পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 88S) দিন সাতেক পরে সকালবেলা কুমুদ একটা অল্পদামি টিনের তোরঙ্গ কিনিয়া আনিল। মতিকে বলিল, জিনিসপত্র গুছিয়ে নাও মতি, বাড়ি ঠিক করে এলাম, খেয়ে দেয়ে বাড়িতে গিয়ে উঠব। এ শালার হোটেলে আর মন টিকছে না। সদ্য ব্ৰকীত টিনের তোরঙগটিতে কিছুই ভরা হইল না। কুমুদ বলি, ওটা খালি থাক মতি। বাকি জিনিস সমস্তই বঁাধিয়া ছাদিয়া গুছাইয়া নেওয়া হইল, কেবল একটি ফরসা চাদর পাতা রহিল। চৌকিটাব উপরে, একটা বালিশও রহিল। আলনায় ঝুলানো রহিল ছেড়া একটা পাঞ্জাবি, একখানা পুরানো কাপড় ও একটা গেঞ্জি। তারপর কুমুদ চাকরকে পাঠাইয়া দিল গাড়ি ডাকিতে। খবর পাইয়া ম্যানেজার ছুটিয়া আসিল। বলিল, চললেন নাকি কুমুদবাবু? কুমুদ বলিল, স্ত্রীকে রেখে আসতে যাচ্ছি বাপের বাড়ি, কাল ফিরব বিকেলের দিকে। জিনিসপত্র রইল, একটু নজর রাখবেন ঘরটার দিকে। ম্যানেজার বলিল, টাকা দেবেন বলেছিলেন আজ ? কাল দেব। কাল নিশ্চয় পাবেন। আশেপাশেই রহিল ম্যানেজার। গাডি আসিলে এবং জিনিসপত্র তোলা হইলে কুমুদ যখন ঘরে তালা বন্ধ কবিল, ঘরের মধ্যে নতুন তোরঙ্গ, চৌকির বিছানা ও আলনাব জামা কাপড় দেখিয়া ম্যানেজাব একটু আশ্বস্ত হইল। গাড়িতে উঠিযা মতির মুখে কথা সরে না। কুমুদ মৃদুমৃদু হাসে। বলে, ভাবছি ম্যানেজাবকে ঠাকালাম ? টাকা দিয়ে যাব মতি। কাল আসবে ? কাল কি আব, আসব, হাতে টাকা হলেই আসব। মিছামিছি গোলমাল করত টাকার জন্য, তাই একটু কৌশল কবলাম, নইলে কাউকে আমি ঠিকই না মতি, দু-চাব মাসের মধ্যে টাকাটা একদিন ঠিক দিয়ে যাব। ঘবঘব শব্দে গাড়ি চলে। কোথায় যাইতেছে তারা? আকাশ-পাতাল ভাবে মতি, কুমুদের কাছে থাকিয়া তার যেন বিপদের ভয় হয়, কুমুদ যেন ভয়ানক মানুষ। অনেকক্ষণ চলিয়া সরু একটা গলিব মধ্যে ছোটাে একতলা একটা বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড়াইল। একটু পরেই দরজা খুলিল বনবিহাবী, জয়াও আসিযা দাঁড়াইল। বলিল, মঙ্গলঘট স্থাপনের সময় পাইনি, বাড়িতে শাখ নেই, উলু দিতেও জানি না,-মাপ কোরো কুমুদ। ছোটাে বাড়ি, পাশাপাশি দুখানা শয়নঘর, সামনে একরাত্তি একটু রোয়াক ও ছোটাে উঠান, এ পাশে রান্নাঘর এবং তাব লােগাও পাযরার খোপের মতো একটি বাড়তি ঘর। উঠানে দাঁড়াইয়া মতিকে এদিক ওদিক চাহিতে দেখিয়া জয়ী বলিল, বাড়ি বুঝি তোমার পছন্দ হচ্ছে না ? মতি দ্বিধাভাবে বলিল, মন্দ কী? জয়া বলিল, যে তাড়াহুড়ো করে এলাম কাল বিকেলে! ঘরদের এখনও সাফ পর্যন্ত কবা হয়নি। যাক, দুজনে হাত চালালে সব ঠিক করে নিতে আর কতক্ষণ।--আমি এ ঘরখানা নিয়েছি, এ ঘরে জানােলা বেশি আছে একটা, মোটা মানুষ একটু আলো বাতাস নইলে হাঁপিয়ে উঠি। তোমার ঘরখানা একটু ছোটাে হল। তা হােক! তুমি মানুষটাও ছােটাে, নতুন সংসারে জিনিসপত্রও তোমার কম, ওতেই তোমার কুলিয়ে যাবে। বাড়িঘর সাফ হয় নাই বটে, নিজের ঘরখানা জয়া কিন্তু ইতিমধ্যেই গুছাইয়া ফেলিয়াছে। জিনিসপত্র নেহাত কম নয় জয়ার, তবে সবই প্ৰায় কমদামি। জিনিসের চেয়ে ঘরের ছবিগুলিই মাতিব দৃষ্টি আকর্ষণ করিল বেশি। সব ছবিই হাতে আকা, ছােটাে-বড়ো, বাঁধা-আর্বাঁধা, ওয়াটার কলার, অয়েল