পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 8 Sa কুসুমের বাবা অনন্ত আপশোশ করিয়া বলিল, কত কাল যাওয়া হয়নি, তোর মা কঁদোকাটা করেন। কুসি। দুটাে দিন। বরং দেখে যাই, ব্যথাটা যদি কমে। কুসুম বলিল, দুচার দিনে এ ব্যথা কি কমবে বাবা ? কোমরের ব্যথায় নড়তে পারি না। হাড়টাড কিছু ভেঙেছে নাকি কে জানে! হাতটা সত্যই মচকাইয়া গিয়াছিল। শশী আসিয়া পরীক্ষা করিবার সময় এক ফঁাকে জিজ্ঞাসা করিল, ইচ্ছে করে পড়নি তো বউ ? কী যে বলেন ছোটোবাবু! ইচ্ছে করে পড়ে কেউ কোমর ভাঙে ? হাতে তবে তোমার কিছু হয়নি, শুধু কোমর ভেঙেছে না ? হাতও ভেঙেছে।--কুসুম বলিল। কুসুম রাগিয়া বলিল, আবার কী ফুলবে ছোটােবাবু, ফুলে কি ঢাক হবে ? পবদিন দুপুরবেলা আকাশ-ঢাকা মেঘে চারিদিক অন্ধকাব হইয়া আসিয়াছিল। শশী বসিয়াছিল নিজের ঘরে। গ্রামান্তবে রোগী দেখিতে যাইবার কথা ছিল, মেঘ দেখিয়া বাহির হয় নাই। নানা কথা ভাবিতে ভাবিতে জোবে বৃষ্টি নামিয়া আসিল। পরীক্ষণে আসিল কুসুম। হাতের ব্যথা সহিতে না পারিষা ওষুধ লাহতে আসিয়াছে। শশী বলিল, হাতে এমন কী ব্যথা হল যে এই বৃষ্টি মাথায় করে ওষুধ নিতে এলো? এলেই বা কী করে ? কোমর না তোমার ভেঙে গেছে? কুসুম অস্পষ্টভাবে বলিল, কষ্ট করে এলাম। কেন তা এলে ? বিকেলে আমিই তো যেতম। সইতে পারি না ছোটােবাবু। এবার শশী একটু বিবৰ্ণ হইয়া গেল। চিরকাল এমন ভাবে চলিবে না। সে জনিত, একদিন ছেলেখেলায় আর কুলাইবে না। তবু, এমন বাদলায় কুসুম বোঝাপড়া করিতে আসিল ? কুসুমকে দোষ দেওয়া যায় না। ভাসা ভাসা হালকা ভাবের আড়াল দিয়া এই দিনটিকে এড়াইয়া চলিবার চেষ্টা বড়ো নির্মম। কুসুম যে এতদিন সহ্য করিয়াছে তাই আশ্চর্য। যাই থাক তার মনে, কুসুমের কী আসিয়া যায়? সে কেন চিরকাল তার ভীরু নীরবতাকে প্রশ্রয় দিয়া যাইবে? দীর্ঘকাল ধরিয়া কুসুমের প্রতি নিজের অন্যান্য ব্যবহার মনে করিয়া শশীর লজ্জা বোধ হইল। মৃদুস্বরে সে বলিল, কিছু মনে কোরো না বউ, আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল। কুসুম কথা বলিল না। শশী যেন তাতে আরও বিবৰ্ণ হইযা গেল। জানােলা দিয়া ঘরে ছাঁট আসিতেছিল। উঠিয়া জানালাটা বন্ধ করিয়া এতক্ষণে সে হঠাৎ অত্যন্ত বেখাপ্পা ভদ্রতা করিয়া বলিল, বোসো না বউ, বোসো ওইখানে। কুসুম বসিল এবং বসিয়া যেন বঁচিল। শশী আরও মৃদুস্বরে বলিল, অনেক দিন থেকে তোমায় কটা কথা বলব ভাবছিলাম বউ। বলি বলি করে বলতে পারিনি। বলা কিন্তু দরকার,--নয় ? আমরা ছেলেমানুষ নই, ইচ্ছে হলেই একটা কাজ কি আমরা করতে পারি? বুঝে সুঝে করা দরকার। এক তো দাখো পরান আমার বন্ধ, উপকার করতে গিয়ে চিরকাল ওর শুধু অপকারই করেছি। তবু, তাও আমি গ্রাহ করতাম না বউ। এই বৃষ্টিতে তুমি এলে, তোমার কাছে সরে বসতে না পেরে আমার যা কষ্ট হচ্ছে কারও মুখ চেয়ে আমি তা সইতাম না। কিন্তু আমি গাঁয়েই থাকব না। বউ। আজ বাদে কাল চলে যাব বিদেশে, আর কখনও ফিরব না। এ রকম অবস্থায় একটু মনের জোর করে