পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 8O Գ ভিতবে যাইতে শশীর পা উঠিতেছিল না। বিন্দু মরিয়া যাইতেছে? কেন মরিয়া যাইতেছে? সিন্ধু গুছাইয়া তাকে কিছু বলিতে পারিল না। তবু ব্যাপারটা অনুমান করিতে শশীর দেরি হইল না। সন্ধার সময় কী যেন বিন্দু খাইয়াছিল, তাই এখন মরিয়া যাইতেছে। শশীর বুকের ভিতবটা হিম হইয়া গেল। ডাক্তার মানুষ সে, এ রকম খবর পাইয়া জড়ভরতের মতো এখানে দাডাইয়া থাকা উচিত নয়, এ সব শশী বুঝিতে পারিতেছিল, তবু খানিকক্ষণ সে নড়িতে পারিল না। বিন্দু বিষ খাইয়াছে? মরিতে চায় বিন্দু ? পালকের জন্য শশীর যেন মনে হয় বিন্দুর এ ইচ্ছা সফল হইতে দিলে মন্দ হয় না। আলমারিতে কী বিষ ছিল শশী জানে, সন্ধ্যাব সময় বিন্দু যদি তাহ খাইয়া থাকে। ওকে সে বঁাচাইতে পরিবে। কিন্তু কী হইবে বাঁচাইযা ? বিন্দু ছেলেমানুষ নয়, জীবন সম্বন্ধে দুস্তপ্রাপ্য অভিজ্ঞতা তাহার, ভাবিয়া চিন্তিয়া দুঃখেব হাত এডাইবার চরম পন্থাই সে যদি অবলম্বন করা ঠিক করিয়া থাকে, বাধা দেওয়া কি উচিত হইবে ? কপালের ঘাম মুছিয়া, বাহিরের বিস্তৃত অঙ্গন পার হইয়া কুন্দর ঘরের পাশ দিয়া শশী অন্দরের অঙ্গনে আসিয়া দাডাইল। বিন্দু উঠানেই পড়িয়া আছে, নিজের বমির মধ্যে, বিস্রস্ত বসনে। বাড়ির সকলে এবং পাডার অনেকে চারিদিকে ভিড় করিয়া দাঁড়াইযা আছে। শশীকে দেখিয়া সকলে কলরব করিয়া উঠিল। মুখবা কুন্দ সকলের কণ্ঠ ছাপাইয়া বলিল, ও শশীদাদা, কী কাণ্ড করছে বিন্দুদিদি দেখুন। মদের তীব্ৰ গন্ধ শশীব নাকে লাগিতেছিল, সে বিহু লেব মতো জিজ্ঞাসা করিল, কী হয়েছে বে। কুন্দ ? কুন্দ বলিল, বিকেল থেকে যা কাণ্ড বিন্দুদিদি আরম্ভ করেছিল, যদি দেখতে শশীদাদা। এই হাসে এই কঁাদে, এখুনি আবার গান ধরে দেয়-ভয়ে তো আমাদের হাত পা সেঁদিয়ে গেল পেটের মধ্যে। কী করেছে জানেন? আপনার ওষুধের আলমারি খুলে— আব্ব কিছু শুনিবাব দরকার ছিল না। শশী বিন্দুর কাছে গিয়া বসিল। নাড়ি দেখিয়া কুন্দকে বলিল, এখানে এমন করে পড়ে আছে, ধুইয়ে মুছিয়ে ঘরে নিয়ে শুইয়ে দিতে পারলি না তোরা (कठे ? কৃন্দ কৈফিয়ত দিয়া বলিল, ধরতে গেলে কামড়াতে আসে যে! শশী বলিল, এখন তো কুঁশও নেই কুন্দ ? এক কলসি জল নিয়ে আয়! বিন্দুকে শশী স্নান করাইয়া দিল। তারপর কযেকজনের সাহায্যে ধরাধরি করিয়া ঘরে শোয়াইযা দিল । এও একটা কলঙ্ক বইকী! কদিন গ্রামে খুব একচেটি হইচই হইযা গেল। ভদ্র-পরিবারের অন্তঃপুবে এ কী বিসদৃশ কাণ্ড । পুরুষ মানুষ মদ খায, মাতলামি করে, বমি করিয়া ভাসাঁইয়া দেয়, লোকে নিন্দা করে কিন্তু আশ্চর্য হয় না। বাড়ির মেযে এমন বীভৎস ব্যাপারের নায়িকা হইতে পারে তা যে কল্পনা কাবাও যায় না! যারা উপস্থিত থাকিয়া বিন্দুর মাতলামি দেখিতে পায় নাই তারা আপশোশ করিয়া মরে,-সকলকে বিস্তারিত বর্ণনা শুনাইতে শুনাইতে প্রত্যক্ষদশীদের হয় সুখকর প্রাণান্ত। পরদিন সকালবেলা তাহার কোধের আগুন দাউদাউ করিয়া জ্বলিয়া উঠিল। বিন্দুকে আনিবার অপরাধে শশীকে সে গালাগালি করিলা অকথ্য, চিৎকার করিয়া বিন্দুকে সে বারবার বলিল দূর হইয়া যাইতে। এমন হতভাগা যে মেয়ে, গোপালের বাড়িতে তার একদণ্ডও ঠাই। হইবে না। শশী নির্বাক হইয়া