পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in 8 ՀԵ মানিক রচনাসমগ্র কুসুম হঠাৎ মুখ তুলিয়া বলিল, হাতে ব্যথা বলে ওষুধ নিতে এলাম, এ সব আমাকে কী 6sान्माCDछ्न्म ? শশী থতোমতো খাইয়া গেল। তারপর শূন্ধস্বরে বলিল, কী বললে? ওষুধ নিতে এসেছ? হাতটার ব্যথা সইতে পারি না ছােটােবাবু। শশী স্নান মুখে বলিল, হাতের ব্যথার ওষুধ তো জানি না বউ ; মালিশের ওষুধ যা দিয়ে এসেছি তাই মালিশ করো গে।—কী করে যাবে এই বৃষ্টিতে? কী করে এলাম ?—বলিয়া কুসুম দরজা খুলিয়া বৃষ্টির মধ্যে নামিয়া গেল। চলন দেখিয়া মনে হইল না। কাল সে কোমরে চোট পাইয়া শয্যাগত ছিল। শশীর মনে বর্ষার মতো বিষন্নতা ঘনাইয়া আসে। কুসুম শেষে এমন দুর্বোধ্য হইয়া উঠিল। সে কত আশা করিয়াছিল কুসুম ধীর শান্তভাবে তার সমস্ত কথা শুনিবে, সমস্ত বুঝিতে পরিবে। কোথাও এতটুকু না-বোঝার কিছু না থাকায় তাদের দুজনের কারও মনে দুঃখ থাকিবে না, অভিমান থাকিবে না, লজ্জাও থাকিবে না। বোঝাপডা শেষ হইবে গভীর অন্তরঙ্গতায়,--নিবিড় সহানুভূতিতে। তার বদলে এ কী হইল? ভাবিয়া ভাবিয়া শশীর মনে হইল, গ্ৰাম্য মন কুসুমের, কিছু তার বুঝিবার ক্ষমতা নাই। পরদিন পরানের কাছে সে খবর পাইল, কুসুমের হাত আর কোমরের ব্যথা কমিয়াছে, কাল সে বাপের বাড়ি যাইবে। কদিন থাকবে বাপের বাডি ? বলছে তো পুজো পেরিয়ে আসবে। কদিন থাকে এখন। তোমার কষ্ট হবে পবান।—শশী বলিল। পরান গম্ভীর মুখে বলিল, কীসের কষ্ট, দুবেলা ভাত দুটাে মা-ই ফুটিয়ে দিতে পারবে। ভেবে চিন্তে আমিই এক রকম পাঠাচ্ছি ছোটােবাবু। বাপের বাড়ি যেতে না পেলে মেয়েমানুষেৰ মাথা বিগড়ে যায়। রাত্রে কিছু ঠিক ছিল না, ভোর রাত্রে গোবর্ধন এবং আরও দুজন মাঝিকে তুলিয়া শশী বাজিতপুর যাইবে বলিয়া বাহির হইয়া পড়িল। এক বাজিতপুব যাইতে বড়ো নীেকা সে ব্যবহার করে না, ছোটাে নৌকায় গোবর্ধন একাই তাহাকে লইয়া যায়। আজ তাহার বড়ো নীেকাটির প্রয়োজন হইল কেন কেহ বুঝিতে পারিল না। বিছানা পাতিযা, জলের কুঁজো, বাড়ির তৈরি খাবার ভবা টিফিন ক্যারিয়ার, এক ডালা পাকা আম, চায়ের সরঞ্জাম, ওষুধের ব্যাগ প্রভৃতি নীেকায় তুলিয়া গোবর্ধন সব ঠিক করিয়া ফেলিল। শশী। কিন্তু নীেকা খুলিল না। তীরে দাঁড়াইয়া টানিতে লাগিল সিগারেট । রোদ উঠিবাব পর কুসুমের ডুলি আসিল ঘাটে। সঙ্গে অনন্ত আর পরান। শশীকে দেখিয়া পরান বলিল, ছোটােবাবু যে এখানে ? শশী বলিল, বাজিতপুরে যাব পরান। তোমাদের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। তোমাদের ও ছোটাে নৌকায় এদের গিয়ে কাজ নেই, বাজিতপুর পর্যন্ত আমার নৌকায় চলো। সেখানে ভালো দেখে একটা নীেকা ঠিক করে দেব। তাই হোক। কারও আপত্তি নাই। পরানকে ধরিয়া কুসুম শশীর নীেকায় উঠিল। তার তোরঙ্গ, বেঁচেক ও অন্য সব জিনিস তোলা হইলে শশী বলিল, তুমি ছই-এর মধ্যে বিছানায় বসবে যাও বউ। সামনের দিকে এগিয়ে বোসো তাহলে চাদিক দেখে দেখে যেতে পারবে।