়ার মেয়ে পুথিবীতে আসিয়াছে পাপের ছাপ লইয়া, মহিম তালুকদার ভীষণ পাপী। এবার বিষ্ণুপ্রিয়াকে কাপেটের আসনটাতেই বসিতে দেওয়া হইল। মন্দা ভদ্রতা করি যা জিজ্ঞাসাও করিল, আপনাকে এক কাপ চা করে দি গ চা ? বিষ্ণুপ্রিয়া চা খাদ্য না। খায় না ? মন্দা সুন্দর অবাক হইতে জানে, কী আশ্চর্য!—তা, চা আমার মেজো ননদও খায় না। তুতার বিয়ে হয়েছে চিলপাহাড়ির জমিদারবাড়ি, মস্ত বড়োলোক তারা, চালচলন সব সাহেবি। বিয়েব আগে আমার ননদ খুব চা খেত, বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি গিয়ে ছেড়ে দিলে। বললে, চা খেলে গায়েব চামড়া কৰ্কশ হয়। আমার মেজো ননদ খুব সুন্দরী কিনা, রং প্রায় গিয়ে মেমদের মতো কটা, বং খারাপ হবার ভয়ে মবে থাকে। আমার কর্তটিকে দেখেননি ? ওদের হল ফরসাব গৃষ্টি, তাদের মধ্যে ওনার রং সবচেয়ে মাজা, তারপরেই আমার মেজো ননদ । ছেলেদের জন্য বসিযা কারও সঙ্গে কথা বলিবার অবসব মন্দা পায় না। উঠানে দুই ছেলে চৌবাচ্চার জল নষ্ট করিতেছে দেখিয়া সে উঠিয়া গেল। বিষ্ণুপ্রিয়া বলিল, আপনার ননদটি বেশ। খুব সরল। 1 বিষ্ণুপ্রিয়া প্রতিবাদ করিল না। আঁচলে মুখ মুছিয়া শ্যামার সঙ্গে চোখোচৌখি হওয়ায় একটু হাসিল। বাহিরে ঝকঝকে রোদ উঠিয়াছিল। শহরতলির বাড়ি, জানােলা দিয়ে পুকুরও চোখে পড়ে, গাছপালাও দেখা যায়। আর পাখি। শরৎকালে পথ ভুলিয়া কতগুলি পাখি শহরের ধারে আসিয়া পড়িয়াছে। বিষ্ণুপ্রিয়া বলিল, তোমার ছেলের জন্যে দুটাে একটা জামাটামা পাঠালে কিছু মনে কববে ভাই ? মনে যদি কর তো স্পষ্ট বলো, মনে এক আর মুখে এক করো না। বিষ্ণুপ্রিয়ার বলার ভঙ্গিতে শ্যামা একটু অবাক হইয়া গেল। বলিল, জামার দরকার তো নেই। দরকার নাই বা রইল, বেশিই না হয় হবে।--পাঠাব ? শ্যামা একটু ভাবিয়া বলিল, আচ্ছা।