পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in 8 SO মানিক রচনাসমগ্র শশী বলিল, পারব। কাল দিন ভালো আছে, কালকেই তবে রওনা হয়ে যাও। তাই হােক। যাইতে যদি হয় বিন্দুকে, কাল গেলে কোনো ক্ষতি নাই। বিন্দুকে শশী কথাটা তখনই শুনাইয়া দিল। বিন্দু একটু হাসিল। তাই চলো দাদা, সেই ভালো। শশী বলিল, এমন জানলে তোকে আমি আনতাম না বিন্দু। শুধু কষ্ট পেলি, ওদিকে নন্দ রেগে রইল, কোনো লাভ হল না। বিন্দু বলিল, লাভ হল বইকী দাদা! চলে না এলে কী করে বুঝতাম। ওখানে ওমনি ভাবে থাকা ছাড়া আমাব গতি নেই? এবার আর কিছু না হোক, মুক্তির কল্পনা করে অযথা ব্যাকুল হব না। হয়তো এবার মনও বসবে। হয়তো এবার খুব সুখেই থাকব। বিদায় নেওয়া ঠিক হইয়া গেল বলিয়া বোধ হয় বিন্দু এতদিন পরে গ্রামের দিকে চাহিয়া দেখিল,--আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে মেলামেশা করিল। সেদিনকার কাণ্ডেব পর সকলেব সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করিতে আজ বিন্দুর সংকোচ হওয়া উচিত ছিল। এ বাড়ির উঠানে নিজের বমির মধ্যে সে যে একদিন গড়াগড়ি দিয়াছিল, সকলের সঙ্গে হঠাৎ তাহাব অবাধ অকুণ্ঠ ব্যবহার দেখিয়া মনে হইল না সে কথা বিন্দুর স্মবণ আছে। রান্নাঘরে কুন্দর ছেলেকে কোলে করিয়া বসিযা অনেকক্ষণ সে সকলের সঙ্গে গল্প করিল, হাসিল পর্যন্ত। সে যেন স্বামীর গৃহে সহজ ও সাধারণ বধূজীবন যাপন করিয়া বহুদিন পবে বাপের বাড়ি আসিযাছে—জীবনে তাহাব গ্লানি নাই, অস্বাভাবিকতা নাই, --মনভবা তাহাব নির্মল আনন্দ । খবর পাইয়া পাড়াসুদ্ধ মেয়েরা বিন্দুকে দেখিতে আসিল। অনেকে তাহাবা বিন্দুকে জন্মাইতে দেখিয়াছে। বিন্দু আজ তাদের কাছে আকাশের পরির চেয়েও রহস্যময়ী। অনেক দিন আগে একবার আসিয়া গ্রামকে সে চমকাইযা দিয়াছিল, এবারও দিয়াছে। আবার সে ফিরিয়া যাইতেছে তাহাব অজ্ঞাত রহস্যময় প্রবাসে, তাদের গায়ের মেয়ে বিন্দু। কুসুম এবং পরানও আসিল। কুসুম চুপিচুপি বিন্দুকে বলিল, বডড যে হাসিখুশি দিদি ? বিন্দু বলিল, বরেব কাছে যাব যে ভাই। —শীর্ণ মুখে সে অকথ্য হাসি হাসিল। আবার কবে আসবে ? আর তো অ্যাসব না। বাউ । পরান শশীকে বলিল, মতিদের খোজ করবেন। ছোটােবাবু ? শশী বলিল, কবব বইকী। বৈশাখ মাস পড়ল না? বৈশাখ মাসে কুমুদ সরস্বতী অপেরায যোগ দেবে বলেছিল। পরান। দলটিাব ঠিকানা অবশ্য আমি জানি না, তবে খোঁজ পেতে কষ্ট হবে মনে হয় না । খবর যদি পান ছোটােবাবু, মতিকে নিয়ে আসবেন। দুমাস হল গেছে, ছেলেমানুষ তো, কঁদোকাটা করছে হয়তো । দুমাস হইয়া গিয়াছে? তাই তো বটে! পরানের মুখের দিকে শশী চাহিতে পারে না। দুমাস হইল মতি গ্রামছাড়া, এর মধ্যে একটা খবরও আসে নাই। টাকা চাহিয়াও কুমুদ যদি একখানা পত্র লিখিত! যদি দেখা হয়, কুমুদের সঙ্গে একটা বোঝাপড়া করিতে হইবে। বুঝাইয়া দিতে হইবে সে কত বড়ো দায়িত্বজ্ঞানহীন রাসকেল। আচ্ছা, মতি তো একখানা চিঠি লিখিতে পাবিত তাহার আঁকাবঁকা অক্ষরে ? কেন লিখিল না ? কুমুদের সঙ্গে খেলা করিয়া সময় পায় না ? এ ক্ষমতা কুমুদের আছে,-মানুষকে সে আত্মভোলা