পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in দিবারাত্রির কাব্য Sاصل م( আরও খানিকদূর গিয়ে হেব্বস্ব ভাঙা প্রাচীরে ঘেরা বাগানটি দেখতে পেল। সামনে পৌছে হঠাৎ সচেতন হয়ে অনাথ বলল, এই বাড়ি। কোথায় বাডি ? বাডি হেরম্ব দেখতে পেল না। বাগানের শেষের দিকে গাছপালায় প্রায আড়াল করা ছোটাে একটি মন্দির মাত্র তার চোখে পড়ল। বাগানে গোলাপ গন্ধরাজ ফোটে কিনা বাইরে থেকে অনুমান করার উপায় ছিল না। যে গাছে হয়তো ফুল ফোটে কিন্তু গন্ধ দেয় না, যে গাছের ফল অথবা পাতা মানুযে খায়, তাই দিয়ে বাগানটিকে ঠেসে ভর্তি করা হয়েছে। সমস্ত বাগান জুড়ে গাছের নিবিড ছায়া আর অস্বাভাবিক স্তব্ধতা ! কাঠের ভগ্নপ্রায় গেটটি খুলে অনাথ বাগানে প্রবেশ কবল। তাকে অনুসরণ করে বাগানেব মধ্যে প্রথম পদক্ষেপেৰ সঙ্গে হেরম্বের মনে হল এ যেন একটা পবিবর্তন, একটা অকস্মাৎ সংগঠিত বৈচিত্ৰ্য। মানুষের অশান্ত কলরব ভরা পৃথিবীতে, ভাঙা প্রাচীরের আবেষ্টনীর মধ্যে এমন সংক্ষিপ্ত একটি স্থানে এই মৌলিক শান্ত আবহাওয়াটি অক্ষুন্ন থাকা হেরম্বের কাছে বিস্ময়ের মতো প্ৰতিভাত হল। বাগানেব। সরু পথটি ধরে একে বেঁকে এগিয়ে গাছের পর্দা পাব হয়ে তারা দাঁডাল। এখানে খানিকটা স্থান একেবারে ফাকা! সামনে সেই পথ থেকে দেখা যায মন্দির। মন্দিরেব দক্ষিণে অল্প তফাতে পুরানো একটি ইটের বাড়ি। মন্দিব আব্ব বাডি দুই-ই নোনা-ধবা। মন্দিরের পরঞ্জ। পৃন্ধ। দবাজার সামনে ফাটল ধরা চত্ববে। গরদের শাড়ি-পবা স্থলাঙ্গী একটি রমণী বসে ছিল। যৌবন তার যাব যাব করছে। কিন্তু গায়েব বং অসাধারণ উজ্জ্বল। চেহারা জমকালো, গম্ভীব । কাকে আনলে গো ? অতিথি নাকি ? শ্লেষ্মােজড়িত চাপা গলা। হেরম্ব একটু ভিভূত হযে পড়ল। অনাথ বলল, চিনতে পারবে মালতী” । ক কাতায্য তোমাদেব বাডির পাশে থাকত। নাম হেরম্ব। মধুপুবেও একবার দেখেছিল। মালতী বলল, চিনেছি। তা ওকে আবার ধরে আনবার কী দরকার ছিল! যাক এনেছ যখন, কী আর হবে ? বোসো বাছা। আহা, সিঁড়িতেই বোসো না, মন্দিবের সিডি পবিত্র। কাপড় ময়লা হবার ভয় নেই, দুবেলা সিঁডি ধোযা হচ্ছে। - তুমি বুঝি গিয়েছিলে সমুদ্রে ? একদিন সমুদ্রে না গেলে নয। যদি গেলেই, বলে কি যেতে নেই ? অনাথ বলল, আসন থেকে উঠেই চলে গিযেছিলাম মালতী। তোমাকে বলে যাওয়ার কথা মনে ছিল না! মালতী বলল, তবু ভালো, কথার একটা জবাব পেলাম। শহর হয়ে এলে, আমার জিনিসটা আনলে না যে? কাল থেকে পইপই করে বলছি। অনাথ বলল, তোমাকে তো কবে বলে দিয়েছি ও সব আমি এনে দেব না। মালতী উষ্ণ হয়ে বলল, কেন, দেবে না কেন ? তোমার কী এল গেল। গোল্লায় যেতে চাও তুমি নিজে নিজেই যাও। আমি সাহায্য করতে প্ৰস্তুত নই। কেতাৰ্থ করলে! আমাকে গোল্লায় এনেছিল কে বের করে ? পরের কাছে অপমান করা হচ্ছে! মালতী হঠাৎ হেসে উঠল--তুমি না। এনে দিলেও আমার এনে দেবার লোক আছে, তা মনে রেখো।-চললে কোথায শুনি ? স্নান করব।— সংক্ষেপে এই জবাব দিয়ে অনাথ বাড়ির মধ্যে ঢুকে গেল। হেরম্ব জিজ্ঞাসা কবল, শহর থেকে কী জিনিস আনার কথা ছিল ?