পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা \8S এখানে গ্রাম জমাট বাঁধিয়াছে। দোকানপাটের সংখ্যা কম নয়। কিন্তু বাদলের রাত্রি গভীর হওয়ার আগে সবগুলি দোকানই এখন বন্ধ হইয়া গিয়াছে। রাস্তার বা দিকে একটা ফঁাকা জায়গায় কতকগুলি টিনের চালা। একদিন অন্তর ওখানে বাজার বসে। কোথা হইতে এক সন্ন্যাসী আসিয়া একটা চালার নীচে আশ্রয় লইয়াছে। সম্মুখে তাহার ধুনিব আগুন। আগুনে সন্ন্যাসী মোটা মোটা বৃটি সেঁকিতেছিল। ওদিকের চালাটায লোম-ওঠা শীর্ণ কুকুরটা থাবায মুখ রাখিয়া তাহাঁই দেখিতেছে। শশী তাড়াতাড়ি আগাইয়া গেল। পা বারবাবা জলকাদাভিরা গর্তে গিয়া পড়িতেছিল। মনেব। গতির আজ সে ঠিক-ঠিকানা পাইতেছিল না। শ্ৰীনাথ দাসেব মুদিখানার পাশ দিয়া কায়েতপাড়াব পথটা বাহিব হইয়া গিয়াছে। হারুর বাড়ি এই পথের শেষ সীমায়। তারপব আৰ বাডি ঘর নাই। কোশব্যাপী মাঠ নিঃসডে পড়িয়া আছে। পথের মোডে বকুল গাছটির গোড়া পাকা বঁধানো। বিকালেব দিকে এখানে প্রত্যহ সরকারি আডিডা বসে। আলোটা ওখানে নামাইয়া রাখিয়া শশী একটা বিড়ি ধরাইল। চাহিযা দেখিল গাছেব নীচে শুকনো ডাল ও কঁচা পাকা পাতার সঙ্গে পাতােব উপবে ন্যাকড়া জডানো একটা পুতুল পড়িয়া আছে। পুতুলটা শশী চিনিতে পারিল। বৈশাখ মাসে বাজিতপুরেব মেলায় শ্ৰীনাথের দোকানে বসিয়া এক ঘণ্টা বিশ্রাম কাবাব মূল্যস্বরূপ তাহাব মেয়েকে পুতুলটা কিনিয়া দিয়াছিল। বিকালে বৃষ্টি থামিলে এখানে খেলিতে অনিষা শ্ৰীনাথের মেযে পুতুলটা ফেলিয়া গিয়াছে। নাই। পুতুল কে লইযাছে মেযেটা তাহা জানিতে পরিবে না। শশীই কেবল অনুমান করিতে পরিবে যামিনী কবিরাজের বউ ভোর ভোর বকুলতলা বঁট দিতে আসিয়া দেখিতে পাইয়া তুলিয়া লইয়া গিয়াছে। যামিনী কবিরাজের বউ চােরও নয়, পাগলও নয় . মাটির পুতুলে সে লোভ কবে না। কিন্তু প্ৰণাম করিযী (যে গাছের তলা বঁধানো, সেটি দেবধমী) মুখ তুলিতেই সামনে অত বড়ো একটা পুতুল পডিয়া থাকিতে দেখিলে এ কথা মনে হওয়ার মধ্যে বিস্মযেব কি আছে যে এ কাজ দেবতার, এই তাহাব ইঙিগত ? পুতুলটি আরও খানিকটা গাছেব গোড়ার দিকে ঠেলিয়া দিযা আলোটা তুলিয়া লইয়া শশী আগাইয়া (5क्रा ! বলিল, সাবধানে পা ফেলে চলো নিতাই, আস্তে পা ফেলে চলো। ফেলে দিয়ে হারুকে কাদা মাখিয়ো না যেন। কী বাস্তা! কাযেতপাড়াপ সংকীর্ণ পথটিব দুদিকে বঁশ ঝাড়ে মশা ভিনভন করিতেছিল। যামিনী কবিরাজের গোযালের পিছনটাতে তিন মাসের জমানো গোবর পচিয়া উঠিযাছে। ডোবার মধ্যে সারা বছর ধরিযা গজানো আগাছার জঙ্গল এখন বর্যার টুকুটুবুজিলের তলে হাঁফাইয়া হাঁফাইয়া বিষাক্ত হইয়া উঠিয়াছে। খানিক দূর আগাইয়া হাবুর বউয়ের মড়াকান্না তাহদের কানে ভাসিয়া আসিল। দুই শশীর চরিত্রে দুটি সুস্পষ্ট ভাগ আছে। একদিকে তাহার মধ্যে যেমন কল্পনা, ভাবাবেগ ও রসবোধের অভাব নাই, অন্যদিকে তেমনি সাধারণ সাংসারিক বুদ্ধি ও ধনসম্পত্তির প্রতি মমতাও তাহার যথেষ্ট। তাহার কল্পনাময় অংশটুকু গোপন ও মুক। অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ভাবে তাহার সঙ্গে না মিশিলে এ কথা কেহ টের পাইবে না যে, তার ভিতরেও জীবনের সৌন্দর্য ও শ্ৰীহীনতায় একটা গভীর