পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী 8S শুধু যে কথা বলিল না তা নয়, তাহার বর্তমান বিযঃ মানসিক অবস্থায় এ ব্যাপারটা এমন গুরুতর আকার ধাবণ করিল যে সে আরও মনমরা হইয়া গেল, এবং কয়েকদিন পরেই শ্যামাকে শোনাইয়া আবোলতাবোেল কী যে সব কৈফিযত দিতে লাগিল শ্যামা কিছুই বুঝিল না। শীতল ফাজলামি আরম্ভ কবিয়াছে ভাবিয়া সে রাগিয়া গেল। শীতল অনুতপ্ত বিযঞ্জ ও নম্র হইয়া না থাকিলে এতটা বাড়াবাড়ি করিবাব সাহস হযেতো শ্যামাব হইত না, শীতলও বাগিয়া উঠিয়া অনেকদিন পরে শ্যামাকে একটা চড় বসাইয়া দিল, তাপপর সেই যেন মাব খাইয়াছে এমনি মুখ কবিয়া শ্যামাব আশেপাশে ঘণ্টাখানেক ঘোরাঘুরি করিয়া বাহিব হইয়া গেল। বাডি ফিরিল একদিন পরে। এতকাল পরে আবাব মারা খাইযা শ্যামাও নম্র হইয়া গিয়াছিল, শীতল বাড়ি ফিরিলে সে যেভাবে সবিনয় আনুগত্য জানাইল, প্রত্নতা স্ত্রীবাই শুধু তাহা জানে এবং পারে। তবু অশান্তির অন্ত হইল না। পবস্পরকে ভযা করিয়া চলার জন্য দারুণ অস্বস্তির মধ্যে তাতাদের দিন কাটিতে লাগিল। শ্যামা বলে, বেশ ভদ্রতা কবিয়াই বলে, তুমি এমন মন খারাপ করে আছ কেন ? শীতলও ভদ্রতা কবি যা বলে, টাকাটা যদিন না শোধ হচ্ছে শ্যামাহঠাৎ মাসিক উপাৰ্জন একেবারে অর্ধেক হইযা গেলে চাবিদিকে তাহাব যে ফলাফল ফুটিয়া ওঠে, চোখ বুজিয়া থাকিলেও খেয়াল না কবিয়া চলে না। স্বামী-স্ত্রীব মধ্যে যেন একটা শত্ৰুতার সৃষ্টি হইতে থাকে { শেষে শ্যামা একদিন বুক বাধিয়া টাকা তুলিবাব। ফর্মে নাম সই করিয়া তাহার সেভিংস ব্যাংকেবা খাতাখানা শীতলেব হাতে দিল। খাতায্য শুধু জমাব। অওক পাত কবা আছে, সত্যভামাকে দিযা পাঁচটি সাতটি কবিয টাকা জমা দিয়া শ্যাম শ-পাঁচেক টাকা করিয়াছে, একটি টাকা কোনোদিন তোলে নাই। টাকাটা তুলে কমলবাবুকে দাও গে, ধাবটা শোধ হয়ে যাক, টাকা থাকতে মনেব শান্তি নষ্ট কবে কী হবে ? আস্তে আস্তে আবার জামবেখন। খাতাখানা লইয়া শীতল সেই যে গেল, সাত দিনের মধ্যে আর সে বাড়ি ফিরিল না। শ্যামা যে বুঝিতে পাবিল না তা নয, তবু এ কি বিশ্বাস কবিতে ইচ্ছ। 2য যে তার অত কষ্টের জমানো টাকাগুলি লইয়া শীতল উধাও হইয়া গিযাছে? একদিন বিষ্ণুপ্রিয় , বাড়ি গিয়া শ্যামা কমল প্রেসে লোক পাঠানোর ব্যবস্থা কবি যা আসিল। সে আসিয়া খবর দিল প্রেসে শীতল যায় নাই। শীতল গাড়ি চাপা পিডিয়াছে অথবা তাহাব কোনো বিপদ হইয়াছে একবাবও তােহা ভাবে নাই, কিন্তু বিষ্ণুপ্রিযা শীতলকে ভালোবকম চিনিত না বলিয়া হাসপাতালে থানায় আর খবরের কাগজের আপিসে খোজ করাইল। গাড়ি-টাড়ি চাপা পডিয়া থাকিলে শীতলের একটা সংবাদ পাওয়া যাইত শ্যামাকে এই সাত্মনা দিতে আসিয়া বিষ্ণুপ্রিয়া অবাক হইয়া বাড়ি গেল। শ্যামা যেভাবে তার কাছে স্বামীনিন্দা করিল। ছোটোেজাতের স্ত্রীলোকের মুখেও বিষ্ণুপ্রিযা কোনোদিন সে সব কথা শোনে নাই। বিধান জিজ্ঞাসা করে, বাবা কোথায় গেছে মা ? শ্যামা বলে, চুলোয়। শ্যামা রাধে বাডে, ছেলেমেয়েদের খাওয়ায়, নিজেও খায়, কিন্তু বাঘিনির মতো সব সময় সে যেন কাহাকে খুন করিবার জন্য উদ্যত হইয়া থাকে। জ্বালা তাহার কে বুঝিবে ? তিনটি সন্তানের সে জননী, স্বামীর উপর তাহার নির্ভর অনিশ্চিত!! একজন পরম বন্ধ তাহার ছিল,-রাখাল। সে তাহাকে ঠিকাইয়া গিয়াছে, স্বামী আজ তাহার সঞ্চয় লইয়া পলাতক। বোকার মতো কেন যে সে সেভিংস ব্যাংকের খাতাখানা শীতলকে দিতে গিয়াছিল! রাত্রে শ্যামার ঘুম হয় না। শীতের রাত্রি, ঠান্ডা লাগিব।ার ভয়ে দরজা জানালা বন্ধ করিয়া দিতে হয়, শ্যামা একটা লণ্ঠন কমাইয়া রাখে, ঘরের বাতাস দূষিত