পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী 8v) আবার সাজগোজ করে, তবে আগের মতো দেহের চাকচিক্য তাহাব নাই, এখন চকচক করে শুধু গহনা,--- অনেকগুলি। ভাবিয়া চিন্তিয়া শ্যামা বিধানকে শঙ্করের স্কুলেই ভর্তি করিয়া দিল। শঙ্কর বিষ্ণুপ্রিয়ার খুড়তুতো বোনের ছেলে, এবাব সেকেন্ড ক্লাসে উঠিযাছে। বয়সের আন্দাজে ছেলেটা বাড়ে নাই, বিধানের চেয়ে মাথায সে সামান্য একটু উঁচু, ভারী মুখচোবা৷ লাজুক ছেলে, গায়ের রংটি টুকটুকে। যত ছােটাে দেখাক সে সেকেন্ড ক্লাসে পডে, স্কুলের অভিজ্ঞতাও তাহার আছে, বিধানকে শ্যামা তাহার জিম্মা করিয়া দিল, চিবুক ধরিয়া চুমা খাইয়া ছেলেকে দেখাশোনা করার জন্য শ্যামা তাহাকে এমন করিয়াই বলিল যে লজান্য শঙ্কবেবী মুখ রাঙা হইযা গেল। সারাদিন শ্যামা অন্যমনস্ক হইযা বহিল। ভাবিবার চেষ্টা কবিল, বিধান স্কুলে কী করিতেছে। শ্যামাব একটা ভয ছিল স্কুলে বডোলোকের ছেলেব সঙ্গে বিধান মানাইয়া চলিতে পরিবে কিনা, গবিবের ছেলে বলিযা ওকে সকলে তুচ্ছ করিবে না তো? একটা ভরসার কথা শঙ্করের সঙ্গে ওর ভাব হইযাছে, শঙ্কবেল বন্ধ বলিয়া সকলে ওকে সমানভাবেই হয়তো গ্ৰহণ করিবে, হাসিতামাশা কবিবে না। ফাঙ্গুনেব দিনটি আজ শ্যামাব বডো দীর্ঘ মনে হয। একদিনের জন্য ছেলে তাহার বাড়ি ছাডিয়া কোথাও গিয থাকে নাই, অপবিচিত স্তানে অচেনা ছেলেদের মধ্যে দশটা হইতে চারটে পর্যন্ত সে কী মবিয়। একটিাইলে কে জানে। বিকালে বিধান ফিবিযা আসিলে শ্যামা তাহার মুখখানা ভারী শুকনো দেখিল। টিফিনের সময় খাবার কিনিয়া খাওযাব জন্য শ্যামা তাহাকে চাব আনা পয়সা দিয়াছিল, বিধান লজায় কিছু খাইতে পাবে নাই ভাবিযা বলিল, ও খোকা, মুখ শুকিয়ে গেছে কেন রে ? খাসনি কিছু কিনে টিফিনেব সময় ? বিধান বলিল, খেয়েছি তো, পেট ব্যথা কবছে মা। শ্যামা বলিল, কেন খোকা, পেট ব্যথা কবছে কেন বাবা ? কী খেয়েছিলি কিনে ? পেটেব ব্যথায়ী বিধান নানারকম মুখভঙ্গি করে। চোখে জল দেখা দেয়। শামা ধমক দিমা বলে, কী খেযেছিলি বল। ফুলুবি। আর কি ? আবে ঝালবড়া। তাহলে হবে না তোমার পেট ব্যথা, মুখপোড়া ছেলে! রাজ্যে এত ভালো ভালো খাবার থাকতে তুমি খেতে গেলে কিনা ফুলুরি। আব্ব ঝালবড়া! কেন খেতে গেলি ও সব— ? শঙ্কর খাওয়ালে মা। শঙ্কব বলে, বাডিতে ও সব তো খেতে দেয় না, শুধু দুধ আর সন্দেশ খেযে মর, তাই--- শঙ্কব ছেলেটা তো তবে কম দুষ্ট নয়? বাড়িতে যা নিষেধ করিয়া দেয় চুরি করিয়া তাই করে? ওব সঙ্গে মেলামেশা কবিয়া বিধানের স্বভাব খারাপ হইয়া যাইবে না তো! শ্যামার প্রথমে ভাবী ভাবনা হয়, তাবপর সে ভাবিয়া দ্যাখে যে লুকাই; ফুলুবি আব্ব ঝালবড খাওয়াটা খুব বেশি খারাপ অপরাধ নয, এ বকম দুষ্টমি ছেলেরা করেই। তবু মনটা শ্যামার খুঁতখুঁত করে। ছেলেকে সে নানারকম উপদেশ দেয়, অসংখ্য নিষেধ জানায়। কাজ করিতে করিতে হঠাৎ একটা কথা মনে পড়িয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ছেলেকে কাছে ডাকিয়া বলে, এ যেন তুমি কখনও কোরো না বাবা, কখনও নয়। কেন মা ?-বিধান বলে। প্রত্যেকবাব। একদিন মন্দার একখানা পত্ৰ আসিল, খুব দরদ দিয়া অনেক মিষ্টি-মিষ্টি কথা লিখিয়াছে। চিঠি পড়িয়া শ্যামা মুখ বাকাইয়া হাসিল, বলিল, বসে থাক তুমি জবাবের জন্যে হা-পিত্যেশ করে, তোমার