পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in VODAS মানিক রচনাসমগ্ৰ কাচা মেয়ে। একেবারেই কঁচা মেয়ে। কিন্তু মনে মনে মতি সবই জানে। কী জানে না সে ? সেদিন কুমুদ সাপেব কামডে মরিয়া গেলে সে কিছুই করিত না এক নম্বর মতি এটা জানে। দু নম্বব সে জানে, কুমুদ শুনিতে চায় সে মরিয়া গেলে মতি একটু কঁাদিত। মতি এত কথা জানে। সে কিছু করিত না এই সত্য কথা, আর সে যে একটু কঁাদিত এই মিথ্যা কথা, এর কোনোটাই যে বলিতে নাই, এও যদি মতি না জানিবে-মধ্যবর্তী ও জবাবটা দিয়া সে অজ্ঞতার ভান করিল কেন ? তবু, যত হিসেবই ধবা যাক, মতি কঁচা মেয়েই। এখন যদি মরে যাই ? কুমুদ বলে। তাহলে আমি— —এখন যদি মরে যান ? দুর, মরার কথা বলতে নেই। কে জানে মতি এ সব শিখিল কোথায়! আপনা হইতেই শিখিয়াছে নিশ্চয়,--—কথা বলিতে, কাপড় পরিতে, ভাত খাইতে শেখাব মতো। এ সব কেহ শেখায় না। কে শিখাইবে? এবং তারপর কুমুদ মতিকে নানা কথা জিজ্ঞাসা করে। আর ছেলেমানুষি প্রশ্ন নয়। তাহার নিজের কথা, আত্মীযস্বজনের কথা, তাহার গ্রামের কথা। মতি আগ্রহের সঙ্গে সকল প্রশ্নের জবাব দেয়। কখনও পালটা প্রশ্ন কলে। কখনও বা আপনা হইতেই কুমুদকে অনেক অতিরিও অবান্তর কথা বলে। তাহার সরল চাহনি একবালও কুটিল হইয়া ওঠে না। তাহাব নিৰ্ভয় নির্ভরশীলতা কখনও টুটিয়া যায় না। না, মতির কোনো ভাবনা নাই। সে কিছু জানে না, কিছু বোঝে না, পৃথিবীর সবই তাহার কাছে অভিনব, অভিজ্ঞতার অতীত। কুমুদকে হাত ধরিতে দেওয়া উচিত কি অনুচিত সে তার কী জানে? ও সব কুমুদ বুঝিবে! রাজপুত্ৰ প্রবীর বুঝিবে। মাতিব বিশেষ লজ্জাও করে না। তবে, হঠাৎ চোখ নিচু করি যা একটু সে যে হাসে সেটা কিছু নয। দিন ও রাত্রিব মধ্যে দুপুরের সময়ের গতি সবচেয়ে শিথিল। দুপুরেব অন্ত নাই । আকাশেৰ সূৰ্য্য কতক্ষণে কতটুকু সরিয়া তাহাদের গায়ে রোদ ফেলেন জানা যায় না। তাহারা উঠিয়া টিলােটার দিকে চলিতে থাকে। ওদিকে নিবিড় ছায়ার ছড়াছড়ি। 에5 যামিনী কবিবাজের বউ বাঁচিয়া উঠিয়াছে। ভগবানের দয়া, যামিনী কবিবাজের বউয্যের কপাল, শশীর গৌরব। গোপাল ছেলের সঙ্গে আজকাল প্রায় কথা বন্ধ করি যা দিয়াছে। যামিনী কবিরাজের বউ বাঁচিয়া উঠিয়াছে বলিয়া নয, অন্য কাবণে। অন্তত সাধাবণ মানুষের তাই ধরিয়া লওয়া উচিত। ব্যাপাবটা হইয়াছিল। এই । শশীর বেশ পিসাের হইয়াছে। বাজিতপুরেব সরকারি ডাক্তারকে ডাকিতে খরচ অনেক। অনেকে শশীকেই ডাকে। যামিনী কবিরাজের বউয়ের চিকিৎসার জন্য কয়েক দিন শশী দূরে কোথাও যাওয়া তো বন্ধ রাখিয়াছেই, তিন মাইল দূরের নন্দনপুরের কল পর্যন্ত ফিরাইয়া দিয়াছে। এই সময়টা যামিনী কবিরাজের বউ মরিতে বসিয়াছিল। গোপালের উসকানিতে যামিনী ঝগড়া করিয়া অপমান করিয়া শশীর আসা-যাওযা বন্ধ করিবার চেষ্টা করিয়া সফল হয় নাই। দুর গ্রামে রোগী দেখিতে পাঠাইতে না পারিয়া ছেলের উপর গোপাল খেপিয়া গিয়াছে। অথচ বাড়াবাড়ি করিবার সাহস তাহদের ছিল না। শশীকে তাহারা দুজনেই ভয় করিতে শুরু করিয়া দিয়াছিল। মনে পাপ থাকার এই একটা লক্ষণ। মনে হয়, সকলে বুঝি সব জানে। সাপ উঠিয়া পড়ার আশঙ্কায় কেঁচো খুঁড়িবার চেষ্টাতেও মানুয ইতস্তত করে। আকাশে চাদ ওঠে, সূর্য ওঠে। পৃথিবীটা চিরকাল ঈশ্বরের রাজ্য। মানুষের এই বদ্ধমূল সংস্কার সহজে যাইবার নয়। হাজার পাপ করিলেও নয়।