পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা ○br○ কী জবাব! নন্দলালকে সামনে দেখিয়া, তাহার কথা শুনিয়া, শশীর কল্পনা নিভিয়া আসিতেছে। রাগ, প্রতিহিংসা এই সব যে মানুষের অবলম্বন, সহজে ও সব সে ছাড়িতে চায় না। ছাড়িলে বঁচিবে কী লইয়া ? খবর পেলাম, আজ সকালে তুমি পেঁৗছবে। বাবা বললেন, ঘাটে যা শশী, বাবুদের গাড়িটা নিয়ে যা, সঙ্গে করে নিয়ে আসবি। নিজেও আসতেন, আমি বারণ করলাম। বাতে কষ্ট পাচ্ছেন, কতক্ষণ ঘাটে অপেক্ষা করতে হবে তারও কিছু ঠিক নেই। তুমি আসছি শুনে বাড়িতে হইচই পড়ে গেছে নন্দ । নন্দলাল বলিল, কুঁ। মোটরটা কার? শীতলবাবুর ভাই বিমলবাবুর। ওরাই জমিদার। শীতলবাবু লোক কেমন ? প্রশ্ন শুনিয়া শশী একটু বিস্মিত হইল। বেশ লোক। খুব ধর্মচৰ্চা করেন। এখানে দাঁড়িয়ে কী হবে ? তোমার চাকরকে বল, জিনিস গাডিতে তুলুক। নৌকা ছেড়ে দাও, আমাদের নৌকায় ফিরে যাবে। নন্দলাল মাথা নাডিল,--আমি এ বেলাই ফিরব শশী। আর কাজ শেষ করে তোমাদের বাডি যাওযাব সুবিধে হবে কি না, --মানে, হযতো সময় পাব না ; না, হয়তো কেন, সময় পাব না। শশী এ অপমানও হজম করিল। আজ তোমাকে ফিরতে দিচ্ছে কে ? সবাই আশা কবে আছে নন্দ । আমাকে ফিরতেই হবে। বাজিতপুরে কাজ ফেলে এসেছি। শীতলবাবুর সঙ্গে দেখা করেই আবাব নীেকা খুলিব। শীতলীবাবুর কাছে তাহার কী প্রয়োজন জিজ্ঞাসা করিতে নন্দলাল একটা ভাসাভাসা জবাব দিল যে বাজিতপুরে শীতলবাবুব কিছু জমি কিনিবে। কথা কহিতেও নন্দলালের যেন কষ্ট হইতেছিল! কেন, কী বৃত্তান্ত শশী তাহা কিছুই জিজ্ঞাসা করিল না। নিজেকে তাহার গোমস্ত মনে হইতেছিল নন্দলালের । বেশ, কাজ থাকলে তোমায় আটকাব না। এ বেলাটা থেকে খাওয়া-দাওয়া করে বিকালে রওনা দিয়ে। বলিয়া শশী যোগ দিল, বাবা নিজে আসতেন নন্দ। আমি বারণ করলাম। কিন্তু নন্দব সুবিধা হইবে না। সময় নাই। তখন শশী বলিল, ও, আচ্ছা। তাহার রাগ হইতেছিল, মনে জ্বালা ধরিয়া গিয়াছিল। টিনেব চালাটার এক ধারে চণ্ডী ছোকরা কেরোসিন কাঠেব উপর রেকবি-ভরা পান সাজাইয়া রাখিয়াছে, আর কয়েক প্যাকেট লাল নীল কাগজে মোড়া বিড়ি। চণ্ডী নিজে কাছে গিয়া হাঁ করিয়া বাবুদের গাড়িটা দেখিতেছে। গাওদিয়ায় মোটরগাড়ি ! নন্দ থাকিয়া থাকিয়া গাড়িটার দিকে চাহিতেছিল। কিন্তু শশীর সঙ্গে এইমাত্র সে সম্পর্ক চুকাইয়া দিয়াছে, গাড়িটা আনিয়াছে শশী। নন্দলাল তাই বুলিল, শীতলবাবুর বাড়িটা কতদূর ? গায়ের শেষে । তবে তো কম দূর নয়। ঘোড়ার গাড়ি-টাড়ি পাওয়া যায়? চাকরিটাকে পাঠিয়ে দিই, ডেকে আনুক । ঘোড়ার গাড়ি পাওয়া যায় না। এই গাড়ি বাবুদের বাড়ি ফিরে যাচ্ছে, তুমি ইচ্ছে করলে যেতে পার। রসিকবাবুর বাগানের একটা গাছের দিকে শশী দৃষ্টি নিবদ্ধ করিয়া রাখিয়াছিল, এবার সে আবার চণ্ডীর দোকানের দিকে চাহিল। নন্দ কী ভাবিল বলা যায় না, বলিল, সময় থাকলে তোমাদের বাড়ি যেতাম শশী।