পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in VS 8 মানিক রচনাসমগ্র তাহাব মুখ খুলিয়া দিযাছে, রাজ্যের কথার মধ্যে খোকার যে কত বড়ো ফাড়া কাটিয়াছে তাও সে শ্যামাকে শোনাইয়া দিল। বলিল বিকাল পর্যন্ত তাহাকে না ডাকিলে আর দেখিতে হইত না। জ্বর বাড়িতে বাড়িতে একসময়--- গিয়ে একটা ওষুদ পাঠিয়ে দিচ্ছি। রাণীর হাতে, পাঁচ ফেঁটা করে খাইয়ে দিও দুধের সঙ্গে মিশিয়ে চামচেয়,-গোরুর দুধ নয় মা, সে ভুল যেন করে বোসো না। আধঘণ্টা পরপর তাপ নিযে যদি দাখো জ্বর কমছে না, গা মুছে দিয়ে। সন্ধ্যাবেলা। আপনি আর একবার আসবেন বাবা। হারাণ দািবজাবি কাছে গিয়া একবার দাড়াইল। বলিল, ভয় পেযো না মা, এবার জুর কমতে আরম্ভ করবে। শ্যামা ভাবিল সাহস দিবার জন্য নয়, হারাণ হয়তো ভিজিটেব টাকার জন্য দাড়াইয়াছে। কত টাকা দিবে, যাহাকে বাবা বলিয়া ডাকিয়াছে দুটো একটা টাকা কেমন করিয়া তাহার হাতে দিবে, শ্যামা ভাবিয়া পাইতেছিল না। অত্যন্ত সংকোচের সঙেগ সে বলিল, উনি বাড়ি নেই—— এলে পাঠিযে দিও —বলিয়া হারাণ চলিয়া গেল। স্বয়ং শীতলকে অথবা ভিজিটের টাকা কা যে সে পাঠাইতে বলিযা গেল কিছুই বুঝিতে পারা গেল না। শীতলেব ফিরিবার কথা ছিল রাত্রি আটটায়। সে আসিল পরদিন বেলা বারোটার সময়। বিষ্ণুপ্রিয়া কার কাছে খবর পাইয়া এ বেলা শ্যামাকে ভাত পাঠাইয়া দিয়াছিল, শীতল যখন আসিয়া পৌঁছিল। সে তখন অনেক ব্যঞ্জনেব মধ্যে শুধু মাছ দিয়া ভাত খাইয়া উঠিয়াছে এবং নিজেকে তাহাব মনে হইতেছে বোগমুক্তার মতো। শীতল জিজ্ঞাসা করিল, খোকা কেমন ? ভালো আছে । কাল গাড়ি ফেল করে বসলাম, এমন ভাবনা হচ্ছিল তোমাদের জন্যে । শ্যামার মুখে অনুযোগ নাই, সে গম্ভীর ও রহস্যময়ী। কাল বিপদে পড়িয়া কারও উপর নির্ভব কবিবার জন্য সে মরিয়া যাইতেছিল, আজ বিপদ কাটিয যাওয়ার পর কিছু আত্মমর্যাদাব প্রযোজন হইয়াছে। তিন কয়েক বৎসর কাটিয়াছে। শ্যামা এখন তিনটি সস্তানের জননী। বড়ো খোকার দুবছর বয়সের সময় তাহার একটি মেয়ে হইয়াছে, তার তিনবছর পরে আর একটি ছেলে। নামকরণ হইয়াছে তিনজনেরই-বিধানচন্দ্ৰ, বকুলমালা ও বিমানবিহারী। এগুলি পোশাকি নাম। এ ছাড়া তিনজনের তিনটি ডাকনামও আছে, খোকা, বুকু ও মণি। ওদের মধ্যে বকুলের স্বাস্থ্যই আশ্চর্য রকমে ভালো। জন্মিয় অবধি একদিনের জন্য সে অসুখে ভোগে নাই, মোটামোটা হাত-পা, ফোলাফেলা গাল,--দুরস্তের একশেষ। শ্যামা তাহার মাথার চুলগুলি বাবরি করিয়া দিয়াছে। খাটো জাঙিয়া-পরা মেয়েটি যখন একমুহূর্ত স্থির হইয়া দাঁড়াইয়া ঝাকড়া চুলের ফাক দিয়া মিটমিট করিয়া তাকায়, দেখিলে চোখ জুড়াইয়া যায়। বুকুর রংও হইয়াছে বেশ মজা। রৌদ্রোজ্জ্বল প্রভাতে তাহার মুখখানা জ্বলজ্বল করে, ধুসর সন্ধ্যায় স্তিমিত হইয়া আসে-সারাদিনের বিনিদ্র দুরন্তপনার পর নিদ্ৰাতুর চোখ দুটির সঙ্গে বেশ মানায়। কিন্তু দেখিবার কেহ থাকে না। শ্যামা রান্না করে, শ্যামার কোল জুড়িয়া থাকে ছােটাে খোকা মণি। বুকু পিছন হইতে মার পিঠে বুকের ভর