পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী 8s বউ তাঁর সঙ্গে বকুলেব বড়ো ভাব, দু জনে যেন সই। তাকে শোনাইয়া সে সব মনের কথা বলে। বলে, বাবাকে সব বলে দেব, বাবা দাদাকে মারবে, মাকেও মারবে, ম্যাববে না ভাই বউমা ? অ্যা করে জিব বেবী কলে দাদা মবে যাবে—ম কেঁদে মরবো, কুঁ। শীতলের কী হইয়াছে শ্যামা বুঝিতে পারে না, লোকটা কেমন যেন ভেঁাতা হইয়া গিয়াছে, স্মৃর্তিও নাই দুঃখও নাই। সমর্য মতো আপিসে যায, সময় মতো ফিরিযা আসে, কোনোদিন পাড়ার অখিল দত্তের বাড়ি দালা খেলিতে যায়, কোনোদিন বাডিতেই থাকে। বাডিতে যতক্ষণ থাকে, রাগারগিও কবে না, দীনদুঃখীৰ্ণ মতো মুখের ভাবও করি যা রাখে না, স্ত্রী ও পুত্রকন্যার সঙ্গে তাহার কথা ও ও ব্যবহার সহজ ও স্বাভাবিক হত্য, অথচ তার কাছে কারও যেন মূল্য নাই, কিছুই সে যেন গ্ৰাহ্য কবে না! শ্যামাব টাকা লইস্যা পালানােব পর হইতে তাহার এই পাগলামি না-করার পাগলামি আরম্ভ হইযাছে। ধাবী কবিয়া বাখালকে টাকা দেওয়ার অপরাধ, শ্যামাব জমানে টাকাগুলি নষ্ট করার অপরাধ, তাহাব কাছে অবশ্যই পুরানো হইযা গিয়াছে, মনে আছে কিনা তাও সন্দেহ। মাস গেলে আগের টাকার অর্ধেক পবিমাণ টাকা আনিয়া সে শ্যামাকে দেয়, আগে হইলে এই লইয়া কত কাণ্ড করিত, হয় অনুতাপে সারা হইত, না হয় নিজে নিজে কলহ বাধাইযা শ্যামাকে গাল দিয়া বলিত, যা সে আনিয়া দেয়। তাই যেন শ্যামা সোনামুখ কবি যা গ্ৰহণ করে, ঘবে বসিযা গেলা যাহার একমাত্র কর্ম অত তাহার টাকার খাকতি r কি ! ** -- এখন টেবও পাওযা যায না কম টাকা আনিয়াছে এটা সে খেয়াল করিয়াছে। শ্যামা যদি নিশ্বাস ফেলিয়া বলে, কী করে যে মাস চালাব,--- সে আমনই অমায়িক ভাবে বলিয়া বসে, ওতেই হবে গো, খুব চলে যাবে, বাড়ি ভাড়া দিতে হয় না, ইয়ে করতে হয় না, কী করা অত টাকা ? কমল ঘোষেবা টাকাটা মাসে মাসে কিছু কম কবি যা দিলে হয়তো চলে, শীতলকে এ কথা বলিতে শ্যামাব বাধে। ঋণ যত শাস্ত্ৰ শোধ হইযা যায় ততই ভালো। এদিকে খবচ চলিতে চাহে না। বিধানকে স্কুলে দেওযাব পাব খবচ বাডিয়াছে, বইখাতী, স্কুলের মাহিনা, পোশাক, জলখাবারের পয়সা এ সব মিলিযা অনেকগুলি টাকা বাহিব হই যা যায়। যেমন তেমন কবিয়া ছেলেকে শ্যামা স্কুলে পাঠাইতে পাবে না, ছেলেব পরিচ্ছদ ও পবিচ্ছন্নতা সম্বন্ধে বিষ্ণুপ্রিযা যে তাহাকে সতর্ক করিয়া দিয়াছিল। নিতান্ত অভাবেব সমযেও শ্যামা তাহ অগ্রাহ্য কবিতে পাব না। খরচ সোঁ মইয়াছে অন্যদিকে। সত্যভামাব • এতকালেব চাকুরিটি গিােযাছে নিজেব জন্য শেমিজ ও কাপড কে' শ্যামা বন্ধ করিয়াছে, এ সব বেশি পরিমাণে তাহাব কোনোদিনই ছিল না, চিরকাল জোড়াতালি দিয়া কাজ চালাইযা আসিয়াছে, এখন বড়ো অসুবিধা হয়। স্বামীপুত্র ছাড়া বাড়িতে কেহ থাকে না। তাই বক্ষা, নতুবা লজ্জা বঁচিত না। শীতল আব্ব বিধান বাহিবে যায়, ওদের জামাকাপড় ছাড়া শ্যামা আর কিছু ধোপাবাড়ি পাঠায় না, বাড়িতে কাচিষা লয়। ছেলেমেয়েদেব দুধ সে কমাইতে পাবে নাই, কমাইয়াছে মাছেব পবিমাণ। মাঝে মাঝে ফল ও মিষ্টি আনাইযা সকলকে খাওযানোর সাধ সে ত্যাগ কবিয়াছে। এই ত্যাগটাই সবচেয়ে কন্সকব । শ্যামার ছেলেমেয়েবা ভালো জিনিস খাইতে বড়ো ভালোবাসে। তবু, এই সব অভাব-অনটনের মধ্যেও শ্যামার দিনগুলি সুখে কাটিয়া যায। ছেলেমেয়েদের অসুখবিসুখ নাই। শীতলের যােহাঁই হইয়া থােক, তাঁহাকে সামলাইয়া চলা সহজ , নিজের শরীরটাও শ্যামার এত ভালো আছে যে এক সংসারের সমস্ত খাটুনি খাটিতে তাহার কিছুমাত্ৰ কষ্ট হয় না, কাজ কবিতে যেন ভালোই লাগে। চৈত্র শেষ হইয়া আসিল। ছাদে দাঁড়াইলে বসাকদের বাড়িব পাশ দিয়া রেলের উচু বাঁধটার ধারে প্রকাণ্ড শিমুল গাছটা হইতে তুলা উড়িয়া যাইতে দেখা যায়। পুবে খানিকটা ফঁােকা মাঠের পরে টিনের বেড়ার ও পাশে ধানকলের প্রকাণ্ড পাকা অঙ্গন, কুলি মেয়েরা প্রত্যহ ধান মেলিয়া শুকাইতে দেয়, ধান খাইতে ঝাক বাঁধিয়া পায়রা নামিয়া আসে। পায়রার বঁাকের ওড়া দেখিতে শ্যামা বড়ো ভালোবাসে,