পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 8 Գ Տ কুন্দ আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, এখন শোবেন শশীদাদা? মশারি টাঙিয়ে দেব ? শশী বলিল, দে। মশারির কোণ বধিতে বঁধিতে কুন্দ বলিল, সেনদিদিকে একবার দেখতে যাবেন না। শশীদাদা ? শশী রাগিয়া আগুন হইয়া বলিল, তুই আমার সঙ্গে ইয়ার্কি দিচ্ছিস নাকি কুন্দ ? কুন্দ থতোমতো খাইয়া গেল। তারপর কঁাদিয়া বলিল, দুটি খেতে পরতে দিচ্ছেন বলে আমি কথা কইলেই আপনি রেগে যান। কী করেছি আপনার আমি ? এর চেয়ে আমায় তাড়িয়ে দিন শশীদাদা, আমি যেখানে হোক চলে যাই । শশী নরম হইয়া বলিল, আজেবাজে কথা বলিস তাই তো রাগ হয়। * কুন্দর কান্না সহজে থামে না। সে কঁদিতে কঁাদিতেই বলিল, আজেবাজে কথা কখন বললাম, কখন ইয়ার্কি দিলাম ? একবার চিকিৎসা করে ওকে বাঁচিয়েছিলেন, তাইতে বললাম দেখতে যাবেন কিনা। তাও দোষের হয়ে গেল। শশী আবও নরম হইয়া বলিল, শরীরটা ভালো নেই কুন্দ, গা হাত পা ব্যথা করছে, কঁদিস না। হাতের কাজটা চটপট শেষ কর দিকি, শুয়ে পড়ি। রাত প্রায় বারোটার সময শশীর দরজা ঠেলিয়া গোপাল আস্তে আস্তে ডাকিল, শশী ? শশী ঘুমোলি ? অসুস্থ শরীরের তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাবটা এতক্ষণে শশীর ঘুমে পবিণত হইতেছিল, জাগিয়া সাড়া দিতে গোপাল দরজা খুলিতে বলিল। শশী উঠিয়া দরজা খুলিয়া দিল। গোপালের হাতে আলো ছিল, মেঝেতে সেটা নামাইয়া দিয়া সে বসিল খাটে। গোপাল স্তব্ধ, বিষন্ন, গম্ভীর, মনে হয় কথা সে কিছুই বলিবে না, নির্বাকি আবেদনেব ভঙ্গিতে এমনিভাবে মধ্যরাত্রে বসিয়া থাকিবে ছেলের ঘরে, ছেলের সামনে। শশীই শেষে বিবক্ত হইয়া বলিল, আমার ঘুম পাচ্ছে। গোপাল বলিল, ঘুম পাচ্ছে? তা পাবে বইকী, রাত কি কম হল! শরীরটাও তো তোমার ভালো নেই। একটা মানুষ মবে যাচ্ছে তাই, নইলে তোমায় ডাকতাম না। শশী । শশী চুপ কবিয়া রহিল। গোপাল ব্যগ্রভাবে বলিল, যাবি না একবার ? শুধু তো মরবে না। শশী, কী যন্ত্রণাই যে পাচ্ছে । শশী বলিল, বাজিতপুর থেকে ওরা ডাক্তার আনাল না কেন ? বিকেলে লোক পাঠালে এতক্ষণে এসে পৌঁছতে। গোপাল বলিল, সে বুদ্ধি কারও হয়নি। তুই গাঁয়ে থাকতে বাজিতপুরে ডাক্তার আনতে লোক পাঠাবেই বা কেন ? তোর চেয়ে তারা তো বেশি জানে শোনে না। ডাকলে তুই যে যাবি না, ওরা তা ভাবতেও পারেনি। শশী। কৃপানাথ এখন আমার হাতে পায়ে ধরে কঁাদাকাটা করছে বাবা। তুই অপমান করে তাড়িয়ে দিলি তাই তোর কাছে আসতে আর সাহস পাচ্ছে না। শশীর ভয়ানক কষ্ট হইতেছিল, সে মৃদুস্বরে বলিল, মান অপমান তো আমারও আছে বাবা। গোপাল বলিল, না না, তোকে অপমান করেনি। শশী। না বুঝে যদি একটা কথা বলে থাকে,- কথা গোপাল শেষ করে না। তারপর দুজনেই চুপ করিয়া থাকে। উশাখুশ করে গোপাল, করুণ চোখে সে তাকায় শশীর দিকে, মেরজাই-এর ফিতাটা টান দিয়া খুলিয়া বুকটা উদলা করিয়া দেয়, খাইয়া উঠিয়া পান মুখে দিবার সময় পায় নাই, তবু হয়তো অভ্যাসে, হয়তো মানসিক চাঞ্চল্যে মুখের শূন্যতটা পানের মতো বার কয়েক চিবাইয়া দেয়। বড়ো অদ্ভুত রকমের শ্ৰীহীন দেখায় গোপালকে। গোপাল যে নিজেই তাহাকে অনুরোধ করিতে আসিতে পরিবে শশী এটা ভাবিতে পারে নাই। এত বেশি সেনদিদির জীবনের মূল্য গোপালের কাছে? একদিন ওর চিকিৎসা করিতে কেন তবে সে তাকে বাধা দিয়াছিল? গভীর দুঃখ ও লজ্জায় শশীর মন ভরিয়া গিয়াছিল, তবু সে মনে মনে