পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in Sbrbr মানিক রচনাসমগ্ৰ নেই বলে অভিজ্ঞতার অসংখ্যা অনভিব্যক্তি দিয়ে তাকেই সে আয়ত্ত করবার চেষ্টা করছে। আকাশকুসুমকে আকাশে উঠে সে চয়ন করতে পারে না। তাই অসীম ধৈর্যের সঙ্গে বাগানের মাটিতে তার চাষ করছে। হ্রদায়ের একটিমাত্র অবাস্তব বন্ধনের সমকক্ষ লক্ষ বাস্তব বন্ধন সৃষ্টি করে সে আনন্দকে বঁধতে চায়। সুখদুঃখের অতীত উপভোগকে সে পরিণত করতে চায় তাব পরিচিত পুলক-বেদনায়। আজ সন্ধ্যা থেকে সে এই অসাধ্য সাধনে ব্ৰতী হয়েছে। আনন্দ পুরাতন প্রশ্ন করল। কী ভাবছেন ? অনেক কথাই ভাবছি, আনন্দ। তার মধ্যে প্রধান কথাটা এই আমার কী হয়েছে। কী হয়েছে? কী রকম একটা অদ্ভুত কষ্ট হচ্ছে। আনন্দ হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে বলল, আমারও হয়। নাচবার আগে আমারও ও রকম হয়। হেরম্ব উৎসুক হয়ে বলল, তোমার কী রকম লাগে? কী রকম লাগে ? আনন্দ একটু ভাবল, তা বলতে পারব না। কী রকম যেন একটা マエー আমি কিন্তু বুঝতে পারছি, আনন্দ। আমিও আপনারটা বুঝতে পারছি। পরস্পরের চোখের দিকে তাকিয়ে তাবা হেসে ফেলল। আনন্দ বলল, আপনার খিদে পায়নি? কিছু খান। হেরম্ব বলল, দাও। বেশি দিও না। একটি নিঃশব্দ সংকেতের মতো আনন্দ যতবার ঘরে আনাগোনা করল, জানালীর পাটগুলো ভালো করে খুলে দিতে গিয়ে যতক্ষণ সে জানালার সামনে দাঁড়াল, ঠিক সম্মুখে এসে যতবাব সে চোখ তুলে সোজা তার চোখের দিকে তাকাবার চেষ্টা করল—তাব প্রত্যেকটির মধ্যে হেরম্ব তার আত্মার পরাজয়াকে ভুলে যাবার প্রেরণা আবিষ্কার করল। তার ক্ৰমে ক্ৰমে মনে হল, হযতো এ পরাজয়ের গ্লানি মিথ্যা। বিচারে হয়তো ভুল আছে। হয়তো জয়-পরাজয়ের প্রশ্নই ওঠে না। হেরম্বের মন যখন এই আশ্বাসকে খুঁজে পেয়েও সন্দিগ্ধ পরীক্ষকোব মতো বিচার করে না। দেখে গ্ৰহণ করতে পারছে না, আনন্দ তার চিন্তায় বাধা দিল। আনন্দের হঠাৎ মনে পডে গিয়েছে, সিঁড়িতে বসে হেরম্বকে একটা কথা বলবে, মনে করেও বলা হয়নি। কথাটা আর কিছুই নয়। প্রেম যে একটা অস্থায়ী জোরালো নেশা মাত্র হেরম্ব এ খবর পেল কোথায়। একটু আগেও এ কথা জিজ্ঞাসা করতে আনন্দের লজ্জা হচ্ছিল। কিন্তু কী আশ্চর্য দেখুন হেরম্ববাবু, এখন আর একটুও লজ্জা করছে না । আপনাকে সত্যি কথাটা বলি। সন্ধ্যর সময় আপনাকে যে বন্ধু বলেছিলাম, সেটা বানানো কথা। এতক্ষণে আপনাকে বন্ধু মনে হচ্ছে। এখন কত রাত্রি ঃ কী জানি। দশটা সাড়ে দশটা হবে। ঘড়ি দেখে আসব ? থাক। আমার কাছে ঘড়ি আছে। দশটা বাজতে এখনও তেরো মিনিট বাকি। আনন্দ বিস্মিত হয়ে বলল, ঘড়ি আছে, সময় জিজ্ঞেস করলেন যে ? হেরম্ব হেসে বলল, তুমি ঘড়ি দেখতে জান। কিনা পরখ করছিলাম। মালতী বউদির সাড়াশব্দ যে পাচ্ছি না ?