পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in V8S মানিক রচনাসমগ্ৰ সহানুভূতিমূলক বিচারপদ্ধতি আছে। তাহার বুদ্ধি, সংযম ও হিসাবি প্রকৃতির পরিচয়ই মানুষ সাধারণত পায়। সংসারে টিকিবাব জন্য দরকারি এই গুণগুলির জন্য শশীকে সকলে ভয় ও খাতির করিয়া চলে। শশীর চবিত্রের এই দিকটা গড়িযা তুলিয়াছে তাহার বাবা গোপাল দাস। গোপাল দাসের কারবার লোকে বলে গলায় ছুরি দেওয়া। আসলে সে করে সম্পত্তি কেনাবেচা ও টাকা ধারা দেওযা। অর্থাৎ দালালি ও মহাজানি। শোনা যায়, এককালে সে নাকি বার তিনেক জীবন্ত মানুষের কেনাবেচার ব্যাপারেও দালালি করিয়াছে’- তিনটি বৃদ্ধের বউ জুটািইয়া দেওয়া। সে আজকের কথা নয। বৃদ্ধ তিনজনের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হইয়াছে। এখন যামিনী কবিরাজের মরণ হইলেই ব্যাপারটা পুরাপুরি ইতিহাসের গর্ভে তলাইয়া যাইতে পারে। কিন্তু যামিনী কবিরাজেব বউ, শশী যাহাকে সেনদিদি বলিয়া ডাকে এবং শশীকে যে অপুত্ৰবতী রমণী গাভীবিভাবে স্নেহ করে, স্বামীকে সে এত যত্নে এত সাবধানে বঁাচাইয়া রাখিয়াছে যে শীঘ্ৰ যামিনী কবিরাজের মরিবার সম্ভাবনা নাই। যামিনী। কিন্তু মবিতে চায়। গ্রামের কলঙ্ক রটানোর কাজে উৎসাহী নিষ্কর্ম ব্যক্তির সংখ্যা এত বেশি। যে, এতটুকু এদিক ওদিক হইলে গ্রামের বউ-ঝিদের কলঙ্ক দিগদিগন্তে রাটিয়া যায়। কেহ বিশ্বাস করে, কেহ কবে না। যে বিশ্বাস করে সেও সত্যমিথ্যা যাচাই করে না, যে অবিশ্বাস করে সেও নয় । বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রশ্নটা নির্ভর করে মানুষের খুশির উপর। গ্রামের কলঙ্কিনীদের মধ্যে শশীর সেনদিদির প্রসিদ্ধিই বেশি। গোপালের সঙ্গেই তার নামটা জড়ানো হয় বেশি সময। লোকে নানা কথা বলাবলি করে। শশী বিশ্বাস করে না। যামিনী করে। সে খুড়গুড়ে বুড়ো। সন্দেহের তীব্র বিযে সে দগ্ধ হইয়া যায। স্ত্রী পাড়ায় কারও বাড়ি গেলে রাগে দুঃখে এক একদিন সে কঁদিযাও ফ্যালে। স্ত্রীর কায়েত-বাড়ি কাসুন্দি বানাইয়া আসার কৈফিয়তটা সে বিশ্বাস করে না! অথচ শশীব সেনদিদি সত্য কৈফিয়তই দেয। অতীতে কখনও সে যদি কোনো অন্যায় করিয়া থাকে, তাহা অতীতের সত্যমিথ্যা পাপপুণ্যে মিশিয়া আছে। উন্মাদ ছাড়া আজ শশীর সেনদিদিকে কেহ অৱিশ্বাস কবিবে না। বুড়া হইয়া যামিনীর মাথাটা খারাপ হইয়া গিয়াছে। দেখা হইলে গোপালকে সে শাপ দেয়। বলে, একাির্কড়ি টাকা নিয়ে তুই আমার খুব উপকাবটা কবেছিলি গোপাল! উচ্ছন্ন যাবি তুই, তোর সর্বনাশ হবে, ঘরবাড়ি তোর শ্মশান হয়ে যাবে। যামিনী কবিরাজের বউয়ের সম্বন্ধে গোপালের বদনাম হয়তো মিথ্যা, তবু লোক গোপাল ভালো নয়। তুচ্ছ কতগুলি টাকার জন্য সেই তো প্রতিমার মতো কিশোরীকে বুড়া, পাগলাটে যামিনী কবিরাজের বউ করিয়াছিল। শশীই গোপালের একমাত্র ছেলে, মেয়ে আছে তিনটি। বড়ো মেয়ের নাম বিন্ধাবাসিনী। বড়গাব নায়েব শ্যামাচরণ দাসের বড়ো ছেলে মোহনের সঙ্গে তাহার বিবাহ হইয়াছে। মোহনের একটি পা খোঁড়া । মেজো মেয়ে বিন্দুবাসিনীর বিবাহ হইয়াছে খাস কলিকাতায়, বড়োবাজারের নন্দলাল এন্ড কোং -এর নন্দলালের সঙ্গে । গোপালের সে এক স্মরণীয় কীর্তি। নন্দলালের কারবার পাটের। চারিদিক হইতে পাট সংগ্ৰহ করিয়া জমা করিবার সুবিধা হয় এবং চালান দিবার ভালো ব্যবস্থা থাকে এমন একটি মধ্যবর্তী গ্রাম খুজিয়া বাহির করিবার উদ্দেশ্যে বছব সাতেক আগে সে একবার এদিকে আসিয়াছিল। গোপাল তাহাকে ডাকিয়া লইয়া গিয়াছিল নিজের বাড়ি, আদর যত্ন করিয়াছিল। ঘরের লোকের মতো। তারপর কোথা দিয়া কী হইয়া গেল কে জানে,- হয়তো নন্দলালের দোষ ছিল, হয়তো ছিল না,--তিন দিন পরে গোপালের অনুগত গ্রামবাসীরা লাঠি হাতে দাঁড়াইয়া বিন্দুর সঙ্গে নন্দলালের বিবাহ দিয়া দিল। নন্দলালের চাকরিটা রাতারাতি বাজিতপুরে পলাইয়াছিল। পরদিন মনিবের উদ্ধারে সে একেবারে পুলিশ লইয়া হাজির! নন্দলাল ইচ্ছা করিলে