পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in দিবারাত্রির কাব্য No Sa মালতী বলল, মানে আবার কী, মানে ? বলছি আমার ভয় করছে, একা থাকতে পারব না, আবার মানে কীসের ? বঁটা এনে ঘরটা একটু বঁট দিয়ে বিছানা পাত, আনন্দ। হেরম্ব বলল, আনন্দ আপনার কাছে থাক, আমার থাকবার দরকার নেই। মালতী বলল, না বাপু, না, আনন্দ থাকলে হবে না। ও ছেলেমানুষ, আমার ভয় করবে। হেবম্ব আনন্দের মুখের দিকে তাকাল। আনন্দের নির্বিকার মুখ থেকে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া গেল না। হেবিম্ব বলল, তাহলে সবাই অন্য ঘরে যাই চলুন। এ ঘরে শোয়া যাবে না। মালতী রেগে বলল, তুমি বড়ো বাজে বকো, হেরম্ব। বাহাদুবি না করে যা বলছি তাই করো দিকি। যা, আনন্দ, বঁটা নিয়ে আয়। বঁটা এনে আনন্দ ঘর ঝাঁট দিল। মালতীর নির্দেশ মতো মন্দিরের দিকে জানালা ঘেঁষে হেরম্বের বিছানা হল। মারি অবাধ্য হয়ে মালতীর বিছানার থেকে যতটা পারে দূবে সরিয়ে শুধু একটি মাদুর পেতে আনন্দ নিজেব বিছানা কবল। মালতীর অনুযোগের জবাবে রুক্ষস্বাবে বলল, আমি কারও কাছে শতে পারি না। যে যার শয্যায় আশ্রয় গ্ৰহণ করলে মালতী বলল, সজাগ থেকে ঘুমিয়ো, হেরম্ব, ডাকলে যেন সাডা পাই । হেরম্ব বলল, সজাগও থাকিব, ডাকলে সাড়াও পাবেন, এ বকম ঘুম ঘুমোব কী করে ? তার চেয়ে আমি বসে থাকি । মালতী ব্রুদ্ধকণ্ঠে বলল। ইয়ারকি দিয়ে না, হেরম্বা। আমাৰ এদিকে মাথার ঠিক নেই, উনি ঠাট্টা ठु७6जन्म ! সজাগ হেরান্স বিনা চেষ্টাতেই হয়ে রইল। দুটি নারীকে এ ভাবে পাহারা দিয়ে ঘুমোনোর চেয়ে জেগে থাকাই সহজ । ঘর স্তব্ধ হযে থাকে। আনন্দ নিজের আঁচলে মুখ ঢেকে শুয়েছে ; লন্ঠনের আলো দেয়ালে তার যে ছায়া ফেলেছে তাকে মানুষের ছায়া বলে চেনা যায় না। অল্পক্ষণের মধ্যেই ঘরে কে ঘুমিযেছে কে জেগে আছে টের পাওয়া অসম্ভব হয়। মালতী আস্তে আস্তে হেরম্বের সাড়া নেয়।--হেরম্ব ? ভয় নেই, জেগেই আছি। আচ্ছা, বলে দিকি একটা কথা। মানুষকে খুঁজে বার করতে হলে কী কবা উচিত? খুঁজতে বার হওয়া উচিত। যাবে, হেরম্ব ? কদিন দেখ না একটু খোজ-টােজ করে। খরচ যা লাগে আমি দেব। হেরম্ব নির্মম হয়ে বলল, মাস্টারমশায কি ছোটাে ছেলে যে খুঁজে পেলে ধরে আনা যাবে? আপনি তো চেনেন তাকে । ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কাজ তাকে দিয়ে করানো যায় ? মালতী খানিকক্ষণ চুপ করে থাকে। হেরম্ব ? বলুন শুনছি। আচ্ছা, এ রকম তো হতে পারে, চলে গিয়ে ফিরে আসতে ইচ্ছা হয়েছে, লজ্জায় আসতে পারছে না? খাপা মানুষ ঝোকের মাথায় চলে গিয়ে হয়তো আপশোশ করছে। কেউ গিয়ে ডাকলেই আসবে ? হেরম্ব এবারও নির্মম হয়ে বলল, এমনি যদিও বা আসেন, খোঁজাখুঁজি করে বিরক্ত করলে একেবারেই আসবেন না।