পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৫১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in Q>や মানিক রচনাসমগ্ৰ পরিচয় বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ১৯৩৬ সংখ্যায় ‘পুতুলনাচ : মহলা থেকে মঞ্চ” নামক একটি প্রবন্ধে চিত্তরঞ্জন ঘোষ পুতুলনাচের ইতিকথা-র ভারতবর্ষে প্রকাশিত বুপের সঙ্গে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত পাঠাংশের পরিবর্তনগুলি চিহ্নিত করেছেন এবং মন্তব্য করেছেন : এই মাজাঘষার পরেও দু-একটি জিনিস। তঁার চোখ এডিয়ে গেছে। যেমন, কুসুমের বাবার নাম কখনো লেখা হয়েছে অনন্ত, কখনো ভুবনেশ্বর। কৃপানাথ কবিরাজকে বিপিন নামেও উল্লেখ করা হয়েছে। দ্রষ্টব্য - পরিচয়, 7 8s. উপসংহাবে বলা যায়, পত্রিকার পাঠ থেকে বইয়ের পাঠের সংস্কাবে দুটি দিকে মানিক বিশেষ নজৰ দিয়েছেন। (১) ভাষা, চবিত্র ইত্যাদির ক্ষেত্রে উপন্যাসেব সৌকর্যসাধন। (২) নিয়তি, ঈশ্বর, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষযে তাব চিন্তাগুলিকে স্পষ্টতব কাবাব প্রয়াস। দুটি পাঠ পাশাপাশি ব্যাখ্যায়, আমরা মানিকোব সৃষ্টিশীল মনেব। ভিতর-মহলে কিছুটা দৃষ্টিপাত করতে পারি, একমেটে বা দোমেটে থেকে রঙে-রূপে পুতুলের ধ্রুপান্তরটি কিছুটা প্রত্যক্ষ করতে পারি। মানিকেল ইতিকথা পাঠের প্রাথমিক পদক্ষেপ। এটি। দ্রষ্টব্য - পরিচয়, পৃ. ৫৪৷৷ এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমিতে সংরক্ষিত পুতুলনাচের ইতিকথা-র পাণ্ডুলিপির সঙ্গেও প্রকাশিত উপন্যাসের বহুবিধ পরিবর্তন কৌতুহলজনক। পাণ্ডুলিপিতে হাবু ঘোয্যের পুত্রবধূব এবং পরানের স্ত্রী কুসুমের যে চরিত্রটি আছে তাঁর সঙ্গে শশীর প্রেমেব সম্বন্ধ স্থাপিত হয়েছে। প্রকাশিত উপন্যাসেও তাই আছে। কিন্তু উপন্যাসে দেখি, নয় বছর অপেক্ষা করার পর শশীর কাছ থেকে যথোচিত সাড়া না পেয়ে, কুসুম তার পিতার সঙ্গে গাওদিয়া গ্রাম ত্যাগ করেছে। পাণ্ডুলিপিতে আছে কুসুম একটি পুত্রের জন্ম দিয়ে প্রসবকালীন জটিলতা ও শারীরিক দুর্বলতার ফলে মারা গেছে। কুসুমেব সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে এসে শশী তার সম্পর্কিত বোন কুন্দকে দিয়েছে তাকে মানুষ কাবাব ভার ও তার বিনিময়ে কুন্দকে একটি কণ্ঠহার। প্রদানের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। প্রকাশিত উপন্যাসেও কুন্দ গলার হার পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি পেয়েছে শশীর পিতা গোপালেব কাছ থেকে যামিনী কবিরাজের স্ত্রী ও সেনদিদি নামে পরিচিত সুন্দরী মহিলার সন্তানকে পালন করাব জন্যে। উপন্যাসে সেনদিদির এই জাতকটি গোপালেরই অবৈধ সন্তান, যার জন্মলগ্নেই সেনদিদির দেহান্ত হয়। পাণ্ডুলিপিতে সেনদিদির প্রসঙ্গ অল্পই আছে। তবে পাণ্ডুলিপিটি খণ্ডিত । উপন্যাসে গ্রামের জমিদার শীতলবাবুর ভাই হিসেবে বিমলবাবুর সামান্য উল্লেখ আছে। কিন্তু পাণ্ডুলিপিতে বিমলবাবুর এক অবিবাহিত কন্যারও উল্লেখ আছে। এই মেয়েটির সঙ্গে শশীর কযেকবার দেখা হয়। কারণ জমিদারের অনুরোধে শশী মেয়েটির চিকিৎসা করেছিল। এই সান্নিধ্যকে কেন্দ্র করে লেখক পাণ্ডুলিপিতে শশীর কিছু মানসিক চিন্তাতরঙ্গেল উল্লেখ করেছেন, যা মুখ্যত ব্যাধিঘটিত। কিন্তু উপন্যাসে এ সব বর্জিত হয়েছে। উপন্যাসের প্রথমাংশে নবীন নামের এক ধীবর ও তার বালক পুত্রের সামান্য উল্লেখ থাকলেও পাণ্ডুলিপিতে উভয়ের প্রসঙ্গই বিস্তৃততর। নবীন সেখানে দরিদ্র এক গ্রামবাসীর প্রতিনিধি, শশী তার চিকিৎসা করেছে, তার দারিদ্র্যে সাহায্যও করেছে। প্রকাশিত উপন্যাসে শশীর নাগরিক বন্ধু কুমুদ একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। সে কলকাতায় শশীর বিচারবুদ্ধি ও জীবনমনস্কতার সূক্ষ্মতর বোধ জাগিয়েছে। শশী তাকে শিক্ষকের সম্মান দিয়েছিল। প্রকাশিত উপন্যাসে কুমুদ প্রকৃতপক্ষে এক আত্মকেন্দ্ৰিক অন্তঃসারশূন্য, নাগরিক বিলাস ও চাকচিক্যে অভ্যস্ত। প্রতারণাপ্রবণ চরিত্র যদিও খুব বড়ো মাপের কোনো অপরাধ সে করেনি। উপন্যাসে কুমুদ গাওদিয়া গ্রামে এসেছে। গ্রামের মেয়ে ও পরানের বোন মতির সঙ্গে পরিচিত হয়ে ও তার যাত্রার রাজপুত্রের সাজে মতিকে মোহিত করেছে। মতিকে বিয়ে করে শহরে নিয়ে এসেছে কুমুদ। উপন্যাসে মতি-কুমুদ উপাখ্যানটি যথেষ্ট জরুরি। কারণ এর