পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 8 SS করিয়া দিতে পাবে। তা ছাড়া, হয়তো কুমুদ যেমন বিবরণ দিয়াছিল। তেমনই অসম্ভব অবাস্তব ভালোবাসা সত্যসত্যই মতির বুকে আসিয়াছে, কাব্যে যেমন লেখে মিলনের তেমনই অতল উচ্ছল আনন্দে মতি বিশ্বসংসার ভুলিয়া গিয়াছে? শশী একটু হাসে। মতিকে উপন্যাসের নায়িকার মতো ভাবিতে আরম্ভ করিয়াছে, সে তো কম কল্পনাপ্রবণ নয়! পরদিন বিন্দুকে সঙ্গে করিয়া শশী কলিকাতা রওনা হইয়া গেল। দিন এবং রাত্ৰি কাটিল পথে, কথা তাহাবা বলিল খুব কম। কে ভাবিয়ছিল এ ভাবে বিন্দুকে আবার ফিরাইয়া দিতে হইবে। বিন্দুর বাডির সেই ফরাশ-পাত, তবলা তাকিয়া ও কুদৃশ্য ছবিতে সাজানো ঘরখানা শশীর মনে ভাসিয়া বিন্দু কেন সেদিন বিষ খাইল না ? বেলা প্রায় দশটাব সময় তাহারা বিন্দুর বাড়ি পৌছিল। দারোয়ান খুব ঘটা করিয়া সেলাম করিল। বিন্দুকে, বিন্দুব দাসী একগাল হাসিল। নন্দ নামিয়া আসিল, নির্লজ্জ অকুণ্ঠ নন্দ। হাসিমুখে শশীকে অভ্যর্থনা করিয়া সে বলিল, এসো এসো, আসতে আজ্ঞা হোক। শশী বলিল, আসতে পারব না। নন্দ। কাজ আছে! বিন্দু মিনতি করিয়া বলিল, একটু বসে যাবে না। দাদা? কাজ আছে বিন্দু। কবিল না, শুধু বলিল, গাঁযে ফেরার আগে যদি সময় পাও, একবারটি খপিব নিয়ে যেয়ো। বিন্দু ভিতরে চলিযা গেল। শশীর গাড়ি চলিতে আরম্ভ করিবে, গাড়োয়ানকে থামিতে বলিয়া নন্দ কাছে আগাইযা আসিল। শশীর মনে হইল নন্দ খুব রোগ হইয়া গিয়াছে, চোখে রাত-জাগার চিহ্ন। খপর নিতে বোধ হয় আসবে না?—নন্দ জিজ্ঞাসা করিল। কী করে বলি ? সময় পাব না হয়তো।--বলিল শশী । নন্দ একটু ভাবিল, এলে ভালো করতে শশী। ওকে কাল বাড়ি নিয়ে যাব ভাবছি।--মা ওরা সব যে বাডিতে আছেন সেইখানে। এ বাড়িটা বেচে দেব। নতুন লোকোব মধ্যে গিয়ে পড়ে একটু হয়তো বিব্রত হয়ে পড়বে—তুমি গিয়ে দেখা করলে ভালো লাগবে ওর—মন বসতে সাহায্য হবে। শশী অবাক হইযা বলিল, বিন্দুকে বাডি নিয়ে যাবে? নন্দ বলিল, তাই ভাবছিলাম। এখানে যখন থাকতে চায় না, বাড়িই চলুক ! একবার তোমাব সঙ্গে চলে গেল, পবের বার যদি জন্মের মতো আমাকে ত্যাগ করে বসে ? কী জন শশী, বুড়ো বয়সে এ সব হাঙ্গামা ভালো লাগে না। এখানে নিজের মনে কত আরামে ছিল,—ভিড় নেই, ঝঞ্ঝাট নেই, সব বিষয়ে স্বাধীন। তা যদি ভালো না লাগে, চলুক। তবে যেখানে থাকতে ভালো লাগবে সেইখানে--- আমার কী? আমি কাজের মানুষ, কাজ নিয়ে থাকি নিজেব। এ সুবুদ্ধি তোমার আগে হল না কেন নন্দ ? নন্দ হঠাৎ এ কথার জবাব দিতে পারিল না। তারপর ছেলেমানুষের মতো বলিল, আগে কী করে জানিব যে পালিয়ে যাবে? বেশ তো হাসিখুশি দেখতাম। শশী একবার ভাবিল, নন্দকে বুঝাইযা এ মতলব ত্যাগ করিতে বলে। সাত বছর ধরিয়া যে অন্যায় সে করি যা আসিয়াছে, আজ অসময়ে কেন তার প্রতিকারেব চেষ্টা ? চেষ্টা সফল হইবার সম্ভাবনাও নাই। ঘোমটা টানিয়া বিন্দু আজ এতকাল পরে শাশুড়ি ননদ সতিনের সংসারে নিরীহ