পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang laboOokS. in Գ 8 মানিক রচনাসমগ্র অপরাধী করিযাছে, কেহ বিশ্বাস করিবে না, কেহ সাহায্য দিবে না, সকলেই তাহাকে পরিহার করিয়া চলিবে। যদি প্রয়োজনও হয ছেলেমেয়েদের দুবেলার আহার সংগ্ৰহ করিবার সংগত উপায় খুজিযা পাইবে না, বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন সকলে যাহাকে এড়াইয়া চলিতে চায় নিজের পায়ে ভাব দিয়া দাঁড়াইবার চেষ্টা সে করিবে কীসের ভরসায়? বিধবা হইলেও সে বোধ হয় এতদূর নিরুপায হইত। না। দুবছর পরে শীতল হয়তো ফিরিয়া আসিবে, হযতো আসিবে না। আসিলেও শ্যামার দুঃখ সে কি লাঘব করিতে পরিবে? নিজের প্রেস বিক্ৰয় করিয়া কতকাল শীতল অলস অকৰ্মণ্য হইযা বাড়ি বসিয়াছিল, সে ইতিহাস শ্যামা ভোলে নাই। তবু, তখন শীতলেব বয়স কম ছিল, মন তাজা ছিল। এই বয়সে দুবছৰ জেল খাটিয়া আসিযা আর কি সে এত বড়ো সংসারের ভার গ্রহণ কবিতে পরিবে? নিজেই হয়তো সে ভাব হইয়া পাকিবে শ্যামার। এক আছে মামা। সেও আবার খাঁটি একটি রহস্য, ধরাছোয়া দেয় না। কখনও শ্যামার আশা হয। মামা বুঝি লাখাপতিই হইতে চলিয়াছে, কখনও ভয় হয় মামা সর্বনাশ কবিয়া ছাডিবে। সংসারে শ্যামা মানুষ দেখিয়াছে অনেক, এ রকম খাপছাড়া অসাধারণ মানুষ একজনকেও তো সে স্থায়ী কিছু করিতে দেখে নাই। সংসাবে সেটা যেন নিয়ম নয। সাধারণ মোটা-বুদ্ধি সাবধানি লোকগুলিই শেষ পর্যন্ত টিকিয়া থাকে, শীতলেব মতো যারা পাগলা, মামার মতো যারা খেযালি, হঠাৎ একদিন দেখা যায। তারাই ফাঁকিতে পড়িযাছে। জীবন তো জুয়াখেলা নয়। স্কুল খুলিবাব কযেকদিন পবে শঙ্কর দাৰ্জিলিং হইতে ফিবিষ আসিল। শ্যামার সাদৰ অভ্যর্থনা বোধ হয় তাহার ভালো লাগিত, একদিন সে দেখা করিতে আসিল শ্যামাব সঙ্গে। শ্যামা দেখিযা অবাক, পকেটে ভবিয়া! সে দাৰ্জিলিং-এর কযেক বকম তরকাবি লইয়া আসিযাছে। বিধান তখন দোকানো গিয়াছিল, হাতের কাজ ফেলিয়া বাখিয়া শ্যামা শঙ্কৱেব সঙ্গে আলাপ কবিল। বকুল নামিয়া আসিল নীচে, ম্যাব গা ঘোযিযা বসিয়া বড়ো বড়ো চোখ মেলিয়া সে সবিস্ময়ে শঙ্কবেব দাৰ্জিলিং বেডালোব গল্প শুনিল। শুধু বিধানকে নয়, শঙ্কর বকুলকেও ভালোবাসে। কেবল সে বড়ো লাজুক বলিয়া বিধানের কাছে যেমন বকুলের কাছে তেমনি ভালোবাসা কোথায় লুকাইবে ভাবিয়া পায় না। পকেটে ভবিষযা সে কি শ্যামার জন্য শুধু তরকারিই আনিয়াছে? মুখ লাল কবিযা বকুলের জিনিসও সে বাহির করিয়া দেয়। কে জানিত দাৰ্জিলিং গিযা বকুলের কথা সে মনে রাখিবে ? শ্যামা বড়ো খুশি হয়। সোনার ছেলে, মানিক ছেলে। কী মিষ্টি স্বভাব ? আমি কাটিয়া শ্যামা তাহাকে খাইতে দেয়, তারপর বঙিন স্ফটিকেব। মালা গলায় দিযা বকুল গলগল করিয়া কথা বলিতে আবম্ভ করিয়াছে দেখিযা হাসিমুণে কাজ করিতে যায়, পাঁচ মিনিট পরে দেখিতে পায় দুজনে দোতলায় গিয়াছে। রাণীকে শোনাইযা শ্যামা বলে, বড়ো ভালো ছেলে রাণী, একটু অহংকার নেই। তারপর দোতলায় দুমদাম করিয়া ওদের ছুটািছুটির শব্দ ওঠে, বকুলের অজস্র হাসি ঝরনার মতো নীচে ঝরিয়া পডে, এ ওর পিছনে ছুটিতে-ছুটিতে একবার তাহাবা একতলাটা পাক দিয়া যায়, দুরন্ত মেয়েটাব পাল্লায় পডিযা লাজুক শঙ্করও যেন দুরন্ত হইয়া উঠি কাছে। পরদিন বিধান স্কুলে চলিয়া গেলে শ্যামা বিষ্ণুপ্রিয়ার সঙ্গে দেখা কবিতে গেল। দাসী তখন স্নানের আগে বিষ্ণুপ্রিয়ার চুলে গন্ধ তেল দিতেছিল, চওড়া-পাড় কোমল শাড়িখানি লুটাইয়া বিষ্ণুপ্রিযা আনমনে বসিযছিল শ্বেতপাথরেব মেঝেতে, কে বলিবে সেও জননী। এত বয়সে ওর ঢং দেখিয়া মনে মনে শ্যামার হাসি আসে,-প্রথম কন্যার জন্মের পর ও আবার সন্ন্যাসিনী সাজিয়াছিল! আজি প্রতিদিন তিনটি দাসী মিলিয়া ওই স্থল দেহটাকে ঘষিস মাজিয়া ঝকঝকে করিবাব চেষ্টায় হয়রান হয়। গালে রংটং দেয নাকি বিষ্ণুপ্রিয়া ? বিষ্ণুপ্রিয়া বলিল, বসে।