পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 8 VSS) এমনি কৌশলে শীতলকে বশ করিতে পারায় এবার সহজেই যথারীতি কমিটি গঠিত হইল । শীতলের গৃহে সভেরা একত্র হইয়া পরামর্শ করিতে লাগিলেন। মতান্তরের যে আশঙ্কা শশীব ছিল, দেখা গেল সেটা প্ৰায় অমূলক। মতান্তরেব ভয়টা তার চেয়ে ওদেবও বড়ো কম নয়। বিনয় ও নম্রতার মধ্যেও কোনো বিষয়ে শশীব দৃঢ়তা উকি দিলে শীতলও সে বিষয়ে আর প্রতিবাদ করেন। না, সংঘর্ষ বঁাচাইযা চলেন। সত্যহরি ও কেশব বুদ্ধ, অত্যন্ত নিরীহ মানুষ। ঠিক হইল, ফান্ড খুলিয়া চান্দা তোলা হইবে, যাদবের ভাঙা বাড়ি ও জমি বেচিয়া সাতগাঁ উখাল্লা ও গাওদিয়ার সংযোগস্থলে হাসপাতালের জন্য জমি কেনা হইবে। শীতলের সভাপতিত্বে একদিন গ্রামে একটা সভা হইয়া গেল। সভায় নিজের বক্তৃতা শুনি যা নিজেই শশী হইয়া গেল অবাক। কে জানিত সে এমন সুন্দর বলিতে পারে! সভায় যথেষ্ট উৎসাহ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হইয়াছিল বটে কিন্তু শেষের দিকে হঠাৎ মুষলধাবে বৃষ্টি নামায় উত্তেজনা একটু নরম হইয়া আসিল । ছেলেরা চাদরের প্রান্ত ধরিয়া অর্থ সংগ্রহের জন্য সভায় ঘুবিতে আরম্ভ করা মাত্র মেঘের অজুহাতে অনেকে বাডিও চলিযা গেল। প্রথমে অনেক ভয্য ভাবনা ছিল, এখন শশীব মন উৎসাহে ভবিয়া উঠিয়াছে। বড়ো কিছু কবিবাব জন্য যে আগ্রহ চাপা পিডিযা, তাহাকে উতলা করিয়া তুলিয়াছিল, তারই যেন একটা মুক্তি হঠাৎ তাহার জুটিযা গিয়াছে। সারাদিন জলকাদায় ছুটাছুটি করিয়া হিসাবের খাতপত্র বগলে বাডি ফিরিয়া সে গভীর শ্রান্তি ও নিসিােল তৃপ্তি অনুভব করে। জীবনে নতুনত্ব আসিয়াছে বৈচিত্ৰ আসিয়াছে। যাদবের কাছে সে বোধ করে কৃতজ্ঞতা। তাব সম্বন্ধে গ্রামবাসীর মনে যে দ্রুত পরিবর্তন আসিতেছে তাতেও শশী৷ এক উত্তেজনামমা আনন্দের স্বাদ পায়। এতদিন সে ছিল ডাক্তার, এবার যেন আপনা হইতে ছোটোখাটো একটি নেতা হইয়া উঠিতেছে। কাজের মানুষ বলিয়া গ্রামের ছেলেরা শশীকে এতদিন এড়াইয়া চলিত, এবার দল বাধিয়া আসিয়া কাজেব নামে হইচই করাব সুযোগ প্রার্থনা করিতেছে শশীব কাছে - এই বর্ষায় গাঁয়ে গায়ে শশীব নির্দেশমতো সকলে তাহারা চাঁদা সংগ্ৰহ কবিতে ছুটিয়া গেল। উখরাব পাশেব গ্রামে কীসের সভা হইবে, ডাক আসিল শশীর, কিছু বলা চাই। শুধু তাই নয, গ্রামের সামাজিক ব্যাপারের জটলায় জীবনে এবােব প্রথম ছেলেমানুষ শশীর আহ্বান হইল, সে গিয়া পৌছানো পর্যন্ত সভােব কাজ স্থগিত ও রাখা হইল। ফাঁবা বয়স্ক, শশীর বন্যাস যেন তারা ভুলিয়া গিযছেন। . কিন্তু সামাজিক ব্যাপারে শশী যোগ দিল না। সে জানে এ শুধু বার্ধকোব অস্থায়ী আবেগ, যৌবনের সঙ্গে দুদিনেব। অন্ধ সন্ধি। আজ যে কুঁকা ও কাশিব শব্দে মুখরিত সভায তাকে সম্মানের আসন দেওয়া হইবে, কাল সেখানে তার জুটিবে টিটকাবি। এদিকে গোপাল কেমন যেন মুষড়াইয়া গেল। হাসপাতাল সংক্ৰান্ত কোনো ব্যাপারে শশী যে তাকে হস্তক্ষেপ করিবাবা অধিকার দিল না তা যেন তাকে গভীবিভাবে আঘাত করিল। উদ্ধত প্রকৃতি গোপালের, অভিমানী মন। শশী তার একমাত্র ছেলে। তার কাছে এমন ব্যবহার গোপাল কল্পনা কবিতে পারিত না। মাঝে মাঝে সে অবাক হইয়া শশীর দিকে চাহিয়া থাকে, কিছু যেন বুঝিতে পারে না। ছেলের মনেও শ্রদ্ধা বজায় রাখিতে হইলে নিজের জীবনকে যে বাপের পর্যন্ত শ্রদ্ধার উপযুক্ত করিষা রাখিতে হয় এ শিক্ষা গোপালের ছিল না। অদৃষ্টকে দোষারোপ করিয়া সে তাই মনে মনে হায় হায় করে। অনুতাপও যেন আসে গোপালের। মাঝে মাঝে সে ভাবে সে যত অনায্য কবিয়াছে জীবনে এই তার শাস্তি ! একদিন সে শশীকে বলিল, জানিস শশী, অনেক পাপে ভগবান আমাকে তোব মতো ছেলে দিয়েছেন। তোর এত মহত্ত্ব কীসের তা কি আমি আর কিছু বুঝি না ভাবিস। আমার সঙ্গে রেষারেষি করিস তুই, আমাকে লজ্জা দেবার জন্য ন্যায়বান সেজে থাকিস!—মহত্ত্ব! বাপ পাপিষ্ঠ, উনি মহৎ! লজা করে না। শশী তোর ? মানিক ১ম-২৮