পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা was পেটের ব্যথায় কষ্ট পায়, আর কোনো রাগ বালাই নাই। এই তো চাই। সব বাঙালিঘরের মেয়ের এ রকম স্বাস্থ্য হইলে জাতটা আজ ডুবিতে বসিত না, শশী এ কথাও ভাবে! জানােলা দিয়া উৎসুক দৃষ্টিতে ঘরের ভিতর চাহিয়া কুসুম বলিল, আপনার ঘরটা একটু দেখে যাব ছোটােবাবু ? চলো না, সিন্ধু ওদের কাউকে ডাকি, আঁ্যা ? না। আমি একাই দেখে যাই। কুসুম একাই শশীর ঘর দেখিল। শশী জানিত এটা উচিত নয়। কিন্তু বারণও সে করিল না। ভাবিল, ওর যদি বদনামের ভয় না থাকে, আমার বয়ে গেল। আমি তো ডাকিনি। শশীর ঘর দেখিয়া কুমুদ বলিয়াছিল, বেশ সাজানো ঘর। কিন্তু যাদুঘর মিউজিয়ামের মতো মানুষের শোবার ঘরে কী আর দেখিবার থাকে? বড়ো আলমারি দুটির পাঁচটি তাক। একটি আলমারিতে ঠাসিয়া বই ভরিয়াও কুলায় নাই, মাথার উপরে উচু করিয়া সাজাইয়া রাখা হইয়াছে। অপরটির উপরের তাক তিনটিতেও ডাক্তাবি বই সাজানো, নীচের তাকে চকচকে ডাক্তারি যন্ত্রপাতি। কোনটা কী কাজে লাগে? কুসুম জিজ্ঞাসা করিল। কুসুমের যেন তাড়াতাড়ি নাই, যতক্ষণ খুশি শশীর ঘরে থাকিতে পারে। দেয়ালে কয়েকটা ছবি আর ফটাে টাঙানো আছে, কুসুম অন্যমনস্কের মতো সেগুলি দেখিল। ফটােগুলি অধিকাংশই শশীব বাডির স্ত্রী-পুরুষের, কোনো মন্তব্য নিম্প্রয়োজন। কুমুদের ফটােটা দেখিয়া কুসুম বলিল, সেই লোকটা, না ? গত বৎসর শশী দেয়ালে এক গোছা ধানের শিষ। টােঙাইয়া দিযাছিল। দেখিযা কুসুম ভারী খুশি। কাঠের বাকসে কী আছে? ওষুধ ? দেখি। ওই ছোটাে আলমারিতে ওষুধ রাখিয়াছে, আবার ব্যাকসে কেন ? এ ঘরে আপনি এক শোন ছোটােবাবু? একই শুই ৷ ” তা, বউ আসতে আর দেরি কতা! শিগগির বাপের বাড়ি চলে যাব ছোটােবাবু। আর আসব না। আসবে না ? সে কী? শশী অবাক হইয়া গেল। কুসুম একটু ভাবিল। আসব, অনেক দেরি করে আসব। হয়তো ও বছর নয়তো পরের বছর, ঠিক কিছু নেই। আচ্ছা, যাই ছোটােবাবু। শশী বলিল, কী করে যাবে? বাবা ওদিকের দাওয়ায় এসে বসেছেন। ঘুমিয়ে উঠলেন। তবে ? কুসুম জিজ্ঞাসা করিল। সে যে বিশেষ ভয় পাইয়াছে মনে হয় না। বিপদে কুসুম শান্তই থাকে। বিচলিত হয় না, দিশেহারা হয় না। শশী বলিল, একটু বোসো। বাবা এখুনি বাইরের ঘরে চলে যাবেন। তবে দরজাটা বন্ধ করে দিন। দেখতে পান যদি ? কে জানিত নিয়তি আজ গোপাল হইয়া ঘুম ভাঙিয়া ওদিকের দাওয়ায় বসিবে, আজ সাত বছর পরে । পূজার পর গাওদিয়ার স্বাস্থ্য ক্ৰমে ক্ৰমে ভালো হয়। ম্যালেরিয়া কমিয়া আসে, কলেরা বন্ধ হয়, লোকের ক্ষুধা বাড়ে, মাছ দুধ সস্তা হয়। নিউমোনিয়া ও ইনফ্ৰয়েনজায় কেবল দুই দশজন যা মারা যায়-সে। কিছু নয়। অগ্রহায়ণ পৌষ মাসে খালের জল অনেক কমিয়া আসে। মাঘের শেষাশেষি ডোবা শুকাইয়া যায়। চৈত্র মাসে অনেক পুকুরে দু-এক হাত জল থাকে মাত্র। বৈশাখে বৃষ্টি না হইলে অধিকাংশ পুকুর শুকাইয়া ওঠে। তখন গ্রামে বড়ো জলের কষ্ট। শীতলবাবুর বাড়ির সামনের বড়ো দিঘিটার জল খাইয়া গাওদিয়া, সাতগাঁ আর উখারার লোক প্রাণধারণ করে। বাবুর দিঘিতে