পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOKS. in VNDO O মানিক রচনাসমগ্ৰ বলে অনাথ উঠে গেল। মালতী কুদ্ধকণ্ঠে বলল, আমার সঙ্গে এমন করলে ভালো হবে না। বলছি। বোসে এসে, আমার আরও কথা আছে, ঢ়ের কথা আছে। অনাথ চলে গেলে মালতী ফেঁাস করে একটা নিশ্বাস ফেলল। কিন্তু মুহুর্তের মধ্যে তার ঠোটেব বঁকা হাসিতে নিরুৎসাহ ও নিরুৎসব ভাব চাপা পড়ে গেল। এইমাত্র যে ছিল ভিখারিনি, সে হঠাৎ ক্ষমাদাত্রী হয়ে বলল, লোকটা পাগল হেরম্ব, খ্যাপা। আর ছেলেমানুষ। আমি কিছু বলব, মালতী বাউদি ? চুপ! একটি কথা নয়।--মালতী টেনে টেনে হাসল, তুমি বোঝা ছাই, বলবেও ছাই। দেড় যুগ আঙুল দিয়ে ছোয় না, তাই বলে আমি কি মরে আছি?? বুড়ো হয়ে গেলাম শখ-টখ আমার আর নেই বাপু, এখন ধম্মকৰ্ম্ম সার। ঠাট্টা-তামাশা করি একটু, মিনসে তাও বোঝে না। স্নান করে এসে চাবি নিয়ে আনন্দ মন্দিরে গেল। মালতী ঘরে ঢুকে এই ভোরে বাসিমুখে গিলে এল খানিকটা কারণ। মালতী প্রকৃতপক্ষে বৈষ্ণবী, কিন্তু সব দিক দিয়ে অনাথের বিরুদ্ধাচরণ করার জন্য মালতী তান্ত্রিক গুরুর কাছে মন্ত্র নিয়েছে। মন্ত্র নিয়ে ধ্যান-ধারণা সমস্ত পর্যবসিত করেছে কারণ—পানে। হেরম্বর প্রায় সহ্য হয়ে এসেছিল, তবু ঘুম থেকে উঠেই মালতীর মদ খাওয়া তার বরদাস্ত হল না। সে বাইরে চলে গেল। মন্দিরের দািবজান্য দাঁড়িয়ে বলল, তোমাকে হয়তো আজ ভক্তদের ব্যবস্থাও করতে হবে, না उन्न् ? আনন্দ চন্দন ঘষছিল। কাজে আর তার উৎসাহ নেই। না, মা আসবে । তিনি এইমাত্র খালি পেটে কাবণ খেলেন। চোখ লাল হতে আরম্ভ করেছে। কারণ খেলে মারি কিছু হয় না। হেরম্ব দাডিয়ে দাঁড়িযে খানিকক্ষণ আনন্দের অন্যমনস্ক কাজ করা চেয়ে দেখল। হাত পা নাডিতে আনন্দেব যেন বড়ো কষ্ট হচ্ছে। যেমন তেমন করে পুজার আয়োজন শেষ করে দিতে পাবলে সে যেন আজ বাঁচে। তিনদিন আগে বর্ষা নেমেছিল, সেদিন থেকে আনন্দের কী যে হয়েছে কেউ জানে না, হয়তো আনন্দ নিজেও নয। অল্পে অল্পে সে গম্ভীর ও বিযগ্ন হয়ে গিযেছে। তবে মধ্যে যে আবেগময় উদগ্রীব। উল্লাস আপনা হতে উৎসারিত হতে পথ পেত না, হেরম্বের ডাকেও আজ তা সাড়া দিতে চায় না। সে ঝিমিয়ে পড়েছে, হেরম্বের কাছ থেকে গিয়েছে সরে। দূরে নয়, অন্তরালে। সেদিনের মেঘ-মেদুর আকাশের মতো কোথা থেকে সে একটি সজল বিষগ্ন আবরণ সংগ্রহ করেছে, ভালোবাসাব পাখায় ভর করে হেরম্বের মন উদ্ধেৰ্ব, বহু উদ্ধের্ব উঠেও অবারিত নীল আকাশকে খুঁজে পাচ্ছে না। এতদিন হেরম্ব কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। আজ সে প্রশ্ন করল, তোমার কী হয়েছে, আনন্দ ? আমার অসুখ করেছে। হেরান্স হতবাক হয়ে গেল। তার প্রশ্নের জবাবে এই যদি আনন্দের বক্তব্য হয়, তার ভালোবাসাকে শুধু এই কৈফিয়ত যদি আনন্দ দিতে চায়, তবে আর কিছু তার জিজ্ঞাস্য নেই। সে কী জানে না আনন্দের অসুখ করেনি! গুরুতর পরিশ্রমের কাজে মানুষ যেভাবে ক্ষণিকের বিরাম নেয়, চন্দন ঘষা বন্ধ করে আনন্দ করছে— নিক্ৰিয় অবসাদে হেরম্ব মাথা নেড়েও সায় দিল না। আর মন কেমন করছে। চন্দনটা ঘষে দেবে ?