পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in Gebr মানিক রচনাসমগ্ৰ বিধান খাইয়া স্কুলে গেল। মামাও সকাল সকাল খাইয়া, দেখি একটু খোঁজ করে, বলিয়া চলিয়া গেল। বাড়িতে রহিল শুধু শ্যামা আর তাহার দুই শিশুপুত্র, মণি ও ছােটােখোকা,--যার নাম ফণীন্দ্র রাখা ঠিক হইয়াছে। দুপুরবেলা প্রেসের একজন কর্মচারীর সঙ্গে শীতলের মনিব কমলবাবু আসিলেন। বাণীকে দিয়া পরিচয় পাঠাইয়া শ্যামার সঙ্গে দরকারি কয়েকটা কথা বলার ইচ্ছা জানাইলেন। তারপর নিজেই হাঁকিয়া শ্যামাকে শুনাইয়া বলিলেন তিনি বুড়ো মানুষ, শীতলকে ছেলের মতো মনে করিতেন, তার সঙ্গে কথা কহিতে শ্যামার কোনো লজা নাই। লাজা শ্যামা এমনিই কিরিত না, ঘোমটা টানিয়া সে বাহিরের ঘরে গেল। রাণী সঙ্গে গিয়াছিল, কমলবাবু বলিলেন, তোমার ঝিকে যেতে বলে মা। রাণী চলিয়া গেলে বলিলেন, শীতল কদিন বাড়ি আসেনি মা ? শ্যামা বলিল, বুধবার আপিসে গেলেন, তারপর আর ফেবেননি। ওইদিন একটাব সময় শীতল যে বাড়ি ফিরিয়া তাহাকে টাকা দিয়া গিয়াছিল। শ্যামা সে কথা গোপন করিল। একবারও আসেনি, দু-এক ঘণ্টার জনা ? କh] | কমলবাবুর গলাটি বড়ো মিষ্টি, ঘোমটাব ভিতর হইতে আড়াচোখে চাহিয়া শ্যামা দেখিল মুখেব ভাবও তাহার শান্ত, নিম্পূহ। শ্যামা সাহস পাইয়া বলিল, কোনো খবর না পেয়ে আমরা বড়ো ভাবনায পড়েছি, আপনি যদি কিছু জানেন— কমলবাবু বলিলেন, না বাছা, আমরা কিছুই জানিনে। জানলে তোমায শুধোতে আসব কেন পা মনে হয় আবে কিছু বুঝি তাহার বলিবাব নাই, এইবার বিদায লইবেন কিন্তু কমলবাবু লোক বড়ো পাকা, কলিকাতায় ব্যাবসা কবিয়া খান। কথা না বলিযা খানিকক্ষণ শ্যামাকে তিনি দাখেন, মনে যাদেব পাপ থাকে এমনিভাবে দেখিলে তারা বডো অস্বস্তি বোধ কবে, কাবু হইয়া আসে। তারপব তিনি একটা নিশ্বাস ফেলিযা অকস্মাৎ ভগবানের নামোচ্চারণ করেন, বলেন, এটি শীতলেব ছেলে বুঝি ? বেশ ছেলেটি, কী বল বীরেন ?—এসো তো বাবা আমার কাছে, এসো।--নাম বলে তো বাবা ? বলে ভয় কী ?--মণি? সোনামণি তুমি, না?--মণিকে এই সব বলেন আর আড় চোখে চোখে কমলবাবু শ্যামাল দিকে তাকান। শ্যামা কাবু হইয়া আসে। ভাবে, হাজার টাকার কথাটা স্বীকার কবিয়া কমলবাবুব পা জাডাইয়া ধরিবে নাকি ? কমলবাবু বলেন, বাবা কোথায় গেছে। মণি ? আপিস গেছে? বাবা খালি আপিস যায়, ভাবী দুষ্ট তো তোমার বাবা,---কাল বাড়ি আসেনি। বাবা ? আসেনি! বড়ো পাক্তি বাবাটা, এলে মেঝে দিয়ে। --বাবা তবে তোমার বাডি এসেছিল কবে? আসেনি ? একদিনও আসেনি ? দিদিকে নিয়ে বাবা পালিয়ে গেছে ? শ্যামা বলে, মেয়েকে নিয়ে বনগাঁয় বোনের বাড়ি যাবেন বলছিলেন, বোধ হয় তাই গেছেন। কমলবাবু বনগাঁয়ে রাখালের ঠিকানাটা লিখিয়া লইলেন, মণির সম্বন্ধে আর তাহার কোনোরূপ মোহ দেখা গেল না। এবার কড়া সুরেই কথা বলিলেন। বলিলেন, স্বামী তোমার লোক ভালো নয় মা, সব জেনে শুনে তুমি ভান করছ কিনা আমরা জানিনে, তোমার স্বামী চোর,-সংসারে মানুষকে বিশ্বাস করে বরাবর ঠিকেছি। তবু যে কেন তাকে বিশ্বাস করলাম!! আমারই বোকামি, ভাবলাম মাইনেতে কমিশনে মাসে দুশো আড়াইশো টাকা রোজগার করছে, সে কি আর সামান্য কি হাজার টাকার জন্যে