পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in \S)6ሱ O মানিক রচনাসমগ্ৰ কথাও তীর নয়। তবু শশীর মনে হইল, সাধারণভাবে আরও একটু ব্যথিত হওয়া যাদবের যেন উচিত ছিল। কানে না শুনিতে পান, একটা পরিবারে এখন যে বুকভাঙা হাহাকার উঠিয়াছে, যাদবের কি সে কল্পনা নাই ? মিনিট দশেক বসিযা যাদব উঠিলেন। বলিলেন, যাবে না কি শশী বাড়ির দিকে ? শশী বলিল, চলুন। লাঠি ঠকিয়া যাদব পথ চলেন। শশী জানে এত জোরে লাঠির শব্দ করা সাপের জন্য। মরিতে যাদব কি ভয় পান,-জীবন-মৃত্যু যার কাছে সমান হইয়া গিয়াছে? অথবা শুধু সাপের কামড়ে মবিতে ऊँद उठा ? চলিতে চলিতে যাদব বলিলেন, তুমি তো ডাক্তার মানুষ শশী, চরক সুশ্রুত ছেড়ে বিলাতি বিদ্যে ধরেছ, কেটে ছিড়ে গা ফুড়ে মরা মানুষ বাঁচাও,--ব্যাপারটা কী বল দেখি তোমাদের ? সত্যি সত্যি কিছু আছে না কি তোমাদের চিকিৎসা শাস্ত্রে? শশী বলিল, আঞ্জে আছে। বইকী পণ্ডিত মশায়,---কারও একব খেয়ালে তো ডাক্তারি শাস্ত্র হয়নি। হাজাব হাজার বৈজ্ঞানিক সারা জীবন পরীক্ষা করে করে সব আবিষ্কার করেছেন, নইলে জগৎ সুদ্ধ লোক যাদব বলিলেন, সূর্যবিজ্ঞান না জানা সব বৈজ্ঞানিক তো? আদি জ্ঞান যাব নেই পববর্তী জ্ঞান সে পাবে কোথায় শশী? যেমন তোমরা সব একালের ডাক্তার, তেমনি সব কবিরাজ- দৃষ্টিহীন অন্ধ সব। গাছের পাতার রস নিংড়ে ওষুদ করলে, গাছের পাতায় ওষুদের গুণ এল কোথা থেকে ৮ সূর্যবিজ্ঞান যে জানে সে শেকড়-পাতা খোজে। না। শশী, একখানি আতশি কাচের জোরে সূর্যরশ্মিকে তেজস্কর ওষুদে পরিণত কবে রোগীব দেহে নিক্ষেপ করে,-মুহূর্তে নিবাময়। মোটা মোটা বই পড়ে ছুরি কাচি চালাতে শিখে কী হয় ? মনে মনে শশী রাগে। গ্রাম্য মনের অপরিত্যাজ্য সংস্কাবে সেও যাদবকে ভক্তি কম করে না, তাই সায় না দিলেও তর্ক সে করিতে পাবে না। বাড়ির সামনে আসিযা যাদব বলেন, কলকাতা থেকে আঙুর এনেছি, দুটি খেয়ে যাও শশী-মুখে বিরুদ্ধ সমালোচনা করিলেও শশীকে যাদব কী স্নেহ কবেন, স্নেহ ও বিদ্বেষ যার কাছে সমান ? শশী বলিতে পারে না আঙুর খাওয়ার শখ তাহাব নাই । যাদবের সঙ্গে ভিতরে যাত্ৰী ! ডাইনে বাড়ির ভাঙা অংশের স্তুপ, তাব পিছনে সাহাদের দশ বছবের পরিত্যক্ত ভিটা। ভাবী কাষ্ঠের জীৰ্ণ কপাটে যাদব লাঠি ঠোকেন। ভিতর হইতে সাড়া লইযা পাগলদিদি দরজা খুলিয়া বলেন, আজ ফিরলে কেন গো ? শশী এয়েছ না কি সাথে ? এসো, ভেতরে এসো। মুখে একটাও দাঁত নাই, তোবড়ানো গাল, পাকা চুল,-পাগলদিদিকে যাদবের চেয়েও বুড়া দেখায়। পিঠটাও পাগলদিদির একটু বঁকিয়া গিয়াছে। তবু, শীর্ণ জরাগ্রস্ত দেহে ক্ষীণ প্ৰাণটুকু লইয়া পাগলদিদি ফোকলা মুখে অনবরত হাসেন,—এই ভাঙা বাড়ি, ডোবাজঙগল ভরা এই গাওদিয়া গ্ৰাম, এখানে তাহার বার্ধক্যপীড়িত জীবন, সব যেন কৌতুকময়—ঘনানো মৃত্যুর স্বাদে পাগলদিদি কৌতুকময়ী। শশী বসিলে চিবুক ধরিয়া বলেন, বড়োকর্তা কদিন বাড়ি ছিল না জানতে না বুঝি ছোটােকর্তা ? এলে না কেন গোপ্ল ডুরে শাড়িটি পরে, চুলটি বেঁধে বউটি সেজে যে বসেছিলাম তোমার জন্যে ? আঙুরগুলি যাদব ব্যাগে ভরিয়া আনিয়াছেন। বাহির করিয়া দেখা গেল, চাপ লাগিয়া অর্ধেক ফল গলিয়া গিয়াছে। ব্যাগে একটি জামা, দুখানা কাপড়, গামছা এই সব ছিল, আঙুরের রসে সব ভিজিয়া গিয়াছে। যাদব অপ্রতিভ হইয়া হাসেন। পাগলদিদি বলেন, দ্যাখে দাদা বুড়োর বুদ্ধি, ব্যাগে