পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOkS. in 8VO মানিক রচনাসমগ্ৰ মতির ব্যাকুল প্রশ্নে অবাক হইয়া শশী হাসিতে ভুলিয়া গেল। মনে যাব ভাব-সমুদ্ৰ উথলিতে থাকে কারও গলায় ঘা হইয়াছে শুনিলে সেই শুধু, এমন ব্যাকুল হয়। পরান অত বোঝে না, সে একটু হাসিযা বলিল, গলায় ঘা হয় কেন আমি কি তা জানি ? ছোটােবাবু ডাক্তার মানুষ, ওঁকে শূদ্ধো। মতি আরও ব্যাকুল হইযা বলিল, কী দিয়ে তুমি তবে ভাত খাবে? আগে কেন বললে না, তরকারিতে ঝাল কম দিতাম ? ঝাল কম দিলেও তরকারি খেতে পারি না মতি। তবে দুধ খাও, দই খাও। মিষ্টি আনাই। এবার পরানের চোখে জল আসিল। সে চাষা-ভূযা মানুষ, জীবনে কারও কাছে সে এমন মোলায়েম আদর পায় নাই। পরানীই মতির মনকে গাওদিয়ার দিকে টানিতেছিল বেশি করিয়া। গলায় ঘা হওয়ায় কিছু সে খাইতে পারে না, না খাইয়াই দাদার অত বড়ো প্ৰকাণ্ড শরীরটা শুকাইযা গিয়াছে। গাওদিয গিয়া এবার দাদাব খাওয়াব বিশেষ ব্যবস্থা করিবে,--নিজের সুখ সুবিধার সম্বন্ধে এমন উদাসীন পরান। কত কাজ কত সেবা যে শিখিয়াছে, কী রকম চালাক চতুর হইয়া উঠিয়াছে, সকলকে তাহা দেখাইবার লোভটাও মতির মনে জাগিয়া উঠিতেছিল। সকলে অবাক হইয়া যাইবে। না জানি কী বলিবে কুসুম! গায়েব মেয়েরা আসিয়া সংগ্রহে জিজ্ঞাসা করিবে, এতকাল সে কোথাব্য ছিল, কী বৃত্তান্ত। দুদিন পরে কুমুদকে যাইতে হইবে,-অনেক দূরে বিনােদিনী অপেরার আহ্বান আসিয়াছে। কী পার্ট করিবে কুমুদ ? সেই রাজপুত্র প্রবীরের ? আহা, মতি আর প্রবীরবেশী কুমুদকে দেখিতে পাইবে না, শুনিতে পাইবে না তার রোমাঞ্চকর বক্তৃত। ভাবিয়া মুখ স্নান করা ছাড়া আর কী করা যায় ? মতি যে মেয়েমানুষ, বউ যে মতি। আহা, মানুষ যদি ইচ্ছামতো নিজেদের অদল বদল কবিতে পারিত, কুমুদ বলে, হচ্ছে মতি, আজকাল, তা হচ্ছে। কুমুদকে সবলে আঁকড়াইয়া ধবিয়া মতি বলে, যাঃ! কুমুদ হাসে, বলে, কেন তুমি নিজেব চােখেই তো দেখে এসেছ। জযা ছিল পুরুষ, বনবিহাৰী ছিল মেয়ে। নয় ? মতি হাসে না। জয়দিদিকে দেখতে যাবে না একবার? যাব যাব, ব্যস্ত কী!! বলিয়া হাই তোলে কুমুদ। আগামী বিরহের ছায়া ও গাওদিয়া ফিরিবার আগাম আনন্দের আলো, দুদিন ধবিয়া মতির মুখখানাতে খেলিয়া বেড়াইল। তারপর আসিল কুমুদের যাওয়ার দিন। বিকালে গাড়ি কুমুদের যাওয়ার সময় আগাইয়া আসিলে মতি ভয়ানক উতলা হইয়া উঠিল। এত কষ্ট হইতে লাগিল যে মতি নিজেই সে জন্য আশ্চর্য হইয়া গেল। গাঁ ছাড়িয়া আসিবার সময়ও তাহার মন কঁাদি যাছিল। সে কষ্ট তো এ রকম নয়? কষ্টই বা কেন ? কী সে হারাইতে বসিয়াছে চিরদিনের জন্য ? হয়তো পনেরো দিন, হয়তো একমাস কুমুদকে সে দেখিতে পাইবে না। তাতে কাতর হওয়ার কী আছে? মন তবু বোঝে না মতির। শশী ও কুমুদ গল্প করে, করুণ চােখে কুমুদের দিকে চাহিয়া শশী এক সময় বলিল, চল মতি, আমরা স্টেশনে গিয়ে কুমুদকে গাড়িতে তুলে দিই। যাবি?