পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী که وا বিধান বলিল, ড্রাইভার আমাকে গাড়িতে উঠতে দিলে না মা, বললে, মাসিমা বাবণ করে দিযেছে---- এমন টনটনে অপমানজ্ঞান বিধানেব? থামেৰ আড়ালে সে লুকাইয়া দাঁড়াইযা থাকে, সে যেন অপবাধ কবিযা কার কাছে ম্যাব খাইয়া আসিয়াছে। শ্যামা বকুলকে ভাত দিয়া রান্নাঘবে পলাই যা যায়, অতবড়ো ছেলে তাহার অপমানিত হইযা ঘা খাইয়া আসিল, ওকে সে মুখ দেখাইবে কী করিয়া ? দুপুরবেলা শ্যামা বিষ্ণুপ্রিয়াব বাড়িতে গেল। দোতলায় বিষ্ণুপ্রিযার নিভৃত শব্যানকক্ষ, সিঁড়ি দিযা শ্যামা উপরে উঠিতে যাইতেছিল, রান্নাঘরের দাওয়া হইতে বিষ্ণুপ্রিয়ার ঝি বলিল, কোথা যােচ্ছ মা হনহন করে ?—যেওনি, গিন্নিমা ঘুমোচ্ছে,-- এমনিধারা সময় কারও বাড়ি কি আসতে আছে ? যাও মা একন, বিকেলে এসো। শ্যামা বলিল, দিদিব হাসি শুনলাম যে ঝি ? জেগেই আছেন। ঝি বলিল, হাসি শুনবেনি তো কী কান্না শুনবে মা ? ওপরে এখন যেতে মানা, যেওনি। শ্যামা অগত্যা বাড়ি ফিরিযা গেল। ভাবিল, পাঁচটােব সময় আব্ব একবার আসিয়া বলিয়া দেখিবে, উপায় কী, বিধানের তো স্কুলে না গেলে চলিবে না ? বাড়ি ফিরিতেই বিধান বলিল, কোথা গিযেছিলে মা ? ওই ওদেব বাড়ি । কাদের বাডি বিধান জিজ্ঞাসা কবিল না। ছেলেবেলা হইতে শ্যামা এই ছেলেটিকে অদ্ভুত বলিয়া জানে, বিহস্যময বলিয়া জানে, ছমাস বয়সে এই ছেলে তাহার উদাস নযনে দুর্বোধ্য স্বপ্ন দেখিত, ডাকিলে সাড়া মিলিত না, কথা কহি যা, খেলা দিযা না যাইত হাসানো, না চলিত ভোলানো। আর নিঠুব ? সময সময় শ্যামাব মনে হইত। ছেলে যেন পাষাণ,SumitaBot (আলাপ)বক্তমাংসে তৈবি বুক ওর নাই। তারপর ওব প্রকৃতির কত বিচিত্র দিক স্পষ্ট হইয়া উঠিয়া আবাব ওব মধ্যেই কোথায় লুকাইয়া গিয়াছে— একটিব পর একটি দুর্বোধ্যতা, রাশি রাশি মুখোশ পরিয়া সে যেন জন্মিয়ছিল একে একে খুলিয়া চলিয়াছে, ওব আসল পরিচয় আজও শ্যামা চিনিল না। কত সময় সে ভয় পাইয়া ভাবিয়াছে বাপের পাগলামিই কি ছেলের মধ্যে প্রবলতর হইযা দেখা দিতেছে, ও কি একদিন পাগল হইয়া যাইবে ? অতি কী ভাবে ও ? সমযসমর্য জননীর উন্মাদ ভালোবাসাকে কেমন করিয়? দুপায়ে মাড়াইয়া চলে অতটুকু ছেলে! বিধানকে মনে মনে শ্যামা ভয় কবে। বিষ্ণুপ্রিযাব বাডি যাওয়ার কথা ওকে সে বলিতে পাবিল না। বিধান পলিল, ওদের গাডিতে আমি আব্ব স্কুলে যাব না। মা, ককখনো কোনোদিন যাব না। ওবা যদি আদব কবে ডাকতে আসে ? ডাকতে এলে মেবে তাডিয়ে দেব। শুনিয়া শ্যামাবও মনে হইল। এই তো ঠিক, অত অপমান তাহারা সহিবে কেন ? যাদের মোটর নাই ছেলে কি তাদের স্কুলে যায় না? সহসা উদ্ধত আত্মসম্মান জ্ঞানে শ্যামাব হৃদয ভবিয়া গেল। না। শঙ্করের সঙ্গে গাড়িতে তাহার ছেলেকে স্কুলে যাইতে দেওয়ার জন্য বিষ্ণুপ্রিয়ার তোষামোদ সে করিবে না। পরদিন মামার সঙ্গে ছেলেকে সে স্কুলে পাঠাইয়া দিল। বলিল, এ মাসের কাঁটা দিন মোটে বাকি আছে, একটা দিন ট্রামে নগদ টিকিট কিনে ওকে স্কুলে দিয়ে এসো নিয়ে এসো মামা, একদিন তোমাব সঙেগ এলে গেলে তারপর ও নিজেই যাতাযাত করতে পারবে, মাস-কাবারে কিনে দেব একটা মাসিক টিকিট।