পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in 8br8 মানিক রচনাসমগ্ৰ শিশু আছে? অনেক দূর চলিয়া গিয়াও অনেকক্ষণ অবধি কান্নার সুরটি শশীর কানে বাজিতে থাকে। নিজের এই ভাবপ্রবণতা ভালো লাগে না। যে শিশু জন্মিয়াছে সে মাঝে মাঝে কঁাদিবে বইকী! তাতে এতখানি বিচলিত হওয়ার কী আছে? নিজের বাড়িতেও এমন কান্না সে কত শোনে। সেনদিদি মারা যাওযার মাস তিনেক পরে একদিন অনেক বেলায় শশী বাড়ি ফিরিয়াছে, এমনই ရာခိifijifi | রোদের তেজে অস্নাত অভুক্ত শশীর মুখখানা শুকনো দেখাইতেছিল, আরও একটু পাংশু হইয়া সে বলিল, কার ছেলে বললি কুন্দ, সেনদিদির ? কুন্দ বলিল, হঁয়া। পেট থেকে পড়েই তো মাকে খেয়েছে রাক্ষস, কিপীনাথ কবরেজের শালির কচি ছেলে আছে, তার মাই খেত। সে আজ চলে গেল। কিনা, মামা তাই আমাকে এনে দিলেন। খুঁকির সঙ্গে আমার দুধ খাবে। মার মতো শেষে আমাকেও না খায়! একগাল হাসিল কুন্দ, সেনদিদির কথা জড়ানো ছেলেকে শশীর সামনে মেলিয়া পরিয়া বলিল, ওকে মানুষ করার জন্য সোনার হার পাব শশীদাদা। মামার মন আজকাল বড়ো দরাজ হয়েছে। ওকে আনলে কে ? মামাই আনল। এমনই কথা জড়িয়ে বুকের কাছটিতে ধরে। বাড়ির ছেলেমেয়েদেব কাছে ঘেঁষতে দেন না, পরের ছেলে কোলে নেবার মামার রকম দেখে হেসে বাচি না। আমায় কী বললেন জানেন ?---- ছেলেটা নিলাম রে কুন্দ আমি, মানুষ করতে পারবি? তোকে দশভরির হার গড়িয়ে দেব। আমি বললাম, দিন না মামা, আমাব ছেলেমেয়ের সঙ্গে মানুষ হবে, এতে আর হাঙ্গামা কী ? শশী বঁাঝিয়া বলিল, কেন তুই এ ভার নিতে গেলি ? এত গয়নাব লোভ তোব। কুন্দ অবাক হইয়া বলিল, গয়নার লোভে বুঝি? অতটুকু মা মরা শিশু, কেউ না দুধ দিলে ও বাঁচবে কেন ? ওর মামিটামি কারও কচি ছেলে নেই। সে কথা যদি বাদ দেন, মামা বললে আমি তো পারব না বলতে পারি না। ’ সন্দিগ্ধভাবে তাকায় কুন্দ, খানিক বোঝে খানিক বোঝে না। এতক্ষণ পরে শশী হঠাৎ জামা কাপড় ছাড়িতে আবন্ত করিল। কুন্দ জিজ্ঞাসা করিল, এত রাগলেন কেন শশীদাদা ? না, রাগিনি। সেনদিদির ছেলে কান্না থামাইয়াছিল। কুন্দ তাকে একটা চুমো খাইল,--সস্নেহে, গৌরবের সঙেগ। কে জানে কী দুষ্টামি আছে কুন্দর মনে! তারপর ছেলেকে আর একবার শশীর দিকে বাড়াইয়া দিযা বলিল, কী সুন্দর হয়েছে ছেলেটা দেখুন। শশীদাদা, সেনদিদির মতো দেখতে হবে। মুখখানা দেখলে মায়া হয়, না ? শশী শ্ৰান্তভাবে বলিল, তুই যা তো কুন্দ। ঘেমে-চেমে হয়রান হয়ে এলাম, একটু বিশ্রাম করতে দে। কার উপরে রাগ করিবে শশী, কাকে কী বলিবে ? সেনদিদির ছেলে যে সুন্দর হইয়াছে তাতে সন্দেহ নাই, আশ্চর্যরকম সুন্দর হইয়াছে; সেনদিদির যে জমজমাট বুপ বসন্ত হরণ করিয়াছিল ছেলের মধ্যে যেন তার ক্ষতিপূরণ হইয়াছে সুন্দ সমেত। এতটুকু ছেলে, কঁচা সোনার মতো কী তার রং! ওর মুখ দেখিয়া গোপালের যদি মায়া হইয়া থাকে, মায়া করিয়া গোপাল যদি এই অনাথ শিশুকে বুকে তুলিয়া ঘরে আনিয়া থাকে, তাতে কার কী বলিবার আছে? এ তো মহত্ত্ব, প্রশংসনীয় কাজ। ক্ষোভে দুঃখে এ জন্য এমন কাতর হওয়া তো শশীর উচিত নয়।