পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in SS8 মানিক রচনাসমগ্ৰ হাঁটু পেতে বসল। প্ৰণামের ভঙ্গিতে মাথা মাটিতে নামিয়ে দুহাত সম্মুখে প্রসারিত করে স্থির হয়ে রইল। আনন্দ কতক্ষণ নৃত্য করল হেরম্বের সে খেয়াল ছিল না। চাদের আলো তার চোখে নিভে নিভে স্নান হয়ে এসেছিল নাচের গোড়াতেই। এটা তার কল্পনা অথবা আকাশের চাদকে মেঘে আড়াল করেছিল, হেব্বস্ব বলতে পারবে না। কিন্তু শ্লথ, মন্থর গতিছন্দ থেকে আনন্দেব নৃত্য চঞ্চল হতে চঞ্চলতর হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জোৎস্নাও যে উজ্জ্বল হতে উজ্জ্বলতর হয়ে উঠেছিল। এ কথা হেরম্ব নিঃসংশয়ে বলতে পারে। হয়তো চোখে তাব ধাধা লেগেছিল। হয়তো চন্দ্ৰকলা নৃত্যের শোনা ব্যাখ্যাটি তার মনে প্রভাব বিস্তার করেছিল। পূৰ্ণিমা থেকে আনন্দ কিন্তু অমাবস্যায় ফিবে যেতে পাবেনি। নৃত্য যখন তার চরম আবেগে উচ্ছসিত হয়ে উঠেছে, তার সবঙ্গের আলোড়িত সঞ্চালন এক ঝলক আলোর মতো প্রখর দ্রুততায় হেরম্বের বিস্ময়চকিত দৃষ্টির সামনে চমক সৃষ্টি করেছে, ঠিক সেই সময় অকস্মাৎ সে থেমে গেল। ঘাসের উপরে বসে তাকে হাঁপাতে দেখে হেরম্ব তাড়াতাড়ি উঠে তার কাছে গেল । কী হল আনন্দ ? ভয় কবছে। আনন্দ বলল। রুদ্ধস্বরে, কান্নার মতো করে। সে থারথার করে কঁপিছে। তবে মুখ আরক্ত, সৰ্ব্বাঙ্গ ঘামে ভেজা। তাৰ দুচোখে উত্তেজিত অসংযত চাহনি। চুলগুলি তার মুখে এসে পডে ঘামে জড়িয়ে গিযেছিল। চুল পিছনে সবিয়ে হেব্বস্ব তব কানের পাশে আটকে দিল। তাকে দম নেবার সময় দিয়ে বলল, ভয় কবছে ? কেন ভয় করছে, আনন্দ ? আনন্দ বলল, কী জানি!! হঠাৎ সমস্ত শরীর আমার কেমন কবে উঠল। মনে হল, এইবার আমি মরে যাব। মরে যেতে আমার কখনও ভয় হয়নি। আজ কেন যে এ বকম করে উঠল! অন্যদিন নাচের পর ঘুম আসে। আজ শবীর জ্বালা করছে। গরম লাগছে ? না। বাজের মতো জ্বালা করছে—হাডের মধ্যে। আমি এখন কী করি! কেন এই বকম হ’ল ? একটু বিশ্রাম কবলেই সেরে যাবে। শোরে আনন্দ ? শুযে পড়লে হয়তো- - আনন্দ হেবম্বেব কোলে মাথা রেখে ঘাসের উপর শুয়ে পড়ল। তার নিশ্বাস ক্ৰমে ক্ৰমে সবল হয়ে আসছে, কিন্তু মুখের অস্বাভাবিক উত্তেজনার ভাব একটুও কমেনি। হেরম্বেব চোখের দিকে আপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে থাকতেই তার দুচোখ জলে ভরে গেল। এ রকম হল কেন আজ ? তোমার জন্যে ? হতে পারে। আমি তো সহজ লোক নই। পৃথিবীতে আমার জন্যে অনেক কিছুই হয়েছে। অন্ধ যে ভাবে আশ্রয় খোজে, আনন্দ তেমনি ব্যাকুল ভঙ্গিতে তার দুটি হাত বাডিয়ে দিল। হেরম্বের হাতের নাগাল পেতেই শক্ত করে চেপে ধরে সে যেন একটু স্বস্তি পেল। ঠিক করে কিছুই বুঝতে পাবছি না। আরও যেন কত কী দুঃখ একসঙ্গে ভোগ করছি। আচ্ছা! তুমি তো কবি, তুমি কিছু বুঝতে পারছি না ? আমি কবি নই, আনন্দ। আমি সাধারণ মানুষ। আনন্দ তার এই সবিনয় অস্বীকারের প্রতিবাদ করল। তুমি আমাব কবি। কবি না হলে কেউ এমন ঠান্ডা হয় ? সন্ধ্যার সময় তোমাকে দেখেই আমি চিনেছিলাম। তুমি না থাকলে আমি এখন এখানে গড়াগড়ি দিয়ে কেঁদে নাচের জ্বালায় জ্বলে জ্বলে आtद्ध (शकोंभ ।