পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ३ তিকথা 8Գ Գ যাওয়ার সময় বিপদ করলেন।—কুসুম বলিল। নাই বা গেলে ?--বলিল শশী । কুসুমকে গাযে রাখিবার জন্য আজও চেষ্টা করিতেছে শশী, এ শশীকে যেন চেনা যায় না। এমন দীনভােব সে কোথায় পাইল, কোথায় শিখিল এমন কাঙালপনা ? জানে, কুসুম থাকিবে না, থাকিলেও ভালোবাসিবে না, তবু উৎসুকভাবে শশী জবাবের প্রতীক্ষা করে। মানুষ যে মরিয়া বঁাচে না কী তার প্রমাণ আছে? শীতকালের বর্ময় কখনও কি মরা নদীতে বান ডাকে না ? নিজেকে হয়তো কুসুম বুঝিতে পারে নাই, কাল তালবনে মিথ্যা বলিয়াছিল! কুসুম ভযে ভয়ে বলিল, থেকে কী করব ছোটােবাবু? তাতে আপনারও কষ্ট, আমারও কষ্ট। এ বয়সে আর কী কষ্ট সইতে পারব ? গলায় দডি-টড়ি দিয়েই বসব হয়তো। শশী না পাবুক, ইশারায় মনের কথা কুসুম বেশ বলিতে পারে, অনেকদিন শশীকে ও ভাবে মনেব কথা বলিয়া তার দক্ষতা জন্মিয়াছে। শশী বিবৰ্ণ হইয়া গেল। সভয়ে বলিল, না বউ না, ছি, ও সব কখনও কোবো না। ও সব নাটুকেপনা কবতে নেই। গোড়ায় যদি বলতে, থাকার কথা মুখেও আনতাম না। এত যদি বিগড়ে গিয়ে থাকে মন, বাপের বাড়ি গিযেই থােক। বুঝে শুনেই তো কাজ করতে বলেছি তোমাকে গোডা থেকে, চারদিক বিবেচনা করে। কুসুম বলিল, তা না করলে অনেক আগেই গলায় দড়ি দিতাম ছোটোবাবু।–~~যাব এবাব ? এ অনুমতি চাওযাব কোনো কারণই শশী সেদিন খুজিয়া পাইল না। এত কাণ্ড করিযা কুসুম বাপের বাড়ি গেল। এই রকম স্বভাব কুসুমের। জীবনটা নাটকীয় করিয়া তুলিবাব দিকে চিরদিন তার বিশেষ পক্ষপাতিত্ব ছিল। শুধু গ্রাম ছাড়িবার কল্পনা নয়, অনেক কল্পনাই শশীর নিস্তেজ হইয়া আসিয়াছে, তবে প্রামে বসিয়া থাকিবাবও আব্ব কোনো কারণ সে খুঁজিয়া পায় না। হাসপাতালেব কাজে বেশ শৃঙ্খলা আসিয়াছে, একজন ডাক্তাব নিযুক্ত করিয়া এবাব সে বিদায গ্রহণ করিতে পারে। যাওযার কথা প্রকাশ করিলে ঘরে ও বাহিরে একটা হইচই বাঁধিয়া যাইবে, কৈফিয়াত দিতে দিতে, উপদেশ ও উপবোধ শুনিতে শুনিতে বাহির হইয়া যাইবে প্রাণ। এটা এড়ানো চলিবে না। সে তো কুসুম নয় যে যেদিন খুশি তল্পিতল্পা গুছাইয়া চলিয়া যাইতে চাহিলে এত বড়ো গ্রামের মধ্যে শুধু ব্যস্ত হইবে 635 হাঙ্গামার ভয়টাই যেন শশীকে নিস্ক্রিয় কবিয়া রাখিল।। মন তো ভালো থাকেই না, শরীরটাও খারাপ। উৎসাহ এবং জীবনীশক্তির বীতিমতো অভাব ঘাটিয়াছে। মাস দুই কাটিয়া গেল। সকালবেলা সূচনা হইয়া একদিন মাঝরাত্রে সেনদিদির অবশ্যম্ভাবী বিপদটি আসিয়া পড়িল। সত্যই বিপদ। সেনদিদি বুঝি বঁাচে না। অনেক বয়সে প্রথম সন্তান হওয়াটা হয়তো আকস্মিক সৌভাগ্য বলিয়া ধরা যাইতে পাবে, কিন্তু সেটা বিপজ্জনকও বটে। গোপালের বোধ হয় এ আশঙ্কা ছিল, গ্রাম ছাড়িয়া এ সময় দু-এক দিনের জন্যও সে কোথাও যাইত না, সর্বদা খোঁজখবর লইত। যামিনী কবিরাজের বৈঠকখানায় তার সর্বদা যাতায়াত,--যামিনী বঁচিয়া থাকিতে শেষের দিকে কখনও যাইত না। সেনদিদির দাদা কৃপানাথ কবিরাজ বড়ো পোষ মানিয়াছে গোপালের কাছে। লোকটা চিকিৎসাশাস্ত্ৰ পড়িয়াছে ভালো কিন্তু প্রয়োগ জানে না, পসারও নাই। চরক সুশুতের শ্লোক বলিবার ফঁাকে ফঁাকে সে গোপালের স্তব পাঠ করে কিনা কে জানে, গোপাল তাকে বিশেষ কৃপা করিয়া থাকে। তা না হইলে যামিনী কবিরাজের