পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in 88 মানিক রচনাসমগ্ৰ দুৰ্বোধ্য ব্যথা দিয়া ফঁাপানো এই শূন্যময় অবস্থাটি তাহার মৃত্যুবই পরবতী জীবন। এই যে তাহাব ভোতা ক্লান্তিকর কষ্ট হইতেছে, ইহা অশরীরী আত্মাব যাতনা। তারপর তার মনে হইল একটা শ্বাসরোধী গাঢ় তবলতায় সে ডুবিদ্যা গিযছিল, এখন মবণশিথিল পীর গতিতে ভাসিয়া উঠিতেছে, একটা বিস্মৃত অতীতকে, যুগযুগান্তেব্য পুবাতন একটা হারানো ইতিহাসকে সে স্মরণ কবিবার চেষ্টা করিতে লাগিল। সবই যেন তাহাব মনে থাকিবার কথা কিন্তু কিছুই মনে নাই। সে ভাবিতে পাবিতেছে না। একান্তভাবেই বর্তমানোবা এই অপরিচিত শূন্যতায় মন তাহাব নিশ্চল হইয়া [আছে}} সে বুঝিতে পাবে তােহর পরিচিত পুরাতন চিন্তাজগৎটি চাবিদিকে ছড়াইয়া আছে। কিন্তু মনকে সে কোনোদিকেই সন্ধান করিতে পাঠাইতে পারিতেছে না। আনন্দ বিষাদ কৌতুহল অনুসন্ধিৎসা কিছুই কি তাহার নাই ? সমযেব গতি তাহাব ঠাহব হইতেছে না। প্রতিটি পালকের অন্তৰ্ধানে একটা অব্যক্ত শঙ্কার সঙ্গে মনে হইতেছে দীর্ঘ, সুদীর্ঘ সময় অতিবাহিত হইয়া গেল। সে আবাব চোখ মেলিবার চেষ্টা করিল। তাহাল মুখ দিয়া একটা অস্ফুট শব্দ বাহির হইল। ডান হাতটি তুলিবাব চেষ্টা করিল। অল্প একটু উঠিয়া হাতটি শিথিল হইয়া পডিযা গেল। কি করিযা মনে তাহাব একটি সম্পূর্ণ প্রশ্নোব সৃষ্টি হইয়াছে। উচ্চাবণ কবিতে গিয়া কেবল তঁাহাব ঠোট দুটি কঁপিয়া উঠিল, শব্দ বাহির হইল না। তাব।পর একসময় সে চোখ মেলিয়া চাহিল। প্রথমটা কিছু বুঝিতে পারিল না। চোখের সামনে একটা সাদা দেয়াল। তাঁহাতে একটি শায়িত মানুযেব ছাযা পড়িয়াছে। ছাযাব উপবে জানালােটা অৰ্দ্ধেক ৬েঙানো, ফঁক দিয়া খানিকটা আকাশ ও কতগুলি তারা দেখা যায়। একটা গরম ধোঁয়াটে গন্ধ নাকে আসিতেছে। কাছেই কাদের কথা বলিলাব মৃদু শব্দ শোনা যায। হঠাৎ তাহার। সৰ্ব্বাঙ্গে ঝাকানি দিযা বিদ্যুতেৰ মতো একটা তীব্র বেদনা সঞ্চালিত হইয়া গেল। সে পাশ ফিবিলাব চেষ্টা করিযাছে। কিন্তু মনেও পডিয়া গিয়াছে তাহার সব কথাই। উগ্রতম বেদনােল মধ্যেও একটি অসম্ববণীয প্রশ্ন তাহাব সমস্তটুকু চেতনাকে আশ্ৰয কবিয়া বসিযাছে। “কই ? কোথায় গেল ?” কে যেন বলিল “এই যে শ্যামা, এই যে। মুখ ফিবিযে তাকা হ৩ভাগী। যে কথা বলিল সেই তাহাব একখানা হাত তুলিয়া একটি নবম স্পন্দনেৰ উপব বাখিল। জাগিয়া থাকাল যেটুকু শক্তি শ্যামাব হইয়াছিল তাও যেন আবার ঝিমাইযা আসিল। তাহাব হাতেব তালুপ নীচে কতটুকু একটা বুক ধুকধুক কবিতেছে! এই মৃদুতম স্পর্শ, এই ক্ষীণতম স্পন্দন, এ যেন তাহাব ঘুম-পাড়ানো নেশা। শ্যামাব দুটি চোখ মুদিয়া আসিল।. মুদ্রিত উপন্যাসের সূচনাভাগে শ্যামার সাত বৎসরের বিবাহিত জীবনের বর্ণনাসূত্রেই শ্যামাব বিলম্বিত জননীস্বত্বলাভ ও সন্তান-প্রসবের প্রসঙ্গ এসেছে। লক্ষণীয় যে, প্ৰসূতি শ্যামার জ্ঞানলাভেলি পরবর্তী চেতনা-বিকাশের সূক্ষ্ম বিবরণ মুদ্রিত উপন্যাসে সংক্ষিপ্ততর হয়েছে। পাগুলিপির সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে মুদ্রিত উপন্যাসে পরিবর্তন, সংস্কার, পরিবর্ধনের উদাহরণ ব্যাপক-হারে সংঘটিত হয়েছে দেখা যায়। লেখক-জীবনের প্রথম পর্কেবা একাধিক রচনা সম্পর্কেই এই ঘটনা লক্ষ করা যায়। মুদ্রণকালে লেখক তঁর রচনার উৎকৰ্ষসাধনে অত্যন্ত যত্নশীল ছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। লেখকের ব্যবহৃত একটি বাঁধানো খাতায় প্রাপ্ত লেখকের স্বহস্তলিখিত নোট থেকে দেখা যায়, জেনারেল প্ৰিন্টার্স-এর কাছ থেকে পনেরো শতাংশ হারে জননী-র ২য় সংস্করণ বাবদ লেখক ১৮৭ টাকা আট আনা গ্ৰন্থস্বত্ব পেয়েছেন। তারিখ ১৯৪৫-এর ২৬ মে। জননীর পরবর্তী প্রকাশের কাল ১৯৫০ ডিসেম্বর, বসুমতী সাহিত্য মন্দির কলকাতা থেকে দুই খণ্ডে প্রকাশিত ‘মানিক গ্রন্থাবলীর প্রথম খণ্ডে। ১৯৬২ (শ্রাবণ ১৩৬৯) খ্রিস্টাব্দে মিত্ৰালয় কলকাতা কর্তৃক জননী স্বতন্ত্র গ্ৰন্থরূপে পুনঃপ্রকাশিত হয়। ১৯৭৬ জুনে বেঙ্গল পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড থেকে পরবতী নতুন সংস্করণ প্ৰকাশিত হয়। বর্তমানে গ্রন্থাকারে জননী প্রকাশ করেছেন অঙ্কুর পুস্তকালয়, প্রথম সংস্করণ ডিসেম্বর ১৯৯০, দ্বিতীয় মুদ্রণ জুন ১৯৯৫, প্রচ্ছদশিল্পী পূর্ণেন্দু পত্রী। ‘মানিক রচনাসমগ্র’-য় জননী-র প্রথম সংস্করণের পাঠ গৃহীত হয়েছে, মুদ্রণ প্ৰমাদগুলি সংশোধিত হয়েছে এবং স্থানে স্থানে পাঠনির্ধারণের প্রয়োজনে পরবর্তী ১৩৬৯ শ্রাবণে প্রকাশিত মিত্ৰালয় সংস্করণের সাহায্য নেওয়া হয়েছে।