পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in しアやう মানিক রচনাসমগ্ৰ বকুল বলে, বোর্ডিং কী জন্যে, আমাদের বাড়ি থাক না? শঙ্কর মুখ নিচু করি যা একটু হাসে। শামা তাকায় মন্দার দিকে। শঙ্করকে এখানে থাকার নিমন্ত্রণ জানায় কিন্তু সুপ্ৰভা! প্রথমে শঙ্কব রাজি হয় না, ভদ্রতার ফাকা ওজোর করে। কলিকাতার ছেলে সে, ও সব কায়দা তার দূরস্তু। শেষে সুপ্রভার হাসি ও মিষ্টি কথার কাছে পরাজয় মানিয়া সে আতিথ্য স্বীকার কবে। লেজার যে আবরণটি লইয়া সে এ বাড়িতে ঢুকিয়াছিল ক্ৰমে ক্ৰমে তাহা খসিয়া যায়, কানু ও কালুর সঙ্গে তাহার ভাব হয়, বিধানের পড়ার ঘরে খানিক হইচই করিয়া উঠানে তাহারা মার্বেল খেলে, তারপর স্কুলেব বেলা হইলে সকলে স্নান করিতে যায় পুকুরে। শ্যামা বারণ করিয়া বলে, সাঁতার জান না, তুমি পুকুরে যেও না। শঙ্কর। জল তুলে এনে দিক, তুমি ঘরে স্নান কর। শঙ্কর বলিয়া যায়, বেশি জল যাব না মাসিমা । তবু শ্যামার বড়ো ভয় করে। বিধান বকুল মণি এরা সাঁতার শিখিয়াছে, কালু ও কানু তো পাকা সাঁতারু, পুকুরের জল তোলপাড় করিয়া ওরা স্নান করিবে ; উৎসাহের মাথায় শঙ্করের কি খেয়াল থাকিবে সে সাতার জানে না ? বাড়ির একজন চাকরকে সে পুকুরে পাঠাইয়া দেয়। খানিক পরে হইচই করিতে করিতে সকলে ফিরিয়া আসে, শঙ্কর আসে বিধান ও চাকরিটার গায়ে ভর দিয়া এক পায়ে খোঁড়াইতে খোড়াইতে । শামুকে না কীসে শঙ্করের পা কাটিয়া দরদর করিয়া বক্ত পডিতেছে। বকুল দুবন্ত দুঃসাহসী মেয়ে, বকিলে, মারিলে, ব্যথা পাইলে সে কঁদে না কিন্তু বক্ত দেখিলে সে ভয় পায়, ধূলা-কাদা ধুইয়া শ্যামা যতক্ষণ শঙ্করের পা বাধিয়া দেয় সে হাউহাউ কবিয কঁদিতে থাকে । মন্দা ধমক দিযা বলে, তোব পা কেটেছে নাকি, তুই অত কাদছিস কী জন্যে ? কেঁদে মেয়ে একেবারে ভাসিয়ে দিলেন! শঙ্কর বলে, কেঁদো না বুকু, বেশি কাটেনি তো! আগে বিধান হয়তো শঙ্করের জন্য অনায়াসে সাতদিন স্কুল কামাই করিত, এখন পড়াশোনাব। চেয়ে বড়ো তাহার কাছে কিছু নাই, সে স্কুলে চলিয়া গেল। কানু ও কালু কোনো উপলক্ষে স্কুল কামাই করিতে পারিলে বঁচে, অতিথির তদবিরের জন্য বাড়িতে থাকিতে তারা রাজি ছিল, মন্দার জন্য পারিল না। স্কুলে গেল না। শুধু বকুল। সারা দুপুর এক মুহূর্তের জন্য সে শঙ্করের সঙ্গ ছাডিল না। এ যেন তার বাডিম্বর, শওকর যেন তারই অতিথি, সে ছাড়া আব্ব কে শঙ্করকে আপ্যায়িত করিবে ? ফণীকে ঘুম পাড়াইয়া তাহার অবিশ্রাম বকুনি শুনিতে শুনিতে শ্যামার চোেখও ঘুমে জড়াইয়া আসে,-- বকুলের মুখে যেন ঘুমপাড়ানি গান। বাড়ির কারও সঙ্গে ও মেয়েটার স্নেহের আদান-প্ৰদান নাই, কারও সোহাগ-মমতায় ও ধরা-ছোঁয়া দেয় না, অনুগ্রহের মতো করিয়া সুপ্রভার ভালোবাসাকে একটু যা গ্ৰহণ করে, শঙ্করের সঙ্গে এত ওর ভাব হইল কীসে, পরের ছেলে শওকর ? এক তার পাগল ছেলে বিধান, আর এক পাগলি মেযে বকুল,-মন ওদের বুঝিবার জো নাই। শ্যামা যে এত করে মেয়েটার জন্য, দু মিনিট ওর অদ্ভুত অনর্গল বাণী শুনিবার জন্য লুব্ধ হইয়া থাকে, কই শ্যামার সঙ্গে কথা তো বকুল বলে না ? কাছে টানিয়া আদর করিতে গেলে মেয়ে ছটফট করে, জননীর দুটি মেহব্যাকুল বাহু যেন ওকে দড়ি দিয়া বাঁধে। জগতে কে কবে এমন মেয়ে দেখিয়াছে ? শ্যামা একটা হাই তোলে। জিজ্ঞাসা করে, হঁ্যা শঙ্কর, আমাদের বাড়ির দিকে কখনও যাও-টাও বাবা ? হারাণ ডাক্তার ভাড়াটে এনে দিলেন, তার নামটাও জানিনে! শঙ্কর বলে, ভাড়াটে কই, কেউ আসেনি তো? সদর দরজায় তালাবন্ধ। শ্যামা হাসিল, তুমি জান না। শঙ্কর-এক মাসের ওপর ভাড়াটে এসেছে, পাঁচশ টাকা ভাড়া দিয়েছে,-ওদিকে তুমি যাওনি কখনও।