পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in 8brや মানিক রচনাসমগ্ৰ সকলের মনে উৎসাহের সঞ্চার হয়, তার উপবে নির্ভর বাখিয়া সকলে নিশ্চিন্ত থাকে। এ তো অকারণে হয় না, কতবড়ো সৌভাগ্য শশীর, না চাহিয়া জনতার এই প্রীতি পাইয়াছে। এ তো শুধু সৎকার্যের পুরস্কার নয়। কী এমন সৎকাজটা শশী করিয়াছে? রাস্তাঘাটের সংস্কারের জন্য কোদাল ধরে নাই, ম্যালেরিযা নিবারণের জন্য ডোবা পুকুরে কেরোসিন ছড়ায নাই, নাইট-স্কুল খোলে নাই, গ্রাম-সমিতি ছাত্রসংঘ প্রভৃতি গড়িয়া তোলে নাই,-কিছুই করে নাই। তবু হয়তো এখন আশেপাশে দশটা গ্রামে শশীর চেয়ে বেশি প্রভাব আর কাহারও নাই। শশীকে যদি সকলে ভালো না বাসিবে এমনটা তবে হইবে কেন ? শশী তাদের ভালোবাসে না, শশীকে যারা ভালোবাসিয়াছে? গ্রাম ও গ্রাম্যজীবনের প্রতি মাঝে মাঝে শশী গভীর বিতৃষ্ণা বোধ করিয়াছে, ধরিতে গেলে আজ কত বছব এখানে তার মন টিকিতেছে না, তবু ক্ষতের বেদনাব মতো স্থায়ী একটা কষ্ট শশীর মধ্যে আসিয়াছে, গ্রাম ছাড়িবাব কথা ভাবিলে কেমন করিয়া উঠে মনটা। এখানে জন্ম শশীর, এইখানে সে বড়ো হইয়াছে। এই গ্রামের সঙ্গে জড়ানো তার জীবন। কুসুম ছিল বিদেশিনি, যেদিন শখ জাগিল নির্বিকার চিত্তে বিদায় হইয়া গেল-শশী কেন তা পরিবে? রওনা হওয়ার সময় চোখের কোণে জল পর্যন্ত আসিবে শশীর। নিশ্চয় আসিবে। কুন্দ কঁদে —কেন। শশীদাদা, কেন চলে যাচ্ছেন আমাদের ছেড়ে ? সেনদিদির ছেলের ভাব লওয়ায় কুন্দর কাজ বাড়িয়াছে, তবু সে শশীর সেবা বাড়াইয়া দেয়। শশী যতক্ষণ বাডিতে থাকে কোনো না কোনো ছলে কুন্দ বারবার কাছে আসে, ছলছল চোখে শশীব দিকে তাকায়, কত কী বলিতে চায় কুন্দ, সব কথা বলিতে সাহস পায় না। কি রে কুন্দ, কী হল তোর ? শশী বলে। কুন্দ বলে, আপনার জন সবাইকে ফেলে চলে যাওয়া কি ভালো শশীদাদা ? কেউ কি তা যায় না। কুন্দ ? সকলে কি দেশে গাঁয়ে বসে থাকে ? যারা যায় পেটের ধান্দায় যায়, আপনার যাবার দরকার! কার স্নেহের অভাবে এমন তু তু করিতেছে শশীর মন যে কুন্দর এটুকু মমতায় তার মোহ জাগে ? মনে হয় আরও একটু মায়া করুক কুন্দ, আরও একটু কাতর হােক। কাতর হইয়াছে গোপাল। একেবারে যেন আধমরা হইয়া গিয়াছে মানুষটা। নিজের বাড়িতে চোরের মতো বাস করে, ভীত করুণ চােখে তফাত হইতে শশীর চালচলন লক্ষ কলে, অপরকে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া শশীর মতলবাদির সন্ধান নেয়। সামনাসামনি শশীর সঙ্গে কথা বলিবার সাহসও গোপাল পায় না! কে জানে কী বলিতে কী বলিয়া বসিবে তার দুরন্ত অবাধ্য ছেলে! কোথায় যাইতে চায় শশী, কী করিতে চায়, সঠিক খবর কেহ গোপালকে দিতে পারে না, তবে ব্যবস্থা দেখিয়া সকলে অনুমান কবে যে দু-চার দশদিনের জন্য সহজ সাধারণ যাওয়া নয়, যাওয়াটা শশীর যাওয়ার মতোই হইবে। তারপর একদিন শশীর চিঠির জবাবে হাসপাতালের চাকরির জন্য দরখাস্তকারীদের মধ্যে একজন গ্রামে আসিয়া পৌছিল। নাম তার অমূল্য, শশীর সঙ্গে একই বছর পাশ করিয়া বাহির হইয়াছে। নাম শশীর মনে ছিল না, এখন দেখা গেল। শশীর সে চেনা। অমূল্যর সঙ্গে আলাপ করিয়া শশীর ভালো লাগিল, তাছাড়া এই সামান্য চাকরির দাবি লইয়া উপস্থিত হইলে বন্ধুকে কে ফিরাইতে পারে? লোক বাছিবার আর প্রয়োজন রহিল না, কয়েকদিন পরে পরে যাদের আসিবার জন্য তারিখ দেওয়া হইয়াছিল, তাদের বারণ করিয়া চিঠি লিখিয়া দেওয়া হইল। নিজের বাড়িতেই অমূল্যকে একখানা ঘর শশী ছাড়িয়া দিল। বলিল, যে কদিন আছি আমার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরতে হবে অমূল্য, রোগীদের চিনে সব বুঝেশুনে নেবে-এবার থেকে সমস্ত ভার