পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা MOVSS তালবনের ওপাশে উচু মাটির টিলাটির দিকে। সে সেইদিকে চলিতে আরম্ভ করিল। জীবনে সে যত পুণ্য অর্জন করিয়াছে, তাব পাপের হিসাবটা আজ এখনকার মতো না ধরিয়া, তালবনের গভীর নির্জনতায় হঠাৎ তাহার পুরস্কাব কে দিল মানুষের বুদ্ধিতে তাহার বিশ্লেষণ নাই। হয়তো শশীর বাড়িব মেয়োবা অকাবণে তাঁহাকে যে লাঞ্ছনা দিয়াছিল জীবনের নিরপেক্ষ দেবতা ভোরের বাতাস পাখিব কলরব আর ঋজু তালগাছগুলিব প্রহরায় রক্ষিত যুগাস্তের পুরাতন নিভৃত শান্তির উপলক্ষের ক্ষতিপূরণ করিলেন। এত সহজে সেন্টিমেন্টাল করিয়া দিতে পারে, একটি সুখী পরিবারের অন্তঃপুর ছাড়া পৃথিবীতে এমন স্থান যে আছে কুমুদ তাহা জানিত না। এও কি কুমুদ জানিত যে এই অহেতুকী আনন্দ তাহার মৃত্যুরই শেষ ভূমিকা? তালপুকুরের ধাবে পৌঁছিয়া হঠাৎ তাহার মনে হইল, কী একটা রবারের মতো নরম জিনিসে পা পড়িয়াছে। চোখেব পালকে হলুদ রঙের নরম জিনিসটার মুখ মাটি হইতে উঠিয়া আসিয়া তাহার হাঁটুর কাছে কামড়াইয়া ধরিল। লেজের দিকটা জডাইয়া গেল তাহার পায়ে। কুমুদ জীবনে যত পাপ করিযাছে, পবিমাণ তার কম নয়, অল্প একটু পুণ্যের কয়েক মিনিটব্যাপী অসাধারণ পুবস্কাবের পব, এই তাহার শাস্তি। ঘাড় ধরিয়া সাপেব মাথাটা কুমুদ হাঁটু হইতে ছিনাই যা লাইল । সাপ ! সাপ ! শুনিয়া আগে আসিল মতি, ভিজা শরীরে শুকনো কাপড়টা কোনোমতে জড়াই যা। কুসুম ও ভাবে ছুটিতে পারে না। তাহার আসিতে দেরি হইল। সাপ দেখিয়া মতি বলিল, ও তো টোড়া সাপ। জলে থাকে। ওর বিষ নেই। কুমুদের মৃত্যুভয় প্রবল। কুসুম আসিয়া সায় না দেওয়া পর্যন্ত মতির কথা সে বিশ্বাস করিল না। বিশ্বাস করিয়াও হাঁটুর উপরে রুমাল দিয়া সজোরে বঁধিয়া সন্দিগ্ধভাবে বলিল, শশীকে একবার ডেকে আনো খুকি, দেখুক। যদি বিষ থাকে? চেনো তো শশীকে ? তোমাদের পাড়াতেই থাকে,-“ডাক্তার। কুসুম মুচকিয়া হাসিয়া বলিল, যা লো খুকি, ছোটােবাবুকে ডেকে আন। তাহার হাসিটা কুমুদেব ভালো লাগিল না। ছোটােবাবুর কে হন ? খানিক পরে কুসুমের এ কথার জবাবে সে তাই সংক্ষেপে শুধু বলিল, কেউ না। বন্ধু। ছোটোবাবু আমাদের বলতে গেলে একরকম আপনার লোক। দুবেলা আসেন। এ কথা শুনিয়াও কুসুমকে হঠাৎ আত্মীয়া জ্ঞান করিয়া বসিবার মতো মনের অবস্থা কুমুদের ছিল না। সে বলিল, টোড়া সাপের বিষ থাকে না কেন ? সব সাপের কি বিষ থাকে? টোডা হল জলের সাপ। আমায একবার কামড়েছিল। হয়তো ওই সাপটাই হবে! একদিন খুব ভোরে এই পুকুরে নাইছি, বেড়াতে বেড়াতে ছােটােবাবু এসে পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে গল্প করতে লাগলেন। এমনি সময় সাপটা এইখানে কামড়ে দিল,-কুসুম তাহার লিভারটা দেখাইয়া দিল, তাহার বোধ হয়। ধারণা ছিল মানুষের হৃদয়ের অবস্থানটা ওইখানে, ছোটােবাবুকে বললাম, সাপে কামড়েছে ছোটোবাবু। শুনে ছোটােবাবুর মুখ যা হয়ে গেল! কী হয়ে গেল?-কুমুদ কৌতুহল বোধ করিতেছিল। শুকিয়ে গেল। ছাইবৰ্ণ হয়ে গেল। সাপের কামড়ে তোমার কিছু হল না?