পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in ○>Wり মানিক রচনাসমগ্র জন্মদিন, জ্বালাতন করব, তাই পালিয়ে গেল। মালতীর গাল আর চিবুকের চামড়া কুঞ্চিত হয়ে আসছিল, রক্তবর্ণ চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।—একেবারে পাগল, হেরম্ব, উন্মাদ।। গেছে যাক, আজ দেখব কাল দেখব তারপর ঘরদোরে। আমিও ধরিয়ে দেব আগুন।... ওলো সর্বনাশী উকি মেরে দেখিস কোন লাজায ? আয় ইদিকে আয়, হতভাগি ! আনন্দ আসে না। হেব্বস্ব তাকে ডেকে বলল, এসো, আনন্দ । আনন্দ কুষ্ঠিত পদে কাছে এলে মালতী খপ করে তার হাত ধরে ফেলল। কাছে বসিয়ে পিঠের কাপড় সরিয়ে আঘাতের চিহ্ন দেখে বলল, তোর কি মাথা খারাপ হয়েছিল আনন্দ ? লক্ষ্মীছাড়া মেযে, তুই পালিয়ে যেতে পারলি না ? আনন্দ মুখ গোজ করে বলল, গোলাম তো পালিয়ে। পালিয়ে গেলি তো এমন কবে তোকে মােরল কে শুনি? মালতীর গলা হতাশায় ভেঙে এল, গোয়ার। যেমন বাপ তেমনি গোয়ার মেয়ে। ঠায় দাঁড়িয়ে মার খেয়েছ। যত বলি-যা আনন্দ, চোখেব সমুখ থেকে সরে যা, মেয়ে তত এগিয়ে এসে মার খায়। মাতা ও কন্যার মিলন হল এইভাবে। হেরম্বের না হল আনন্দ, না হল স্বস্তি। নুতন ধরনের যে বিষাদ তার এসেছে তাতে সবই যেন তার মনে হচ্ছে সাধারণ, স্বাভাবিক। তারপর মালতী জিজ্ঞাসা করল, পিঠে নারকেল তেল দিতে পারিসনি একটু ? বরফ দেওয়ার কথাটা কেউ উল্লেখ করল না। হেরম্বকে দিয়ে তেলের শিশি আনিয়ে মালতী মেয়ের পিঠে মাখিয়ে দিতে আরম্ভ করল। আনন্দকে প্রহার করেই মালতী শান্ত হয়ে যাবে হেরম্ব সে আশা করেনি। অনাথ যে সত্যই চিরদিনের মতো চলে গেছে তাতে সেও সন্দেহ করে না। মৃত্যুর চেয়ে এভাবে প্রিয়জনকে হারানো বেশি শোকাবহ। এই শোক মালতীর মধ্যে ঠিক কী ধরনের উন্মত্ততায় অভিব্যক্তি হবে তাই ভেবে হেরম্ব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। মালতীর শান্ত ভাবটা সে ঠিক বুঝতে পারল না। কারণের প্রভাব হওয়া আশচর্য নয় । ওদিকে সুপ্রিয়ার সমস্যা আছে। চারটের মধ্যে সুপ্রিযার কাছে তার হাজির হবার কথা। ঘডি দেখে বোঝা গেল এখন আবী তা সম্ভব নয়।--চারটে বাজে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গিয়ে উপস্থিত হলে দেরি করে যাওয়াব অপবাধ সুপ্রিয়া ধববে না। যেতেই হেবম্বেব ক্লান্তি বোধ হচ্ছে। তাকে সামনে পেলে সুপ্রিয়া ক্ষণে ক্ষণে নবজাগ্ৰত আশায় উৎফুল্ল হয়, ক্ষণে ক্ষণে ব্যথায্য মলিন হয়ে যাম। হেবন্সের চােখেব দৃষ্টিতে মুখেব কথায় আজও সে অদম্য আগ্রহে অনুসন্ধান করে প্রেম, নিজেরই সুদীর্ঘ তপস্যার অন্ধ-শক্তিতে পালে পলে হতাশাকে জয় করে চলে। তাব কাছে হেরম্বকে প্রত্যেকটি মুহূর্ত সাবধান হয়ে থাকতে হয়। ক্ৰমাগত সুপ্রিয়ার চিত্তকে ভিন্নাভিমুখী করার চেষ্টায় মাঝে মাঝে তব ভ্রান্তি জন্মে যায়, সুপ্রিয়ার প্রেমকে হত্যা করার বদলে সে বুঝি প্রশ্রয় দিযেই চলেছে। হেরম্বের সবচেয়ে মুশকিল হয়েছে এই যে, আনন্দের সংস্রবে এসে তার মন এমন দুর্বল হয়ে উঠেছে কারও প্রতি কল্যাণকর নিষ্ঠুরতা দেখাবার শক্তি তার নেই। বুপাইকুড়ায় গভীর রাত্রে সুপ্রিয়া যেমন সোজাসুজি তার দাবি জানিয়েছিল, আজও যদি সে তেমনিভাবে স্পষ্টভাষায় তাকে প্রার্থনা করে, জীবন থেকে বরখাস্ত করে দেওয়া হেরম্বের পক্ষে হয়তো সহজ নয়। কিন্তু সুপ্রিযা তাদের সেই ছমাসের চুক্তিকে আঁকড়ে ধবে আছে। এদিকে আজকাল কেবল নিজের এবং একান্ত নিজস্ব যে, তার সুখদুঃখের কথা ভাবার মতো সঙ্গত স্বার্থপরতা হেরম্বের কাছে হয়ে উঠেছে। লজ্জাকর। সুতরাং যদি দুদণ্ড তার সঙ্গে কথা বলে শান্তি পায়, তার দীর্ঘকালব্যাপী জীবন-পাণ ভালোবাসার কথা স্মরণ করে তাকে বঞ্চিত করার অধিবার নিজের আছে বলে হেরম্ব ভাবতে