পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in Vo মানিক রচনাসমগ্ৰ রাত্রে ফিরাইয়া দিতে আসিয়াছিল সেদিন দুটি ঘণ্টা সময়ের মধ্যে তাদের যেন একটা অভূতপূর্ব ঘনিষ্ঠতা জন্মিয়া গিয়াছিল, দুই যুগ একল বাস কৰি, যা ও শুহাদের যাহা আসে নাই। স্বামীর জন্য সে রাত্রে বড়ো মমতা হইযাছিল “খ” ..." : , কিন্তু মামা তাহাকে বুঝাইযা দিয়াছিল, জরিমানার টাকা দেওয়াটা বডো বোকামির কাজ হাঁহবে, বিশেষত বাড়ি বঁধা না দিয়া যখন পুরা টাকাটা জোগাড় হইবে না-টীকা কই শ্যামার ? হাজার টাকার নম্বর দেওয়া নোটগুলি তো এখন বাহির করা চলিবে না। বাহির করা চলিলেও আরেক হাজার টাকা ?—কাজ নাই ও সব দুবুদ্ধি করিয়া। আঠারো মাস যাকে কয়েদ খাটিতে হইবে, সে আর দশমাস বেশি কাঁটাইতে পরিবে না জেলে! দশ মাসই বা কেন ? বছরে কমাস জেলা যে মুকুব হয়। তারপর, শেষের চার-ছমাস জেলে থাকিতে কয়েদির কী আব্ব কষ্ট হয় ? তখন নামেমাত্র কয়েদি, সকালে বিকালে একবার নাম ডাকে, বাস, তারপর কয়েদিরা যেখানে খুশি যায় যা খুশি করে, রাজার হালে থাকে। বাড়িতেও তো আসতে পারে। তবে, এক-আধা ঘণ্টার জন্যে ? না, তা পারে না-জেলের বাইরে যেতে-আসতে দেয়, দু দণ্ড দাঁড়িয়ে এর-ওর সঙ্গে কথা বলতে দেয়, তাই বলে নজর কি রাখে না একেবারে ? তাছাড়া কয়েদির পোশাক পরে কোথায যাবে?---- কেউ ধরে এনে দিলে তো শেষ পর্যন্ত দাঁড়াবে পালিয়ে যাচ্ছিল!—আবার দেবে ছমাস ঠেকে! জেলের কাণ্ডকারখানার কথা আর বলিসনে শ্যামা, মজার জায়গা জেলে,--শীতল যত কষ্ট পাবে ভাবছিস তা সে পাবে না, ওই প্রথম দিকে একটু যা মনের কষ্ট। উৎসাহের সঙ্গে গড়গড় করিষা মামা বলিযা যায়, অবাধ অকুণ্ঠ ! কত অভিজ্ঞতাই জীবনে মামা সংগ্ৰহ করিয়াছে! শ্যামা সজল চোখে বলিয়াছিল, এত খবরও তুমি জান মামা! তুমি না থাকলে কী যে কবিতাম আমি,--ভেবে ভেবে পাগল হয়ে যেতাম।--—বছরে কমাস কয়েদ মুকুব করে মামা ? ভালো হয়ে থাকলে বোধ হয়। শিগগির ছেড়ে দেয়—একদিন গিয়ে দেখা করে বলে আসব ভালো হযেই যেন থাকে। পাড়ায় ব্যাপারটা জানাজানি হইয়া গিয়াছে। পাডার যে সব বাডির মেয়েদেব সঙ্গে শ্যামাব জানাশোনা ছিল শ্যামার সঙ্গে তাহাদের ব্যবহারও গিয়াছে সঙ্গে সঙ্গে বদলাইয়া। কেহ সহানুভূতি দেখায়, নীরবে ও সববো ; কেহ কোনোরকম অনুভূতিই দেখায় না, বিস্ময়, সমবেদনা অবহেলা কিছুই নয়। পাড়ার নকুড়বাবুব পবিবারের সঙ্গে শ্যামার ঘনিষ্ঠতা ছিল বেশি, এখন ওদের বাড়ি গেলে ওবা বসিতে বলিতে ভুলিযা যায়, সংসারেব কাজের চেয়ে শ্যামার দিকে নজর একটু বেশি দিতে মনে থাকে না, কথা বলিতে বলিতে ওদের কেমন উদাস বৈরাগ্য আসে, কত যেন শ্ৰান্ত ওবা, চোয়াল ভাঙিয়া এখুনি হাই উঠিলে। শ্যামার বাড়িতে যারা বেড়াইতে আসিত তাদের মধ্যে তারাই শুধু আসা-যাওয়া সমানভাবে বজায় রাখিয়াছে, এমনকী বাড়াইয়া দিয়াছে, যারা আসিলে শ্যামার সম্মান নাই, না আসিলে নাই অপমান। বিধান এতকাল শঙ্করের সঙ্গে বাড়ির গাড়িতে স্কুলে গিয়াছে, একদিন দশটার সময় বই-খাতা লইয়া বাহির হইয়া গিয়া খানিক পরে সে আবার ফিরিয়া আসিল। শ্যামা জিজ্ঞাসা করিল, স্কুলে গেলি নে ? শঙ্করকে নিয়ে গাড়ি চলে গেছে মা। তোকে না নিয়েই চলে গেল? কেন রে খোকা, দেরি করে তো যাসনি তুই ? পরদিন আরও সকাল সকাল বিধান বাহির হইয়া গেল, আজও সে ফিরিয়া আসিল খানিক পরেই, মুখখানা শুকনো করিয়া। শ্যামা তখন বকুলকে ভাত দিতেছিল। সে বলিল, আজকেও গাড়ি চলে গেছে। নাকি খোকা ?