পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in পুতুলনাচের ইতিকথা 8br○ হয়তো বড়ো হয়ে তাকে সমালোচনা করে। কিন্তু যেমন বাপাই হােক ছেলের মনের অন্ধ ভক্তিটা কিছুতেই যাবার নয়। কম নয় শশী, গুরুকে সে গুরুর মতো বোঝায়। সাত-আট বছর আগে ভোলা ব্ৰহ্মচারীর কাছে গোপাল তাহার দীক্ষা দিয়াছিল, ওঁ স্থানে নমো বলিয়া গুবুর মন্ত্র কিছুদিন শশী জপও করিয়াছে, - তারপর কত পরিবর্তনই হইয়াছে শশীর! ংক্ষেপে পরিচ্ছন্নভাবে তারপর অনেক জ্ঞানগর্ভ কথাই ব্ৰহ্মচারী বলেন, শ্রদ্ধার সঙ্গে শুনিয়া শশী ও জ্ঞানগর্ভ জবাব দেয়। মনে মনে সে টের পায় যে গুরুর চেয়ে জ্ঞানটা তার অনেক বেশি বাড়িয়া গিয়াছে, কিন্তু এটা সে প্রকাশ পাইতে দেয় না। শশীকে ব্ৰহ্মচারীর বড়ো ভালো লাগে। ছেলেব সম্বন্ধে যে সব অভিযোগ গোপাল করিয়াছিল সমস্ত ভুলিয়া গিয়া, অনেক কালের সঞ্চিত বঁধাধরা উপদেশগুলি নেপথ্যে রাখিয়া, নানা বিষয়ে শশীর সঙ্গে আলাপ করেন। ক্ৰমে ক্ৰমে মনে হয় অনেকগুলি বছর আগে তাদের মধ্যে যে গুরুশিষ্যের সম্পর্কটি স্থাপিত হইয়াছিল, আজ তাহা বাতিল হইয়া গিয়াছে। ধর্মেব কথা নয়, ইহকাল পরকাল পাপপুণ্য সম্বন্ধে প্রশ্নোত্তর নয়, এবার তাদেব মুখোমুখি বসিয়া শুধু গল্প করা, অসমবযসি দুটি বন্ধুব মতো। দুটি দিন এখানে বাস করিতে না করিতে শশীব কাছে একটা মুখোশ যেন ভোলা ব্ৰহ্মচারীর খসিয়া গেল, ভিতবেবী আসল মানুষটির সঙ্গে শিষ্যেব। তিনি পরিচা ঘাঁটিতে দিলেন। আপনাভোলা সদাশিব মানুয, অনেকটা যাদবের মতো, ঘটনাচকে তিনি ব্ৰহ্মচারী, সাধা করিয়া নয়। --তারপর অভ্যাস হইয়া গিয়াছে। ক্ৰমে ক্ৰমে জীবনের দু-একটি ঘটনা ও সম্ভাবনার কাহিনি শশীকে তিনি শোনান। প্রথম-যৌবনে প্রথম সন্ন্যাসী-জীবনেব কথা, ঘরে যা মেলে নাই তাবই অন্বেষণে দেশে দেশে যাযাবর বৃত্তি। অনিশ্চিতেব সন্ধানে বাহির হওযাব এমনই সব কাহিনি চিরদিন শশীকে ব্যাকুল করে। তারও অনেক দিনের বাহির হওযার সাধ । গোপালের অনুরোধে শশীর মনটি ঘরের দিকে টানিবাব চেষ্টা করিতে গিযা তার ঘর ছাড়ার প্রবৃত্তিকেই ব্ৰহ্মচাবী উসকাইযা দিয়া গেলেন। দিন সাতেক গুবুসঙ্গ করিযা গোপাল যেন একটু গা ঝাড়া দিয়া উঠিল। নিজের সঙ্গে কিছু সে একটা বাফা কবি যা ফেলিয়া থাকিবে, কারণ দেখা গোল কর্তব্য সম্পাদন ও শশীর প্রতি ব্যবহাব তার সহজ ও স্বাভাবিক হইয়া আসিয়াছে। বলে, হাসপাতালে রোগীপত্র কেমন হচ্ছে শশী ? শশী বলে, বাড়ছে। দু-একটি করে। গোপাল আপশোশ করিয়া বলে, বেগার খেটেই তুমি মরলে। মাইনে হিসেবে কিছু কিছু নাও না কেন ? পরিশ্রমের দাম তো আছে তোমার, একটা লোক রাখলে তাকে তো দিতে হত? শশী বলে, হাসপাতালের টাকা কোথায় যে নেব। বাবা ? সামান্য টাকার হাসপাতাল, আমিও যদি নিজের পাওনা গন্ডা বুঝে নিতে থাকি, হাসপাতাল চলবে কীসে ? তা না নিক শশী মাহিনা বাবদে কিছু এখন সেটা আৰু আসল কথা নয় গোপালের কাছে, ছেলের সঙ্গে একটু সে আলাপ করিল মাত্র। এমনই নারীসুলভ একধরনের ছলনাময় ব্যবহার গোপালের আছে, শশীকে মাঝে মাঝে যা আশ্চর্য ও অভিভূত করিয়া দেয়। ভোলা ব্ৰহ্মচারীকে শশী কথার কথা বলে নাই, গোপালের প্রতি একটা অন্ধ ভয়-মেশানো ভক্তি আজও তার মধ্যে অক্ষয় হইয়া আছে—হয়তো চিরদিনই থাকিবে। গোড়ার দিকে অনেকগুলি বছর ধরিয়া তার মনের সমস্ত গাঁথনি যে গাঁথিয়াছিল। গোপাল, সেগুলি ভাঙিতে পরিবে কে? কায়েতপাড়ার পথ দিয়া চলিবার সময় এক একদিন শশী যামিনী কবিরাজের বাড়িতে শিশুর ক্ৰন্দন শুনিতে পায়। কচিগলার কান্না। খুবই যেন কচি মনে হয় গলাটা শশীর, বিপিনের কি এত ছােটাে