পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী GG এর পাতায় একস্থানে আঙুল দিয়া বলে, এখানটা ভালো করে বুঝে পড়িস খোকা, পরীক্ষায় মাঝে মাঝে দেয়। তারপব বিধান জিজ্ঞাসা করে, circumlocutory মানে কি বাবা ? শীতল বলে, দ্যাখ না, দ্যাখ, মানের বই দাখ। বিধান তখন খিলখিল করিয়া হাসে। শ্যামা বলে, পড়ার সময় কেন ওকে বিরক্ত করছে বলো তো ? শীতল বলে, হাসলি যে খোকা ?--শীতলের মুখ মেঘের মতো অন্ধকার হইয়া আসে, বাপের সঙেগ। ইয়ার্কি হচ্ছে ? হারামজাদা ছেলে কোথাকার! বলিয়া ছেলেকে সে আথালিপাথালি মারিতে আরম্ভ করে। বিধান চেঁচায়, বুকু চেচায়, শ্যামা চেঁচায়, বাড়িতে একেবারে হইচই বঁধিয়া যায়। শ্যামা দুই হাতে বিধানকে বুকোব মধ্যে আড়াল কবে, শীতল গায়ের ঝাল ঝাড়িতেই শ্যামার গায়ে দু-চারটা মারি বসাইয়া দেয় অথবা সেগুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হইয়া শ্যামার গায়ে লাগে বুঝিবার উপায থাকে না। শ্যামা তো আজ গৃহিণী, মোটাসোটা বাজরানির মতো তাহার চেহাবা, শীতল কি এখন তাহাকে ইচ্ছা! কবিয়া মারিবে ? A এমনিভাবে দিন যায়, ঠান্ডায় শীতের দিনগুলো হ্রস্ব হইয়া আসে। মামা সেই যে একবার শ্যামাকে কুড়িটা টাকা দিযাছিল আজ পর্যন্ত সে আর একটি পয়সাও আনিয়া দেয় নাই, শ্যামা। তবু শীতলের চেযে মামাকেই খাতিব করে বেশি। মামার সঙ্গে শ্যামার বনে, শ্যামার ছেলেদের মামা বড়ো ভালোবাসে, শীতলেব চোখে ও বুঝি বেশি, নিজের বাড়িতে শীতল কেমন পরের মতো থাকে, যে সব খাপছাড়া তাহাব কাণ্ড, কে তাহার সঙ্গে আত্মীয়তা করিবে? শীতলকে ভালোবাসে শুধু বকুল। মেয়েটার মন বড়ো বিচিত্র, যা কিছু খাপছাড়া যা কিছু অসাধারণ তাই সে ভালোবাসে। শীতলও বোধ হয় খোড়া কুকুব, লোম-ওঠা ঘ|-ওলা বিড়াল, ভাঙা পুতুল এই সবের পর্যায়ে পড়ে, বকুল তাই শ্যামার ভাষায় বাবা বলিতে অজ্ঞান। ছেলেবেলা হইতে বকুলের স্বাস্থ্যটি বড়ো ভালো, চলাফেরা হাসি খেলা স্বাভাবিক নিযমে সবই তার সুন্দব, কত প্ৰাণ, কত ভঙ্গি। সকলে তাহাকে ভালোবাসে, তার সঙ্গে কথা বলিতে সকলেই উৎসুক, সে কিন্তু যাকে তাকে ধরা দেয না, নির্মমভাবে উপেক্ষা করিয়া চলে। খেলনা ও খাবাব দিয, তোষামোদের কথা বলিয়া তাহাকে জয় করা যায় না। মামা কত চেষ্টা করিয়াছে, পারে নাই। শ্যামাব তিন ছেলেই মামার ভক্ত, বকুল কিওঁ তাহার ধারে-কাপেও ঘেষে না। শ্যামার সঙ্গেও বকুলেব তেমন ভােব নাই, শ্যামাকে সে স্পষ্টই অবহেলা করে। বাড়িতে সে ভালোবাসে শুধু বাবাকে, শীতল যতক্ষণ বাডি থাকে পাযে পাযে ঘুরিযা বেড়ায়, শীতলেঙ্গ চুল তোলে, ঘামচি মাবে, মুখে বিড়ি দিয়া দেশলাই ধরাইয়া দেয়, আর অনর্গল কথা বলে। শীতল বাড়ি না থাকিলে ছাদে গিয়া তাহার গোসাঘরে পুতুল খেলে, মিস্ত্রিদের কাজ দ্যাখে। আর শ্যামাব ফরমাশ খাটে। শীতল না থাকিলে মেয়েটােব মুখের কথা যেন ফুরাইয়া যায। একদিন শ্যামা নতুন গডের পাযেস করিয়াছে সকলে পবিতোষ করিয়া খাইল, বকুল কিছুতে -iাইবে না, কেবলি বলিতে লাগিল, দাড়াও আসুক, বাবাকে দাও। শ্যামা বলিল, সে তো আসবে বাত্তিবে, ওই দ্যাখ বড়ো জামবাটিতে তাব জন্যে তুলে বেখেছি, এসে খাবে। তোরটা তুই খা। বকুল বলিল, বাবা পায়েস খেতে আসবে দুটাের সময। শ্যামা বলিল, কী করে জানালি তুই আসবে ? বকুল বলিল, আমি বললাম যে আসতে ? বাবা বললে দুটাের সময় ঠিক আসবে,--আমি বাবার সঙ্গে খাব। শ্যামা বলিল, দেখলে মামা মেয়ের আবদার ? বুড়ো টেকি মেয়ে বাবাকে পায়েস খাবার নেমস্তন্ন করেছেন, আপিস থেকে তিনি পায়েস খেতে বাড়ি আসবেন। ...খা খুকু, খেয়ে বাটি খালি করে দে।