পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in 8 SqO মানিক রচনাসমগ্ৰ ওদিক দিয়া ঘুরিয়া শশী বাড়ির ভিতরে গেল। মেয়েরা দল বঁধিয়া আসিতে শুরু করিয়াছিল, পাগলদিদি দরজা খোলেন নাই। শশীর ডাকাডাকিতে দুয়ার খুলিয়া দিলেন, কঁাদিয়া বলিলেন, ও শশী, এমন সর্বনাশ কেন করলি আমার, কেন রটালি ও কথা ? শশী বিবর্ণমুখে বলিল, আমি তো ও কথা রটাইনি পাগলদিদি ! পাগলদিদি বলিলেন, একদল লোক সঙ্গে নিয়ে শ্ৰীনাথ এসে কেঁদে পড়ল। শশী, বলল তুই নাকি বলেছিস ওঁর নিজের মুখে শুনে গেলি এবার রথের দিন-- এবার রথের দিন ? আমি তো বলিনি পাগলদিদি! পণ্ডিতমশায় স্বীকার করলেন ? পাগলদিদি সায় দিলেন। শশী ব্যাকুল হইয়া পলিল, কেন তা করলেন ? এ কী পাগলামি! পণ্ডিতমশায বলতে পারলেন না। এবারকার রথের কথা বলেননি ? কই তা বললেন ? হাসিমুখে মেনে নিলেন। কী হবে এবার? বাহিরের কলরব ভাসিয়া আসিতেছিল, শশী দরজাটা ভেজাইয়া দিল। সমস্ত ব্যাপারটা এমন দুর্বোধ্য মনে হইতেছিল শশীর! যাদবের সম্বন্ধে এ বকম একটা জনরব একেবারেই বিস্ময়কর নয়, মাঝে মাঝে র্তার সম্বন্ধে অনেক অদ্ভুত কথা রটে । যাদব সমর্থন করিলেন কেন ? মাথা তো খারাপ নয় যাদবের, পাগল তো তিনি নন! একদল লোক সঙ্গে করিয়া শ্ৰীনাথ আসিয়া কঁদিয়া পড়িল, অমনি কোনো কথা বিবেচনা করিয়া যাদব স্বীকার করিয়া বসিলেন যে আগামী রথের দিন তিনি স্বেচ্ছায় মরিবেন? এরকম স্বীকারোক্তির ফলাফলটা একবার ভাবিয়া দেখিলেন না ? কে জানে কী হইবে এবার! রথের দিন যাদব যদি না মরেন, মানুষের কাছে মিথ্যাবাদী হইয়া থাকিতে হইবে তাকে, তার সিদ্ধিতে তার শক্তিতে লোকের বিশ্বাস থাকিবে না,--যাদবেব কাছে তাহা মৃত্যুর চেযে শতগুণে ভয়ংকর। মানুষের অন্ধ ভক্তি ছাড়া বঁচিয়া থাকিবার আর তো কোনো অবলম্বন.তাহার নাই! একথা যাদব কেন স্বীকার করিয়া লইলেন ? বলিলেই হইত এ শুধু জনরব, ভিত্তিহীন গুজব। যাদবের কথা কে অবিশ্বাস করিত ? রথের তো বেশি দিন বাকি নাই। সেদিন যাদব কেমন করিয়া মরিকেন ? না। মরিলে কেমন কবিয়া মুখ দেখাইবেন গ্রামে ? অনেকক্ষণ পরে ব্লকান্ত যাদব বিশ্রামের জন্য ভিতরে আসিলেন। কয়েকটি ভক্তও সঙ্গে সঙ্গে ভিতরে আসিতেছিল, বুঢ়ভাবে ধাক্কা দিয়া তাহাদের বাহির করিয়া করিষা কানি সদর দরজা বন্ধ করিয়া দিল। ভিড়ে, গরমে যাদব ঘামিয়া বিবৰ্ণ হইয়া গিয়াছিলেন, পাগলদিদি তাড়াতাড়ি পাখা আনিয়া বাতাস করিতে লাগিলেন। ফোকলা মুখের চিরন্তন হাসিটি তাহার নিভিয়া গিয়াছে। দুচোখ ভরা জল-বার্ধক্যের স্তিমিত দুটি চোখ। এ কী করলেন পণ্ডিতমশায় ? স্বীকার করলেন কেন ? ব্যাকুলভাবে শশী জিজ্ঞাসা করিল। কেন করলাম ? রথের দিন মরব। যে আমি ! বলিনি তোমাকে ? শান্তভাবে জবাব দিলেন যাদব। এবারকার রথের কথা তো বলেননি। আমাকে ? বলেছিলাম। বইকী। এবারকার রথের কথাই বলেছিলাম। তুমি এত বিচলিত হচ্ছে কেন শশী ? আমার কাছে কি জীবন মরণের ভেদ আছে? গুরুর কৃপায় সূর্যবিজ্ঞান যেদিন আয়ত্ত হল, যেদিন সিদ্ধিলাভ করলাম, ও পার্থক্য সেদিন ঘুচে গেছে। শশী। এমনি হিসােবও যদি ধর, মরবার বয়েস কি আমার হয়নি ? শশী কাতর হইয়া বলিল, আমার জন্যেই এ কাণ্ড হল। আমার যে কী রকম লাগছে। পণ্ডিতমশায়--