পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in ՀՂՀ মানিক রচনাসমগ্ৰ আনন্দ মুচকে হেসে বলল, তাই বল! আমরা যা খাব ওঁকেও তাই খেতে হবে বললে কি না, তাই ভাবলাম ওব জন্যেও বুঝি উপোসের ব্যবস্থা হচ্ছে। হেরম্ব ভাবে, মাকে মধ্যস্থ রেখে আমার সঙ্গে আলাপ করা কেন। এতক্ষণ যত কথা বলেছে। সব আমাকে শোনাবার জন্য, কিন্তু নিজে থেকে সোজাসুজি আনন্দ আমাকে একটা কথাও বলেনি। আমার প্রশ্নের জবাব দিয়েছে, আমার কথার পিঠে দরকারি কথাও চাপিয়েছে কিন্তু আমাকে এখন পর্যন্ত কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। আমার সম্বন্ধে ওর যে বিন্দুমাত্র কৌতুহল আছে তার নিরীহতম প্রকাশটিকেও অনায়াসে সংযত করে চলেছে। আমাকে এ ভাবে অবহেলা দেখানোর মানে কী। আমাকে একটা নিজস্ব ছোট্ট প্রশ্ন ও তো অনায়াসে করতে পারে, একটা বাজে। অবান্তর প্রশ্ন। আপনি কী ভাবছেন ? হেব্বস্ব চমকে উঠে ভাবলা, মনের প্রার্থনা আমি তো উচ্চারণ করে বসিনি। তাকে অত্যন্ত চিন্তিত ও অন্যমনস্ক দেখে আনন্দ এই প্রশ্ন করেছিল, তার অপ্রকাশিত মনোভাবকে অনুমান করে নয়। এব। চেয়ে বিস্ময়কর যোগাযোগও পৃথিবীতে ঘটে থাকে। কিন্তু হেরম্বের মনে হল, একটা অঘটন ঘটে গেছে, এই নিয়মচালিত জগতে একটা অত্যাশ্চর্য অনিয়ম। সে খুশি হয়ে বলল, ভাবছি, তুমি আমাব মনের কথা জানলে কী করে। আনন্দ ভ্ৰ কুঞ্চিত কবে বলল, আপনার মনের কথা কখন জানলাম ? এইমাত্র। কী বলছেন, বুঝতে পারছি না। হেরম্ব অপ্রতিভ হয়ে বলল, না। হেঁয়ালি করিনি। তবে ও কথা বললেন কেন, আপনার মনের কথা জেনেছি ? এমনি বলেছি। রহস্য কবে। এ কী রকম দুর্বোধ্য রহস্য! আমি ভাবলাম, একটা কিছু মজার কথা বুঝি আপনার মনে হয়েছে, এটা তার ভূমিকা। শেষে ব্যাখ্যা করে আমাদের হাসিয়ে দেবেন। হেরম্ব ইতিমধ্যে আত্মসংবরণ করেছে। তাই মনে ছিল আনন্দ । শেষে ভেবে দেখলাম, ব্যাখ্যা না করেই হাসিয়ে দেওয়া ভালো। এটা এখুনি বানিয়ে বললেন। নিশ্চয় সঙ্গে সঙেগ না বানাতে পারলে রক্ষা আছে? হাসির কথা আধামিনিটে পচে যায। আর হাসি ? হাসি কতক্ষণে পচে যায়? আপনার কথাটা শুনে এমন সব অদ্ভুত কথা মনে হচ্ছে! আচ্ছা, আপনি কখনও ভেবেছেন হাসতে হাসতে মানুষ হঠাৎ কেন থেমে যায় ? সিদ্ধি খেযে যারা হাসে তাদের কথা বলছি না। যারা হঠাৎ খুশি হয়ে হাসে,--মজার কথায় হোক, হাসির ব্যাপারে হোক অথবা আনন্দ পেয়েই হোক। হাসতে আরম্ভ করলেই মানুষের এমন কী কথা মনে পড়ে যায়, যাব জন্য আস্তে আস্তে হাসি থেমে আসে? তাছাড়া এমন মজা দেখুন, পাগল না। হলে মানুষ এক এক হাসতে পারে না। হাসতে হলে কম করে অন্তত দুজন লোক থাকা চাই। ঘরের কোণে বসে নিজের মনে যদিই বা কেউ কখনও হাসে, তার তখন নিশ্চয়ই এমন একটা কথা মনে পড়েছে যার সঙ্গে অন্য একজন লোকের সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ। নিছক নিজের কথা নিয়ে কেউ হাসে না। হাসে? की ।