পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী। Վ)Գ রাত্রে শ্যামা শীতলকে ব্যাপারটা বলিল। বলিল এ সব দেখিয়া শুনিয়া তাহার বড়ো ভাবনা হয়। কেমন যেন মন ছেলেটার, এত মায়া ছিল পাখির বাচ্চাটার উপর! ছেলের এই দুর্বোধ্য কীর্তি লইয়া খানিকক্ষণ আলোচনা করিয়া তাহারা দুজনেই ছেলের মুখের দিকে চাহিয়া রহিল, বিধান তখন ঘুমাইয়া পডিয়ছিল। এ রকম বিহস্যময় প্রকৃতি ছেলেটা পাইল কোথা হইতে? ওব দেহমান তাদের দুজনের দেওয়া, তাদেব চােখের সামনে হাসিযা-কাদিয়া খেলা করিয়া ও বডো হইয়াছে, ওর মধ্যে এই দুর্বোধ্যতা কোথা হইতে আসিল গ শ্যামা বলে, তোমায অ্যাদ্দিন বলিনি, মাঝে মাঝে গম্ভীব হযে ও কী যেন ভাবে, ডেকে সাড়া পাইনে । শীতল গম্ভীরভাবে মাথা নাড়িয়া বলে, সাধারণ ছেলের মতো হয়নি। শ্যামা সাব্য দেয়, কত বাড়িব কত ছেলে তো দেখি, আপনমনে খেলাধুলো করে খায়দায় ঘুমোয়, এ যে কী ছেলে হয়েছে, কাবও সঙ্গে মিল নেই। কী বুদ্ধি দেখেছ? শীতল বলে, কাল কী হযেছে জােন, জিজ্ঞেস করেছিলাম দশ টাকা মন হলে আড়াই সেরের দাম কত, সঙ্গে সঙ্গে বললে দশ আনা। কতদিন আগে বলে দিয়েছিলাম যত টাকা মন আড়াই সের তত আনা, ঠিক মনে রেখেছে। বাডিতে একটা পোষা বিড়াল ছিল, বাণী। একদিন দুপুরবেলা গলায্য দডি বাঁধিয়া জানালার শিকেব সঙ্গে ঝুলাইয়া দিযা কঁদিতে কঁাদিতে বিধান তাহার মৃতু্যযন্ত্রণা দেখিতেছিল। দেখিয়া শ্যামা সেদিন ভযানক বাগি যা গেল। রাণীকে ছাডিয়া দিযা ছেলেকে সে বেদম মার মারিল। বিধানের স্বভাব কিন্তু বদলাইল না। পিঁপড়ে দেখিলে সে টিপিয়া মারে, ফড়িং ধরিযা পাখা ছিড়িয়া দেয়, বিড়ালছােনা কুকুররছােনা পুষিযা হঠাৎ একদিন যন্ত্রণা দিয়া মারিয়া ফেলে। বারো তেরো বছর বয়স হওয়ার আগে তাহার এ স্বভাব শোধবায় নাই। এখন শীতলের আয় কিছু বাডিয়াছে। পিতার আমল হইতে তাহদের নিজেদের প্রেস ছিল, প্রেসের কাজ সে ভালো বোঝে, তার তত্ত্বাবধানে কমল প্রেসের অনেক উন্নতি হইয়াছে। প্রেসের সমস্ত ভার এখন তাহাব, মাহিনাব উপর সে লাভের কমিশন পায়, উপবি আয়ও কিছুকিছু হয়। সেটা এই রকম - ব্যবসাযে অনেক কিছুই চলে ; অনেক কোম্পানির যে কৰ্মচারীর উপর ছাপার কাজের ভার থাকে ফর্ম পিছু আট টাকা দিয়া সে প্রেসের দশ টাকার বিল দাবি ফরে, এ রকম বিল দিতে হয়, প্রেসের মালিক কমল ঘোষ তাহা জানে। তাই খাতাপত্রে দশ টাকা পাওনা লেখা থাকিলেও আট অথবা দশ। কত টাকা ঘবে আসিযাছে সব সময় জানিবার উপায় থাকে না। জানে শুধু সে, প্রেসের ভার থাকে যাহাব উপব। শীতল অনাযাসে অনেক দশ টাকা পাওনাকে আট টাকায় দাঁড় করাইয়া দেয়। প্রেসের মালিক কমল ঘোষ হয়তো মাঝে মাঝে সন্দেহ করে কিন্তু প্রেসের ক্ৰমোন্নতি দেখিয়া কিছু বলে না। শীতলেব খুব পরিবর্তন হইয়াছে। কমল প্রেসে চাকরি পাওয়ার আগে সে দেড় বছর বেকার বসিয়াছিল, যেমন হয়, এই দুঃখের সময় সুসময়ের বন্ধুদের চিনিতে তাহার বাকি থাকে নাই, এবার তাদের সে আর আমল দেয় না, সোজাসুজি ওদের ত্যাগ করিবার সাহস তো তার নাই, এখন সে ওদের কাছে দারিদ্রোর ভান করে, দেড় বছর গরিব হইয়া থাকিবার পর এটা সে সহজেই করিতে পারে। তার মধ্যে ভারী একটা অস্থিরতা আসিয়াছে, কিছুদিন খুব স্মৃর্তি করিয়া কাটানোর পর শ্রান্ত মানুষের যে রকম আসে, কিছু ভালো লাগে না, কী করিবে ঠিক পায় না। শ্যামার সঙ্গে গোড়া হইতে মনের মিল করিয়া রাখিলে এখন সে বাড়িতেই একটি সুখদুঃখের সঙগী পাইত, আর তাহা হইবার উপায় নাই-সাংসারিক ব্যাপারে ও ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে শ্যামার সঙ্গে তাহার কতগুলি মত ও