পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 8VG আর কিছু খেতে পারলে তো দেব? দুধ খেতেও কষ্ট হয়। পরানের প্রতীক্ষায় শশী আরও খামিকক্ষণ বসিয়া রহিল। কুসুম আর কথা বলিল না, হাসিলও না। প্ৰীতিপূর্ণ বাক্যের আদান-প্ৰদান আর কতক্ষণ রেশ রাখিয়া যায় ? কুসুম উশাখুশ করে। একবার উঠিয়া গিয়া উত্তরের ঘরে ঢোকে, বাহিরে আসিয়া আকাশে বেলার দিকে তাকায়, তারপর শশীর পাশ এবার শশী উঠিয়া দাড়াইয়া বলে, আর বসবার সময় নেই বউ। পরান এলে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়ে। কুসুম কোনোদিন বাগ করে না, আজ ভয়ানক রাগিয়া উঠিয়া চাবির গোছটা কঁধে ফেলিয়া মুখ কালো করিয়া বলিল, বসবারও সময় নেই, না ? শশী একটু আশ্চর্য হইয়া বলিল, হাসপাতালে রোগী এসে বসে আছে তা তো জানো ? কথাগুলি দুৰ্বোধ্য নয়, তবু মনে হইল কুসুম যেন চেষ্টা করি যা মানে বুঝিতেছে। শশী যেন তার অচেনা, এমনই তাকানো কুসুমের। সে তো রোজ থাকে।—কুসুম বলিল । শশী বিব্রতভাবে একটু হাসিয়া বলিল, বসতে বলো, বসছি। অমন খামোেকা বাগ কোরো না বউ । সমযে কাজ না কবলে কাজ নষ্ট হয়, বসে গল্প করা পালাম না। তুমিও রইলে আমিও বইলাম— তে: ; ৩, -; বছৰ ধরেই আছি। এক আধা দিন নয়। এ কথা বলিয়া চোখেব পালকে কোথায় যে গোল কুসুম ! না গেলে কী হইত বলা যায় না। এমন তো সে কখনও যায না। প্রতি মুহূর্তে কিছু ঘটিবার প্রত্যাশা তাহাব কখনও লয় পাইত না। আজি কী হইল কুসুমেব, কেন সে হঠাৎ শশীকে এমন ভাবে ফেলিয়া চলিয়া গেল, তাব রাগ দেখিয়া আজ যখন শশী আত্মহারা হইয়া উঠিতেছিল ? শশীব বিবৰ্ণ মুখে কেশেব ছবি ফুটিযাছে দেখিলে অন্তত উল্লাস তো জাগিত কুসুমেব। এমন কখনও হয নাই। তালবনের উচু টিলাটার উপর দাড়াইয়া একদিন সূর্যস্ত দেখিবাব সময, শশীর অস্তব বড়ো ব্যাকুল হইয়াছিল, অভূতপূর্ব ভাবাবেগে সে থরথর করিযা কঁপিযাছিল, আজ অপরাহু বেলায় গৃহচ্ছায়ায় একা দাঁড়াইযা সে যেন তেমনই বিহ্বল হইয়া গেল অন্য এক ভাবাবেশে। এ তো গ্রাম শশী, খড়ের চালা দেওয়া গ্ৰাম্য গৃহস্থেব এই গোবৰলেপা ঘর, যে বামণী কথা বলিয়া চলিয়া গেল গায়ে তার ব্লাউজ নাই, কেশে নাই সুগন্ধি তেল, তার জন্য বিবৰ্ণ মুখে এত কষ্ট পাইতে নাই। ওর আবেগ তো গেয়ো পুকুরের ঢেউ ! জগতে সাগরতারওঁগ আছে । ap হাসপাতালে ভিনগায়ের লোক বসিয়া ছিল। শশীকে এখনই যাইতে হইবে! এখনই ? কুসুমের কাছ হইতে আসিয়া এখনই ভিনগাঁয়ে যাইতে হইবে। কতগুলি কথা যে ভাবিয়া দেখিতে হইবে শশীর, একটু যে শান্ত করিতে হইবে মনটা। কুড়ি টাকা দিতে হবে বাপু । কুড়ি টাকা! ভিনগাঁয়ের লোকের চমক লাগে। ঘ্যান ঘ্যান কোরো না। টাকা না দিতে পার হাতুড়ে দেখাওগে । ভিনগায়ের লোক অবসন্ন মন্থর পদে ভিনগাঁয়ে ফিরিয়া যায়। রোগীদের আজ ওষুধের সঙ্গে গাল দেয় শশী। এত রাগ কেন শশীর, এত নীচতা কেন ? কথায় ব্যবহারে কেন এই অমার্জিত রুক্ষতা ? সামনে দাঁড়াইয়া কে আজ ভাবিতে পরিবে শশীর মনে বড়ো চিন্তার আবির্ভাব হয়, জীবনকে বৃহত্তর ব্যাপ্তি দিবার পিপাসা সর্বদা জাগিয়া থাকে। পরান আসিলে শশী বলে, যােব বলে দিয়েছিলাম, বাড়িতে ছিলে না যে ? মানিক ১ম-৩০