পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা VOS (? না, তখন তাহার এই বিস্ময়কব দিকটা চোখে পড়ে। শশী বুঝিতে পারে, এতকাল কুসুমের যে সব পাগলামি সে লক্ষ করিয়াছে,-ওর শান্ত সহিষ্ণু ও গভীর প্রকৃতির সঙ্গে যা কোনোদিন খাপ খাওয়ানো যায় নাই,- সে সব বহু দূর অতীতের ছেলেমানুষ কুসুমের কীর্তি,-কুসুমেব এখনকার পরিণত দেহমানে যার অস্তিত্ব কল্পনা করাও কঠিন। বিন্দুর কথা ধীরে ধীরে শশী সব বলিয়া গেল। বলিতে বলিতে সে অন্যমনস্কও হইয়া গেল মাঝে মাঝে। কী রহস্যময়ী আজ তাহার মনে হইতেছে কুসুমকে! কুসুম যখন সেদিন দুপুরে তার ঘর দেখিতে গিয়াছিল, সেদিন প্রথম শশীর মনে হইয়াছিল, গত কয়েক বছর ধরিয়া কুসুমেব যত খাপছাড়া ব্যবহােব সে লক্ষ করিয়াছে, সব তাহার মন ভুলানোর জন্য বয়স্ক রমণীর প্রণয়-ব্যবহাব। বডো দুঃখ হইয়াছিল সেদিন শশীীর,--নিজের মনকে সে মহার্ঘ মনে করে, সে মন যেন বিকাইয়া গিয়াছিল কানাকড়ির দামে। শশী এখন তৃপ্তি বোধ করিল। তাই যদি হইত, কুসুমের সংস্পর্শে সে বছরের পর বছর কাটাইয়া দিয়াছিল, একদিনও সে কি টের পাইত না কুসুম কী চায়? একটি নারী মন ভুলাইতে চাহিতেছে এটুকু বুঝিতে কি সাত বছর সময় লাগে মানুয্যের ? এই কুসুমের মধ্যে যে কুসুম কিশোরবয়সি, সে শুধু খেলা করিত শশীর সঙ্গে। শশী তো তোকে চিনিত না ; তাই ভাবিত, এত বন্যাসেও পাগলামি গেল না। কুসুমের। তালবন হইতে শশী সেদিন হালকা মনে বাড়ি ফিবিল। কুসুমকে বিন্দুবও ভালো লাগিল। কুসুমের কৌতুহল মিটিয়াছিল। বিন্দুর কলিকতাব জীবন সম্বন্ধে সে কোনো কথা তুলিল না। সাধারণ নিয়মে বিন্দু বাপের বাড়ি আসিয়াছে, এতে আশ্চর্য হওয়াব কিছুই নাই, এমনি ভাব দেখাইল কুসুম। বিন্দুর কাছে সে অনেক সময় আসিয়া বসে, নানা কথা বলিয়া বিন্দুকে ভুলইয়া বাখিতে চেষ্টা কবে। ও-সব পারে সে। সত্যমিথ্যা জড়াইয়া জমজমাট উপভোগ্য কাহিনি বচনা করিতে কুসুম অদ্বিতীয়া। অপরূপ ভ্রান্তি সৃষ্টি করিবার কৌশল সে জানে চমৎকার। বলে, শহর থেকে শখ করে গায়ে তো এলে ঠাকুরঝি, মরবে। ভুগে ম্যালেরিয়ায়। দুবার কঁপুনি দিয়ে জ্বর এলে বাপের বাড়িকে পেন্নাম কবে কর্তার কাছে ছুটবে তখন। গোপাল রাগাবাগি কবিল,--শশীর সঙ্গে তার কলহ হইয়া গেল। চেঁচামেচি করিয়া সে বলিতে লাগিল যে এমন কাণ্ড জীবনে সে কখনও দ্যাখে নাই। স্ত্রীকে মানুষ নিজের খুশিমতো অবস্থায় রাখিবে এই তো সংসারেব নিয়ম। মারধোর করিলে বরং কথা ছিল। কিছুই তো নন্দ করে নাই! যা সে করিযাছে বিন্দুর তাতে ববং খুশি হওয়াই উচিত ছিল। স্ত্রীকে ভিন্ন বাড়িতে হিবা-জহরত দিয়া মুড়িয়া বাখিয়া চাকর দারোয়ান রাখিয়া দিয়া কেহ যদি নিজের একটা খাপছাড়া খেযাল মিটাইতে চায়, স্ত্রীব সেটা ভাগ্যই বলিতে হইবে। স্বামীর সে অধিকার থাকিবে বইকী! মদ খায় নন্দ ? সংসারে কোন বড়োলোকটা নেশা করে না শুনি ? তখন বলিলেই হইত, অত কষ্টে বড়োলোক জামাই জোগাড় না। করিযা একটা হা-ঘরেব হাতে মেয়েকে সপিয়া দিত গোপাল, -টের পাইত মজাটা! কেন ওকে তুই নিয়ে এলি শশী! তোর এত কর্তালি করা কেন? ছেলেখেলা নাকি এ সব, আঁ? রেখে আয়াগে,--আজকেই চলে যা। তা হয় না। বাবা। আপনি সব জানেন না,-জানলে বুঝতেন ওখানে বিন্দু থাকতে পারে না। এতকাল ছিল কী করে ? সে কথা ভাবিলে শশীও কী কম আশ্চর্য হইয়া যায়। গোপাল মেয়েকে জিজ্ঞাসা করে, গয়নাগটি জিনিসপত্র কী করে এলি ? আনিনি বাবা কেন, আননি কেন ?