পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in voVo মানিক রচনাসমগ্ৰ শ্ৰেষ্ঠ কুমুদ ; যাত্ৰাদলের অভিনেতা সাজিয়া তাহার আবির্ভাব? এ কী ব্যর্থ যায়! শশীর মন শান্ত হইয়াছে, স্থিতিলাভ করিয়াছে। কেমন করিয়া হঠাৎ সে বুঝিতে পারিয়াছে কিডস্কিনের জুতােটা, আশ্চর্য শাডিটা, বিস্ময়কব ব্লাউজটাই আসল। আর আসল তখনকার কুমুদের টাকাটা। তারপর তোমার চেহারা তো আছেই! সেটাও একটু দরকার আর দরকার বিশ্বজগৎকে একটু ডেন্ট কেয়ার করার ভাব। জমিল রোমান্স। শশী এটা বুঝিয়াছে। কিন্তু হিসেব তো কম নয়? অতগুলি সমন্বয় তো তুচ্ছ নয়? এটাও শশী৷ স্বীকার করে। স্বীকার করে যে ব্যাপারটা মন্দ নয়। মানুষের সভ্যতার খুবই অগ্রগতির পরিচয়, চমৎকার উপভোগ। লোভ কবিবার মতো। পাইলে সে লাভবানই হইত। কিন্তু বঞ্চিত হইয়াছে বলিয়া মনের মধ্যে অসন্তোষ পুরিয়া রাখিবার মতোও কিছু নয়। শশী ইহাও বুঝিয়াছে যে জীবনকে শ্রদ্ধা না করিলে জীবন আনন্দ দেয় না। শ্রদ্ধার সঙ্গে আনন্দের বিনিময়, জীবনদেবতার এই বীতি। শশী তাই প্ৰাণপণে জীবনকে শ্রদ্ধা করে। সংকীর্ণ জীবন, মলিন জীবন, দুর্বল পঙ্গ জীবন, সমস্ত জীবনকে সে শ্রদ্ধা করে সকলের চেযে বেশি। কুসুমের সঙ্গে কিন্তু শশীর আর একদিন ঝগড়া হইয়া গিয়াছে। বাত্রে একদিন হঠাৎ কুসুমের পেটে ব্যথা ধরিয়াছিল। অসহ্য প্রাণঘাতী ব্যথা। শশীকে না ডাকিয়া উপায় ছিল না। রাত্রে, বিশেষত শীতের রাত্রে, ঘুম ভাঙিয়া বিছানা ছাড়িয়া উঠিযা গিয়া ডাক্তারি করাটা শশীর এখনও ভালো রকম অভ্যাস হয় নাই। প্রথমে সে একটু বিরক্তই হইয়াছিল। পেটে ব্যথা! পেটে ব্যথার জন্য হার ঘোষের বংশে কে কলে ডাক্তার ডাকিয়াছে? একটু গরম তেল মালিশ করিয়া দিলেই হইত! কিন্তু কুসুমের ব্যথার প্রতাপ দেখিয়া শশীর বিরক্তি টেকে নাই। কলিক ? কে জানে ? কী খেয়েছিলে পর্যানের বউ ? জবাব দিয়াছিল মতি । বউ আজ কিছু খায়নি ছোটােবাবু! দাদার সঙ্গে ঝগড়া কবে সারাদিন উপোস করেছে। একাদশীব দিন এয়োস্ত্রী মানুষ কবল উপোস,-হবে না ? কথাটা সাংঘাতিক। একাদশীর দিন এই উপবাস করার কথাটা। এমন কাজ করিবাব মতো বুকের পােটা কুসুম ছাড়া আব্ব কারও হইত। কিনা সন্দেহ। কিছু খাওনি পর্যানেবা বউ ? খেয়েছি। খাব না কেন? একটা মাছের আঁশ খেযেছি। কুসুম খুঁকিতে পুঁকিতে বলিয়াছিল। তাহা হইলে একাদশীর দিন উপবাস করে নাই। ঝগড়ার কথাটাই সত্য, একাদশীর উল্লেখটা মতি অনর্থক করিমাছে। শশীর হঠাৎ রাগ হইয়া গিয়াছিল। কেন, কী বৃত্তান্ত না জানিয়া মতি আমন যা-তা মন্তব্য করে কেন ? কিন্তু কুসুমের কী হইয়াছে? কলিক ? পেটের ব্যথাটা বড়ো রহস্যময় অসুখ । পরীক্ষা করিয়া দেখিবার উপায় নাই, সত্য কী মিথ্যা বুঝিবার উপায় নাই, থার্মেমিটার, স্টেথোস্কোপ কোনোটাই কাজে লাগে না। রোগী যা বলে, তাই সই। ব্যথাটা ডান দিকে বলিলে ডান দিকে, ঝিলিক দেওয়া ব্যথা বলিলে ঝিলিক দেওয়া ব্যথা, চনচনে একটানা ব্যথা বলিলে চনচনে একটানা ব্যাথা। সন্দেহ করিবার জো নাই। কুসুমের বর্ণনা শুনিয়া শশী কিছুই বুঝিতে পারে নাই। পরানকে সে আড়ালে ডাকিয়া লইয়া গিয়াছিল। খানিক পরে বাড়ি গিয়া পঠাইয়া দিয়াছিল ওষুধা। নিজে আর ফিরিয়া যায় নাই।