পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা ○br(? না, সে ডাক্তার নয়। ব্যাবসাদার। বাহিরে সে টাকা কুড়াইয়া বেড়ায়, বাহিরে সে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করিবার ভাড়া-করা সৈনিক ; গৃহে তাহার অস্বাস্থ্যকর আবহাওযা, নৃত্যুর আধিপত্য। তারপর কয়েক দিন শশী বাড়িতে স্বাস্থ্যূনীতি প্রবর্তনের চেষ্টায় সকলকে ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিল। কী দিয়ে দাঁত মাজছিস ? কয়লা দিয়ে। নিমের দাঁতন দিয়ে মাজ । তেতো যে ? কিযলাব দাঁত কত সাদা হয় ! যে কয়লা দিয়া দাঁত মাজিত সে কিছুতেই নিমের দাঁতন ব্যবহার কবিতে বাজি হইল না। শশী কি খেপিয়া গিয়াছে? দাঁত মাজিবে তার মধ্যে এত কাণ্ড কোন ! মাটিতে ওকে মুড়ি দিলি যে কুন্দ পা বাটি নেই! বাটিতে দিলে এক খাবলায্য সব খেযে ফেলবে যে! তখন ফের চেঁচাতে আবিস্তম্ভ করবে। ছডিযে দিলাম খুঁটে খটে অনেকক্ষণ খাবে। কুন্দ সগর্বে ছেলেকে নিরীক্ষণ করে। নধর শিশু ! শশীর চোখে লাগিয়াছে। একটু কোলে নিক না ? শশী তাহাকে বোঝায়, বলে মুড়ির সঙ্গে ছেলে তোর জার্ম খাচ্ছে জানিস ? পেটে কৃমি হবে, আমাশা হবে, কশেরা হবে।-- কী সব অমওগুলো কথা! কুন্দ বলে, বালাই যাট! ভাবে, ও সব কিছু যদি হয় তো তোমার মুখেব দোষে হয়েছে জানব। ডাক্তার হযেছ বলেই তুমি যা তা বলবে না কি? বাছবি তুমি গুৰুজন, ওর কপালে কথা তোমার শিকলেও যেতে পারে, এ খেয়াল তোমার নেই । কুন্দর ছেলে হামা দিযা মাটি হইতে খুটিয়া খুটিযা মুডি খাইতে থাকে দুবেলা! শশীব কথা কুন্দ বিশ্বাস কবে না। দু আঙুলে একটি একটি মুডি মুখে দিবাব সময় ছেলেকে তাহার কী সুন্দব দেখায় ! শশী রাগ কবিয়া ধমক দিলে কুন্দ বলে, চুপ করুন শশীদাদা। ছেলে আপনাব নয। মামা চোখ বুজলে আপনি বাড়ি থেকে খেদিয়ে দেবেন তা জানি। • বাড়ি হইতে তাড়াইয়া দিবার কথাটা কোথা হইতে আসে। শশী বুঝিতে পারে না। তবে অবাস্তব শোনায় না। কারণ, শশীব মতে, বাড়ি হইতে খেদাইয়া দেওয়ার উপযুক্ত কুন্দ ছাড়া আবে কে আছে ? শশী বলে, পিসি কথা শোনো, ছেলেকে তোমার অত দুধ খাইও না। ওব সিকি দুধ হজম করার ক্ষমতাও যে ওর নেই! পিসি ভাবে, হায়রে কপাল! বাড়িতে এত দুধের ছডাছড়ি, আমার ছেলে একটু দুধ খায় এ কারও সয় না। কতটুকু দুধই বা ও খায়! কী জানি কবে ছেলের দুধের বরাদ্দ কমিয়া যায়। এই ভয়ে পিসি ছেলেকে আরও একটু বেশি দুধ খাওয়াইতে আরম্ভ করে। দুপুরবেলা শশী ঘরে ঘরে বলিয়া যায় ; ওঠো, উঠে পড়ো সবাই, ঘুমোতে হবে না! শীতকালের দুপুরে ঘুম কীসের ? হয়েছে কী? এবার বাপু ওর একটা বিয়ে দেওয়া দরকার! কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই তাহারা বিদ্রোহ করে। যাদের বয়স কম ও স্বামী আছে তারা ভাবে, আমাদের মতো রাত জগতে হলে দুপুরে ঘুমোই কেন বুঝতে! যাদের স্বামী নাই, তারা ভাবে ; দুপুরবেলা না ঘুমিয়ে করব কী? সময় কাটবে কী করে ? শশী যেন পাগল, স্বাস্থ্য দিয়ে আমাদের কী হবে! গিন্নিরা, যাদের বয়স হইয়াছে, তারা ভাবে মানিক ১ম-২৫